ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শিল্পায়ন ও প্রকৃত স্বাধীনতা -স্বদেশ রায়

প্রকাশিত: ০৪:০৪, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৫

শিল্পায়ন ও প্রকৃত স্বাধীনতা  -স্বদেশ রায়

বাংলাদেশে এ মুহূর্তে ৬৭.৫ ভাগ লোক বিদ্যুত ব্যবহার করছে। সরকারের বিদ্যুত উৎপাদনের সক্ষমতা আরও বেশি। এ ছাড়া দেশের মহেশখালীতে তৈরি হতে যাচ্ছে বিদ্যুত হাব। খুলনায় তৈরি হতে যাচ্ছে বেশ বড় একটি কয়লা বিদ্যুত কেন্দ্র। এর পাশাপাশি প্রাইভেট পাবলিক পার্টনারশিপেও স্থাপিত হচ্ছে ও হতে যাচ্ছে ছোট অনেক বিদ্যুত কেন্দ্র। এই বিপুল পরিমাণ বিদ্যুত উৎপাদনে সরকারকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অনেক ভর্তুকি দিতে হচ্ছে ও হবে। শুরুতে যখন শেখ হাসিনা এই বিদ্যুত উৎপাদনের জন্য এক ধরনের অল আউট প্রোগ্রাম হাতে নিয়েছিলেন, তখন দেশের তথাকথিত বিরোধী দল বিএনপি ও ছোট কিছু বামপন্থী দল ও বেশিরভাগ টিভি-টকাররা বলতে শুরু করেন, বিদ্যুতে এই বিপুল পরিমাণ ভর্তুকি দেবার ফলে সরকার এক পর্যায়ে দেউলিয়া হয়ে যাবে। এর সঙ্গে যোগ দেন কিছু অর্থনীতিবিদ। এই অর্থনীতিবিদরা দুই কারণে এই বিদ্যুত উৎপাদন নিয়ে বিরোধিতা করেছিলেন বা এখনও করছেন। এর ভেতর দেবপ্রিয় সেনারা বিরোধিতা করছেন, শেখ হাসিনাকে বিরোধিতা করতে হবে এ কারণে। কারণ তারা ১/১১-এর মতো সরকার চান দেশে। অন্যদিকে আনু মুহাম্মদরা বিরোধিতা করছেন ফার্মিং কালচার থেকে। কারণ, তারা শিক্ষিত হয়ে নগর জীবনে প্রবেশ করেছেন ঠিকই, নগরের সকল সুখ সুবিধা ভোগ করছেন, তবে তাদের মানসিকতা এখনও কৃষি সমাজে রয়ে গেছে। তারা বুঝতে পারছেন না শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে কৃষিসমাজ থেকে শিল্পসমাজে উন্নয়ন ঘটানোর কর্মসূচী হাতে নিয়েছেন। এখানেই কিন্তু বাংলাদেশে শেখ হাসিনার সঙ্গে অন্য সকল দলের নেতাদের পার্থক্য। এমনকি তাঁর দলের অনেক নেতারও। যেমন ছোট্ট একটি উদাহরণ, খালেদার কর্মসূচী ছিল ডাল-ভাত (যে কর্মসূচী ৮৫ বছর আগে শেরে বাংলা দিয়েছিলেন) আর এই ডাল-ভাতের বিপরীতে শেখ হাসিনার কর্মসূচী ঘরে ঘরে বিদ্যুত ও ডিজিটাল বাংলাদেশ। অর্থাৎ একজন এখনও ট্রাডিশনাল কৃষিনির্ভর অর্থনীতিতে পড়ে আছেন, আরেকজন বাংলাদেশকে শিল্প ও আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর বাংলাদেশ হিসেবে বিনির্মাণ করছেন। বাংলাদেশের লোকসংখ্যা ১৬ কোটি, আয়তন মাত্র ৫৬ হাজার বর্গমাইল। গড় আয়ু বেড়ে ৭১ হয়েছে। এ আয়ু আরও বাড়বে। এ কারণে যতই পরিকল্পিত জন্ম নিয়ন্ত্রণ করা হোক না কেন, লোকসংখ্যা বাড়তেই থাকবে। তাই কোন মতে কৃষিনির্ভর বাংলাদেশে পড়ে থাকা আর উচিত নয়। বরং দ্রুত শিল্পনির্ভর বাংলাদেশ তৈরি করতে হবে। এমনকি কৃষিকেও করতে হবে শতভাগ প্রযুক্তিনির্ভর। শেখ হাসিনা বাংলাদেশের সেই নেতা যিনি শুধু এটা উপলব্ধি করেননি, তিনি সেই কর্মসূচী হাতে নিয়েছেন ও এগিয়েও গিয়েছেন। শিল্পায়নের প্রথম শর্তের একটি অর্থাৎ বিদ্যুত উৎপাদনে দেশকে এগিয়ে নিয়েছেন। অন্যদিকে শিল্পায়নের অন্য গুরুত্বপূর্ণ জ্বালানি গ্যাসের চাহিদা মেটানোর ক্ষেত্রে দেশ ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে। কুয়েত থেকে তরল গ্যাস আমদানির চুক্তি আছে। এখন দেশের জন্য প্রয়োজন দ্রুত সামুদ্রিক বন্দরে গ্যাস টার্মিনাল তৈরি। অন্যদিকে দ্রুত একের পর এক সমুদ্রের গ্যাস ব্লকগুলোতে যোগ্য কোম্পানি নিয়োগ দেয়া। যাতে দ্রুত সমুদ্রের গ্যাস উত্তোলন সম্ভব হয়। ঠিক তেমনি জ্বালানি- বিশেষ করে বিদ্যুত উৎপাদনের জন্য মহেশখালীসহ আরও কয়েকটি টার্মিনাল প্রয়োজন, যেখানে সহজে আমদানিকৃত কয়লা নামানো যাবে। ভবিষ্যতের এই প্রয়োজনীয় কয়লা যাতে পাওয়া যায় এ জন্য এখনই ইন্দোনেশিয়াসহ যে সব দেশে প্রচুর পরিমাণে কয়লা আছে তাদের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদী চুক্তিতে যেতে হবে। পাশাপাশি দেশের ফুলবাড়িয়ার কয়লা উত্তোলনের কাজ শুরু করতে হবে। অন্যদিকে বড়পুকুরিয়ার কয়লা উত্তোলন আরও দ্রুত করতে হবে। ফুলবাড়িয়ার কয়লা উত্তোলন শুরুর কাজে সরকার বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এক শ্রেণীর তথাকথিত পরিবেশবাদীর দ্বারা, এই পরিবেশবাদীরা খুলনার রামপালের বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণে বাধা দিচ্ছেন। এই যারা ফুলবাড়িয়া কয়লা উত্তোলনে ও রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণে বাধা দিচ্ছেন- এদের মূল সমস্যা কিন্তু তাদের মানসিকতা, তাদের শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা নয়। কারণ মানসিকভাবে তারা এখনও ফার্মিং কালচারে পড়ে আছেন। তারা শিল্পায়ন বা ক্যাপিটালিজমের বাস্তবতাকে উপলব্ধি করতে পারছেন না শুধুমাত্র আপাদমস্তক ফার্মিং কালচার দিয়ে আবৃত বলে। দুইশ’ বছরের ক্যাপিটালিজমের অর্থনৈতিক ইতিহাসের দিকে চোখ দিলে দেখা যায়, মানব সভ্যতায় দুইটি বিষয় পাশাপাশি যোগ হয়েছে। একটি সুখ একটি বেদনা। দুইশ’ বছরের শিল্পায়ন মানুষকে উন্নত সুখের জীবনে নিয়ে গেছে। মানুষের দৈনন্দিন জীবনে গত দুইশ’ বছরে যত ধরনের সুখের উপযোগিতা যোগ হয়েছে- মানব সভ্যতার ইতিহাসে এর আগে কখনও তা ঘটেনি। এর পাশাপাশি প্রকৃতিকে, মানুষকে ক্যাপিটালিজম যে কিছু দুঃখ, কিছু শাস্তি দেয়নি তা নয়। যেমন এখান থেকে বিশ বছর আগে যে দেশটি শিল্পায়িত হয়নি তখন ওই দেশের নদী ভ্রমণে গিয়ে দেখা গেছে কি স্বচ্ছ টলমলে পানি। কিন্তু ওই নদীর পাশে পাশে তখন ছোট ছোট কাঠের ঘরে বাস করত দরিদ্রতম মানুষ। এখন ওই দেশের নদী ভ্রমণে গেলে নদীতে পলিথিনের প্যাক ভাসতে দেখা যায়। কিন্তু দুই কূলজুড়ে বিশাল বিশাল মাল্টিস্টোরেজ বিল্ডিং, সেখানে যেমন রয়েছে ব্যবসা কেন্দ্র তেমনি বাসস্থান। মানুষের জীবনযাত্রার মান সেখানে সর্বোচ্চ পর্যায়ে। আবার যাদের শিল্পায়নের বয়স তিরিশ বছর হয়ে গেছে, সেখানে গেলে দেখা যাচ্ছে ওই নদীগুলোকেও আবার পরিশুদ্ধ করে ফেলেছে। আবার নতুন করে শিল্পায়নের জন্য কিছু নদীকে, কিছু এলাকাকে ব্যথা নিতে হচ্ছে। বাস্তবে মার্ক টোয়েনের বাক্য থেকে ধার নিয়ে শিল্পায়নের উদাহরণ হিসেবে বলতে হয়, শিল্পায়নকে অনেকটা শকুনের মতো মনে হয়, দেখতে অসুন্দর, স্বার্থপর, এমনকি কখনও কখনও প্রফেশনাল কিলার মনে হয়, কিন্তু বাস্তবে তা নয়। বাস্তবে শিল্পায়ন অসুন্দর নয়, স্বার্থপরও নয় এমনকি সভ্যতা হত্যাকারীও নয়। শিল্পায়ন আধুনিক জীবন দিচ্ছে, দারিদ্র্যের মতো অসুন্দর ও নোংরা জীবনকে পরিবর্তন করে দিচ্ছে। কিন্তু আমাদের যাদের ফার্মিং বা কৃষি মানসিকতা, যারা এখনও কৃষি কালচারে পড়ে আছেন, তারা শিল্পায়নের বা ব্যবসার ভেতর কেবল স্বার্থপরতা এবং একটি ভয়ঙ্কর রূপ দেখতে পান। তাই দেখা যায়, যে সমাজের শিক্ষিত শ্রেণী যতবেশি কৃষি মানসিকতায় আবদ্ধ আছে সেখানে শিল্পায়নে নানান বাধা আসে। এক শ্রেণীর শিক্ষিত মানুষ ও এক শ্রেণীর তথাকথিত রাজনৈতিক নেতা তারা সাধারণ মানুষের ট্রাডিশনাল সেন্টিমেন্টকে উসকে দেন। সাধারণ মানুষ যেখানে তাদের নিজের স্বার্থে, কর্মসংস্থানের স্বার্থে, উন্নত জীবনের স্বার্থে শিল্পায়নের পক্ষে আসবে তার বদলে তারা শিল্পায়নের বিরোধিতায় নেমে পড়ে। কখনও নেমে পড়ে জঙ্গী মনোভাব নিয়ে। যার সব থেকে বড় উদাহরণ আমাদের পাশেই আছে পশ্চিমবঙ্গ। ভারত যখন স্বাধীন হয় তখন ভারতের এই রাজ্যটি শিল্পায়নের দিক থেকে তাদের তৎকালীন ২২টি রাজ্যের ভেতর দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল। অন্যদিকে ৩৩ বছর বাম শাসনে ওই রাজ্যে কৃষি মানসিকতা এত উসকে দেয়া হয় যে, শিল্পপতিরা ওই রাজ্য ছাড়তে বাধ্য হন। বামপন্থীরা যখন ভুল বুঝতে পারেন, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে যখন আবার নতুন করে শিল্পায়নের পথে যেতে শুরু করেন তখন শুধু বাম সরকারকে বিরোধিতার জন্য এক শ্রেণীর মিডিয়া ও অনেকটা দায়িত্বজ্ঞানহীন নেতা মমতা ব্যানার্জী সর্বোচ্চভাবে উসকে দেন কৃষি মানসিকতা। যার ইতিহাস হয়ে আছে নন্দীগ্রাম, হলদিয়া প্রভৃতি। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের ব্যর্থতা হলো তিনি সেদিন দৃঢ়তা দেখাতে পারেননি। নরসীমা রাও এর সঙ্গে পরিবর্তিত ভারতের অন্যতম রূপকার মনমোহন সিং শিল্পায়নের প্রয়োজনীয়তা ও শিল্পায়নের পুরস্কার ও বেদনা দুটোই বোঝেন। তিনি সেদিন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে নন্দীগ্রামে শক্তি প্রয়োগ করেও শিল্প প্রতিষ্ঠার কথা বলেছিলেন। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সেটা পারেননি। যার ফলে তিনি শুধু ক্ষমতা হারাননি, পশ্চিমবঙ্গ আজ শিল্পে ভারতের ২৯টি রাজ্যের মধ্যে ২৪তম স্থানে। বাংলাদেশেও শেখ হাসিনার এই শিল্পায়নের বড় বাধা কিন্তু এক শ্রেণীর শিক্ষিত লোকের কৃষি মানসিকতা, পশ্চিম বঙ্গে যেমন বাম সরকারবিরোধী এক শ্রেণীর মিডিয়া ছিল, এখানেও শেখ হাসিনাবিরোধী এক শ্রেণীর মিডিয়া। এই দুই মিলে সাধারণ মানুষের ট্রাডিশনাল কৃষি মানসিকতাকে উসকে দিচ্ছে বার বার। এরা বার বার বাধা দিচ্ছে রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্র তৈরিতে। অথচ রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্র তৈরি বাংলাদেশের শিল্পায়িত অর্থনীতির অন্যতম একটি স্তম্ভ হবে। কারণ, এই বিদ্যুত কেন্দ্র খুলনাকে আবার তৈরি করবে শিল্প নগরীতে। অন্যদিকে দেশের দ্বিতীয় সামুদ্রিক বন্দর মংলা হবে সচল। বর্তমান সরকার অবশ্য বাধা কাটিয়ে এই বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের কাজ এগিয়ে নিচ্ছেন। দুঃখের বিষয় হলো, আদালতও এখানে হস্তক্ষেপ করেছিল। তারও মূল কারণ কিন্তু এক শ্রেণীর বিচারপতির কৃষি মানসিকতা। তারা ক্যাপিটালিজমের সকল সুখ ভোগ করলেও মননকে শিল্পায়িত পৃথিবীতে এখনও নিয়ে যেতে পারেনি। সম্প্রতি আবার দেখা যাচ্ছে শেখ হাসিনাবিরোধী কয়েকটি পত্রিকা সিলেটে স্পেশাল ইকোনমি জোন করার বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে। কিছু লোক সাধারণ দরিদ্র অশিক্ষিত মানুষের ট্রাডিশনাল কৃষি মানসিকতাকে কাজে লাগিয়ে স্পেশাল অর্থনৈতিক জোন সৃষ্টির বিরোধিতায় নামিয়েছে। আর ওই হাসিনাবিরোধী পত্রিকাগুলো সেটাকে খুব ফলাও করে প্রচার করছে। উদ্দেশ্য হলদিয়া বা নন্দীগ্রাম সৃষ্টি। যেমন করেছিল পশ্চিমবঙ্গের কিছু বাম সরকারবিরোধী পত্রিকা। শেখ হাসিনাবিরোধী মানসিকতা, কৃষি মানসিকতা সব মিলে এর আগে ভ-ুল করে দেয়া হয়েছে মুন্সীগঞ্জে নতুন এয়ারপোর্ট নির্মাণ। অথচ দেশে যেভাবে বিদ্যুত উৎপাদন হচ্ছে, সক্ষমতা বাড়ছে বিদ্যুত উৎপাদনের, পাশাপাশি কয়লা ও তরল গ্যাস আমদানির অবকাঠামো তৈরি হচ্ছে, গ্যাস উত্তোলনের কাজ এগিয়ে চলছে সমুদ্রে- এসব কিছু নিয়ে আগামী বিশ বছরের পরের বাংলাদেশের একটি ছবি কি আঁকা যায় না? আর সেই বাংলাদেশ কি এই ছোট্ট একটি এয়ারপোর্ট দিয়ে চলবে? তার রফতানি আমদানি, পৃথিবীর নানান প্রান্তে যাওয়া ও নানান প্রান্ত থেকে মানুষ আসার কতটুকু অংশ ধারণ করতে পারে এই ছোট্ট এয়ারপোর্টটি? অথচ আগামী বিশ বছর পরে বাংলাদেশকে যে এয়ারপোর্ট ধারণ করতে পারত, ওই এয়ারপোর্ট নির্মাণের কাজ পিছিয়ে গেছে কিন্তু মিডিয়ার একশ্রেণীর কৃষি মানসিকতা ও তথাকথিত এক শ্রেণীর বুদ্ধিজীবীর কৃষি মানসিকতার ফলে। আর এর সঙ্গে রয়েছে হাসিনা বিরোধিতা। আগামী বিশ বছর সামনের যে বাংলাদেশ- ওই বাংলাদেশে জঙ্গী ও খালেদা বা তার বিএনপি একটি অতীত ইতিহাসের ঘটনা মাত্র। তাই এগুলো নিয়ে এখন দেশের মানুষ ও শেখ হাসিনার সময় নষ্ট করার সময় নেই। নতুন প্রজন্ম, শেখ হাসিনা ও আগামী দিনের নতুন নেতৃত্বের জন্য যারা প্রস্তুত হচ্ছেন, সবাইকে এখন একটি শিল্পায়িত বাংলাদেশকে ভাবতে হবে। তা না হলে বিপুল জনগোষ্ঠীর এ দেশ আফ্রিকার কোন দরিদ্র দেশের মতো হয়ে যাবে। শিল্পায়নের পথে অনেক ক্ষত হবে, যেমন কখনও কখনও অনেক শিল্প রুগ্ন হয়ে পড়বে, অনেক উন্নয়ন কর্মকা-ের ফলে অনেক দুর্গন্ধের সৃষ্টি হবে। কিন্তু দেশের নেতৃত্বকে বা দেশের মানুষকে বুঝতে হবে, প্রকৃতির মতো শিল্পায়নেরও শকুন আছে, প্রকৃতির যেমন ময়লা পরিষ্কারে দায়িত্ব কাক, শকুন প্রভৃতি নেয়, শিল্পায়নের এই ক্ষত এই ময়লার জন্য স্বাভাবিক নিয়মেই ভালচার ইনভেস্টার তৈরি হবে। একবার, দুইবার, এমনকি চার বারও স্টক মার্কেট মরে যেতে পারে, ভালচার ইনভেস্টারও আবার ওই মৃতদেহ খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে তা পরিষ্কার করে দেবে। এখন বাস্তবতা হলো, শেখ হাসিনা যে শিল্পনির্ভর বাংলাদেশ গড়ার কাজে হাত দিয়েছেন, তার থেকে তাঁকে বিন্দুমাত্র সরে আসার কোন সুযোগ নেই। ভবিষ্যত বড়ই অস্বচ্ছ তারপরেও বলা যায়, শেখ মুজিবুর রহমান যেমন বাংলাদেশ দিয়েছেন, শেখ হাসিনাও তেমনি শিল্পনির্ভর বাংলাদেশ দিতে যাচ্ছেন যা স্বাধীনতার চেয়ে খুব কম নয়। বরং আরেক নতুন স্বাধীনতা। অর্থনৈতিক স্বাধীনতা। আর ভিক্ষুকের জাতি নয়। বঙ্গবন্ধু নিজেই বলেছিলেন, ভিক্ষুকের জাতির কোন স্বাধীনতা থাকে না। তাই জাতিকে প্রকৃত স্বাধীনতা দেয়ার পথেই এগিয়ে চলেছেন শেখ হাসিনা। [email protected]
×