অটিজম শিশুদের মানবসম্পদে পরিণত করার আহ্বান

সংসদ রিপোর্টার ॥ অটিজম কোন রোগ নয়। এতে স্বাভাবিক হাঁটাচলা, কথাবার্তা, আচরণ, বুদ্ধিমত্তা প্রকাশে সমস্যার সৃষ্টি হয়। তবে তাদের মেধার কোন সঙ্কট নেই। এসব শিশুদের সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করে মানব সম্পদে পরিণত করার আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় অটিজম ও স্নায়ু বিকাশজনিত সমস্যা বিষয়ক উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারপার্সন এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক বিশেষজ্ঞ পরামর্শক প্যানেলের সদস্য ও প্রধানমন্ত্রীর কন্যা সায়মা ওয়াজেদ হোসেন পুতুল। মঙ্গলবার জাতীয় সংসদ ভবনের শপথকক্ষে স্নায়ু বিকাশজনিত সমস্যা বিষয়ক কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে তিনি এ আহ্বান জানান। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির উদ্যোগে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ সচিবালয় এ কর্মশালার আয়োজন করে। এ সময় সভাপতির বক্তব্যে জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরীন শারমীন চৌধুরী প্রতিবন্ধীদের প্রতি সহযোগিতা ও সহমর্মিতা প্রকাশে আরও সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, প্রতিবন্ধীরা আমাদের সমাজের অংশ। প্রত্যেকেরই প্রতিবন্ধীদের প্রতি সামাজিক দায়বদ্ধতা রয়েছে। সে দায়িত্ব পালনে সংসদ সদস্যসহ সকলকে আরও সচেষ্ট হতে হবে। প্রতিবন্ধীদের বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টিতে এই কর্মশালাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা প্রকাশ করে স্পীকার বলেন, এই কর্মশালার মাধ্যমে সংসদ সদস্যরা বিষয়টি আরও গভীরভাবে জানার সুযোগ পাবেন। বাংলাদেশে এই বিষয়ে পর্যাপ্ত আইন রয়েছে। সেসব আইনের আরও কার্যকর পরিবর্তন রয়েছে কিনা সে বিষয়েও ধারণা বের হয়ে আসবে। জনপ্রতিনিধিরা জনগণের খুব কাছাকাছি অবস্থান করেন। তাই এই কর্মশালা হতে লব্ধ জ্ঞান তারা ভবিষ্যতে জনগণের কাছে সহজেই পৌঁছে দিতে পারবেন। তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে এদেশে প্রতিবন্ধিতা বিষয়ে ব্যাপক জনসচেনতা সৃষ্টি হয়েছে। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। সায়মা ওয়াজেদ হোসেন মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করতে গিয়ে বলেন, নিউরো ডেভেলপমেন্ট ডিজঅর্ডার হচ্ছে একটি নতুন নামকরণ যার একটি রূপ হচ্ছে অটিজম। মস্তিষ্কের স্বাভাবিক বৃদ্ধিতে কোন সমস্যা হলে প্রতিবন্ধিতা সৃষ্টি হয়। তিনি আরও বলেন, এটি কোন রোগ নয়। তবে এতে সাধারণ জীবন-যাপন যেমন স্বাভাবিক হাঁটাচলা, কথাবার্তা, আচরণ, বুদ্ধিমত্তা প্রভৃতিতে সমস্যার সৃষ্টি হয়। প্রতিবন্ধিতা সমস্যা দূরীকরণে যথাসম্ভব কম বয়স থেকেই তার যতœ নেয়া প্রয়োজন। কেননা একটি শিশুর সাতবছর বয়স পর্যন্ত মস্তিষ্কের বৃদ্ধি ঘটে থাকে। এ ধরনের শিশুদের কাউন্সিলিং, থেরাপি ও সময়মতো প্রয়োজনীয় ওষুধ দেয়া জরুরী। এ বিষয়ে বাবা-মাকে সচেতন থাকতে হবে। তিনি প্রতিবন্ধী শিশুদের সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করে মানবসম্পদে পরিণত করতে সংসদ সদস্যসহ সকলের প্রতি আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানে ডেপুটি স্পীকার মোঃ ফজলে রাব্বী মিয়া সমাপনী বক্তব্য দেন। এছাড়া সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি মোঃ মোজাম্মেল হোসেন বক্তব্য রাখেন। কর্মশালায় বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ, চীফ হুইপ আ.স.ম ফিরোজসহ হুইপবৃন্দ, সংসদ সদস্যরা অংশ নেন। জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব মোঃ আশরাফুল মকবুল স্বাগত বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও সূচনা ফাউন্ডেশনের ভাইস চেয়ারম্যান ডাঃ প্রাণ গোপাল দত্ত, নিউরো ডেভেলপমেন্ট ডিজএ্যাবিলিটি প্রোটেকশন ট্রাস্ট অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ডাঃ মোঃ গোলাম রাব্বানী আলোচনায় অংশ নেন।