ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

এসডিজি বাস্তবায়নে স্থানীয় সরকার শক্তিশালী করার তাগিদ

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ২২ ডিসেম্বর ২০১৫

এসডিজি বাস্তবায়নে স্থানীয় সরকার শক্তিশালী করার তাগিদ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়নে শক্তিশালী স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার তাগিদ দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, ২০০০ সালে জাতিসংঘ প্রণীত সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এমডিজি) মেয়াদ শেষ হচ্ছে চলতি মাসে। জানুয়ারি থেকেই শুরু হবে আরও বৃহত পরিসরে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) কর্মপরিকল্পনা, যার মেয়াদ ২০৩০ সাল পর্যন্ত। সোমবার রাজধানীর ব্র্যাক ইন সেন্টারে ‘এসডিজির স্থানীয়করণ’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় অংশ নিয়ে বিশিষ্টজনেরা এ তাগিদ দেন। ব্র্যাক ও হাঙ্গার প্রজেক্ট আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা আকবর আলি খানের সভাপতিত্বে গোলটেবিল আলোচনায় অংশ নেন হাঙ্গার প্রজেক্টের আবাসিক পরিচালক বদিউল আলম মজুমদার, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ ও ইউএনডিপির আবাসিক প্রতিনিধি রবার্ট ওয়াটকিনস। কয়েকজন স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধি এবং বেসরকারী সংস্থার কর্মকর্তাও তাদের মতামত তুলে ধরেন। ড. আকবর আলি খান বলেন, এসডিজির পরিকল্পনাগুলো সফলভাবে বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আগে স্থানীয় সরকারগুলোকে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রভাব থেকে বেরিয়ে সঠিক বৈশিষ্ট্য ধারণ করতে হবে। তিনি বলেন, এমডিজির বাস্তবায়ন সম্পর্কে যা শোনা যাচ্ছে তার বিপরীতটাও সত্য। আমরা অনেক ক্ষেত্রে উন্নয়ন করতে পেরেছি সত্য। কিন্তু এর চেয়ে বেশি কিছু এখনও বাকি রয়ে গেছে। এমডিজির উন্নত রূপ এসডিজি বাস্তবায়ন কর্মপরিকল্পনায় স্থানীয় সরকারের অংশগ্রহণের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরার পাশাপাশি কিছু বিপত্তির কথাও উল্লেখ করেন ড. আকবর আলি খান। তিনি বলেন, বাস্তবে আমাদের দেশে কোন স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা নেই। কারণ স্থানীয় সরকার কখনও কেন্দ্রীয় সরকারের অংশ হতে পারে না। কেদ্রীয় সরকারের প্রভাবাধীন হতে পারে না। কিন্তু বাস্তবে তো আমরা তাই দেখতে পাচ্ছি। উপজেলা পরিষদ এখনও এমপিদের পরামর্শ চলে। ইউপিগুলো কেন্দ্রীয় সরকারের বেতনে চলে, তাদের টুকিটাকি কাজ বাস্তবায়নই তাদের অন্যতম ব্যস্ততা। সরকারের প্রভাব বলয় থেকে বেরুতে না পারলে স্থানীয় সরকার কাজ করতে পারবে না। বদিউল আলম মজুমদার বলেন, সুশীল সমাজ, উন্নয়ন সহযোগী ও স্থানীয় সরকারের সমন্বয়ে সরকার এই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার বাস্তবায়ন ঘটাবে। তিনি বলেন, এমডিজি ছিল উন্নয়নশীল ও স্বপ্লোন্নত দেশগুলোর জন্য পরিকল্পনা। আর এসডিজির বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এই পরিকল্পনায় কেউ বাদ পড়েনি। উন্নত, উন্নয়নশীল, স্বপ্লোন্নতসহ পৃথিবীর সব দেশের জন্য উপযোগী করে এই পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, আগের আট দফার পরিবর্তে এখন এসডিজিতে ১৭টি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে, যার আলোকে উন্নয়ন কাজ হবে। এর মধ্যে ১ থেকে ৭ নম্বর সাধারণ মানুষের জন্য, ৮ থেকে ১১ নম্বর অর্থনীতি বিষয়ক, ১২ থেকে ১৫ নম্বর পৃথিবী ও পরিবেশ বিষয়ক, ১৬ নম্বরে রয়েছে সমাজ বিষয়ক পরিকল্পনা এবং সর্বশেষ ১৭ নম্বরে রয়েছে অংশীদারিত্ব বিষয়ক পরিকল্পনা। এসব দফার অধীনে আছে ১৬৯টি ধারা। এসডিজিতে দেশে দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা, সবার জন্য ন্যায়বিচার, স্বাস্থ্যসেবার বিষয়ে বিশদ পরিকল্পনা করা হয়েছে, যাতে বিশ্বের সব দেশ ও রাষ্ট্রপ্রধান একমতে পৌঁছেছেন। ইউএনডিপির আবাসিক প্রতিনিধি রবার্ট ওয়াটকিনস বলেন, এসডিজির পরিকল্পনাগুলো সত্যিই জটিল ও বিশাল। তবে কঠোর পরিশ্রম করতে পারলে এর বাস্তবায়ন সম্ভব। এজন্য সবার আগে প্রয়োজন স্থানীয় সরকার ও কেন্দ্রের সমন্বয়। কিছুদিন আগে কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে এক কর্মশালায় আমরা বিষয়গুলো বলেছি। সিভিল সোসাইটির কাজ করার ক্ষেত্রে এটা একটি বড় সুযোগ। তারা ওয়াচডগের ভূমিকার পালন করবে। তাদের অংশীদারিত্ব মনিটরিংকে আরও জোরদার করবে। ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, এমডিজির কিছু পরিকল্পনা এখনও বাস্তবায়িত হয়নি। এসডিজি নিয়ে কথা বলার আগে অবশ্যই সেই বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। আবার সব কিছু স্থানীয় সরকারের ওপর চাপিয়ে দিয়ে বসে থাকলে চলবে না। কেন্দ্রীয় সরকারেরও বড় দায়িত্ব রয়েছে এতে। এমপিদের প্রভাব সর্বত্র। তারা সব জায়গায় ভাগ বসায়। তাদের জাতীয় সংসদে ফিরিয়ে আনতে হবে। অংশীদারিত্বমূলক উন্নয়নের জন্য স্থানীয় সরকারকে আরও শক্তিশালী করা প্রয়োজন।
×