ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

রাজধানীতে একটি পত্রিকার এমডির বাসা থেকে আটক করা হয়

আঠারো নাশকতা মামলার আসামি জামায়াত নেতা মেজবাহ গ্রেফতার

প্রকাশিত: ০৫:১১, ২২ ডিসেম্বর ২০১৫

আঠারো নাশকতা মামলার আসামি জামায়াত নেতা মেজবাহ গ্রেফতার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দৈনিক নয়া দিগন্ত পত্রিকার ব্যবস্থাপনা পরিচালক শিব্বির মাহমুদের ধানম-ির বাসা থেকে ১৮ মামলার ফেরারী আসামি জামায়াতের শীর্ষ নেতা মেজবাহ উদ্দিন ভূঁইয়া (৫২) গ্রেফতার হয়েছে। গ্রেফতারকৃত জামায়াত নেতার বিরুদ্ধে নোয়াখালীর সুধারাম থানায়ই যানবাহন ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, পেট্রোলবোমা মেরে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা, পুলিশের ওপর আক্রমণসহ বহু ধরনের নাশকতার ১৮টি মামলা রয়েছে। প্রতিটি মামলায়ই তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে নোয়াখালী জেলা আদালত। গ্রেফতার এড়াতে ওই জামায়াত নেতাকে ওই বাড়িতে আশ্রয় দিয়েছিলেন পত্রিকাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও জামায়াত নেতা শিব্বির মাহমুদ। ঢাকায় আত্মগোপনে থেকেই বড় ধরনের কোন নাশকতার পরিকল্পনা করছিলেন কিনা, সে বিষয়ে গভীর অনুসন্ধান চলছে। সেইসঙ্গে চলছে কড়া জিজ্ঞাসাবাদের প্রস্তুতি। পাশাপাশি ফেরারী আসামিকে আশ্রয় দেয়ার কারণ জানারও চেষ্টা করে যাচ্ছে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। রবিবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে ধানম-ির ১৩ নম্বর সড়কের ১৯ নম্বর দৈনিক নয়া দিগন্ত পত্রিকার ব্যবস্থাপনা পরিচালক শিব্বির মাহমুদের সাততলা বাড়িতে অভিযানে যায় পুলিশ। অভিযান চালানোর আগেই বাধার মুখে পড়ে পুলিশ। বাড়ির লোকজনের তরফ থেকে বিনা কারণে পুলিশ হয়রানি করার উদ্দেশ্যেই অভিযান চালানোর উদ্যোগ নিয়েছে বলে অভিযোগ তুলে। কিন্তু পুলিশের দাবি, সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতেই ওই বাড়িতে অভিযানে এসেছে পুলিশ। এসব বিষয় নিয়ে পুলিশের সঙ্গে বাড়ির লোকজনের দীর্ঘ বাগ্বিত-া হয়। শেষ পর্যন্ত নাছোড়বান্দা পুলিশ কর্মকর্তারা বাড়িতে অভিযান চালাতে না দিলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা দেন। অনেক বাধা বিপত্তি পেরিয়ে শেষ পর্যন্ত অনেকটা চাপের মুখেও পুলিশ অভিযানে নামে। পুরো বাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়। কিন্তু টার্গেটকৃত আসামিকে পাওয়া যায় না। পুলিশ বাড়ির প্রতিটি তলায় প্রতিটি কক্ষে অভিযান চালাতে বাধ্য হয়। অবশেষে বাড়িটির ছাদের দরজার তালা খুলে অভিযান চালানো হয়। আর তার পরই বেরিয়ে আসে থলের বিড়াল। চিলেকোঠার একটি কক্ষ থেকে আত্মগোপনে থাকা জামায়াত নেতা মেজবাহ উদ্দিন ভুঁইয়াকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় ধানম-ি মডেল থানার পরির্দশক (তদন্ত) মোঃ হেলাল উদ্দিনের নেতৃত্বে পুলিশের দলটি। তখন ভোর হয়ে গেছে। পরে তাকে থানায় নিয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ ও বিভিন্ন সংস্থার লোকজন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মেজবাহ উদ্দিন চার বছর ধরে ওই বাড়িতে আত্মগোপনে ছিলেন। কিন্তু তার গোপন তৎপরতা থেমে ছিল না। ২০০৪ সাল থেকে মেজবাহ উদ্দিন নানা ধরনের নাশকতার সঙ্গে জড়িত। স্থানীয়ভাবে খুবই প্রভাবশালী তিনি। চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি নিরাপত্তাজনিত কারণে মহাবেশ করার অনুমতি না পাওয়ার পর বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার নির্দেশে দেশব্যাপী টানা তিন মাস হরতাল-অবরোধ কর্মসূচীর নামে চোরাগোপ্তা হামলা, যানবাহন ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, গানপাউডার ও পেট্রোলবোমা দিয়ে যানবাহনে আগুন লাগিয়ে নারী, শিশু, সাধারণ মানুষ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। মেজবাহ উদ্দিন ঢাকায় পলাতক থেকেই নির্দেশ দিয়ে নোয়াখালীর সুধারাম উপজেলায় যানবাহন, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও পেট্রোলবোমা দিয়ে যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করে নাশকতামূলক কর্মকা- চালিয়েছে। তার নির্দেশেই নোয়াখালীর সুধারাম উপজেলায় বহু যানবাহন ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও পেট্রোলবোমা দিয়ে নারী, শিশুসহ নিরীহ মানুষকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনা ঘটিয়েছে জামায়াত-শিবির নেতাকর্মী ও বিভিন্ন জঙ্গী সংগঠনের সদস্যরা। তিনি মাঝে মধ্যেই পালিয়ে নোয়াখালীর সুধারাম উপজেলায় গিয়ে সার্বিক পরিস্থিতি দেখভাল করতেন। নাশকতাকারীদের প্রয়োজনীয় আর্থিক সহযোগিতা করে আসতেন। আবার ঢাকায় থেকে বিকাশের মাধ্যমেও তিনি নাশকতাকারীদের কাছে টাকা পৌঁছে দিতেন। ধানম-ি মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোঃ হেলাল উদ্দিন জনকণ্ঠকে বলেন, গ্রেফতারকৃত মেজবাহ উদ্দিন নোয়াখালীর সুধারামের বাসিন্দা। তার বিরুদ্ধে সুধারাম থানায় নাশকতার অভিযোগে ১৮টি মামলা রয়েছে। মামলাগুলো যানবাহনে ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও যাননাহনে পেট্রোলবোমা মেরে মানুষকে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগে দায়ের করা। প্রতিটি মামলায়ই তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে আদালত। তিনি জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় পর্যায়ের নেতা বলে জানা গেছে। তবে তার পদ পদবী সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য মেলেনি। ধারণা করা হচ্ছে, আত্মগোপনে থাকতে বা আত্মগোপনে থেকে বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা করতে নিরাপদ জায়গা ভেবে মেজবাহ উদ্দিন দৈনিক নয়া দিগন্ত পত্রিকার ব্যবস্থাপনা পরিচালক শিব্বির মাহমুদের বাসায় আশ্রয় নিয়েছিলেন। আর পত্রিকাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব বলে তার বাসায় পুলিশ অভিযান চালাবে না ভেবেই ১৮ মামলার ফেরার আসামিকে গ্রেফতার এড়িয়ে আত্মগোপনে থাকার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। গ্রেফতারকৃত মেজবাহ উদ্দিনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে। মেজবাহ উদ্দিনের বিরুদ্ধে ঢাকায় কোন মামলা থাকার তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে বাড়ির মালিক কি উদ্দেশ্যে মেজবাহ উদ্দিনের মতো একজন দাগী ফেরারী আসামিকে আশ্রয় দিয়েছিলেন, সে বিষয়ে অনুসন্ধান অব্যাহত আছে। জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যসহ মেজবাহ উদ্দিনকে নোয়াখালীর সুধারাম থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। সুধারাম থানার ওসি আনোয়ার হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, মেজবাহ উদ্দিন মূলত লক্ষ্মীপুরের বাসিন্দা। কিন্তু নোয়াখালী কলেজে পড়াশোনার সূত্র ধরে তিনি নোয়াখালী জেলা সদরেই স্থায়ী বসতি গড়ে তুলেন। মেজবাহ উদ্দিন বিএ পাস বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। সুধারাম থানা এলাকাতেও তার নিজস্ব বাড়ি রয়েছে। তার বাড়ি সুধারাম থানাধীন আলীপুর গ্রামে। নোয়াখালী জেলা সদরেও তার নিজস্ব বাড়ি রয়েছে। তিনি জেলা পৌর জামায়াতে ইসলামীর সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল ছিলেন। বর্তমানে পদাধিকার বলেই তিনি কেন্দ্রীয় পর্যায়ের নেতা। তার বিরুদ্ধে শুধু সুধারাম থানায়ই ১৮টি নাশকতার মামলা রয়েছে। মামলাগুলো যানবাহন ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, পুলিশের কাজে বাধা দেয়া এবং পুলিশের ওপর হামলাসহ দ্রুত বিচার আইনে দায়ের করা। মেজবাহ উদ্দিনকে আদালতে সোর্পদ করে দায়েরকৃত মামলাগুলোর বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডের আবেদন করার প্রস্তুতি চলছে।
×