ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি

হত্যা মামলার চার্জশীট গ্রহণ, ২৩ পলাতকের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট

প্রকাশিত: ০৫:০৯, ২২ ডিসেম্বর ২০১৫

হত্যা মামলার চার্জশীট গ্রহণ, ২৩ পলাতকের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট

কোর্ট রিপোর্টার ॥ রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির হত্যা মামলায় ৪১ আসামির বিরুদ্ধে দাখিলকৃত চার্জশীট গ্রহণ করে পলাতক ২৩ আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। সোমবার ঢাকার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আল-আমিন এ চার্জশীট গ্রহণ করে পলাতকদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। তাদের গ্রেফতারের বিষয়ে আগামী ২৭ জানুয়ারি পুলিশকে প্রতিবেদন দাখিলেরও নির্দেশ দেন বিচারক। আসামিদের মধ্যে সরকারী কর্মকর্তা ৫। মন্ত্রণালয়ের মঞ্জুরি আদেশ ছাড়াই তাদের বিরুদ্ধে চার্জশীট গ্রহণ করা হয়েছে। ফলে উচ্চ আদালতে গিয়ে মামলাটির বিচার ঝুলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। গ্রেফতারি পরোয়ানা জারিকৃত ২৩ জন হলেন সাভার পৌরসভার সাবেক সহকারী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান, নগর পরিকল্পনাবিদ ফারজানা ইসলাম, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের সাবেক উপ-প্রধান পরিদর্শক আব্দুস সামাদ, উপ-প্রধান পরিদর্শক (সাধারণ ঢাকা বিভাগ) জামশেদুর রহমান, উপ-প্রধান পরিদর্শক বেলায়েত হোসেন, চট্টগ্রাম বিভাগের পরিদর্শক প্রকৌশল ইউসুফ আলী, পরিদর্শক প্রকৌশল ঢাকা বিভাগ সহিদুল ইসলাম, রাজউকের ইমারত পরিদর্শক আওলাদ হোসেন, ইতার টেক্সটাইলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জান্নাতুল ফেরদৌস, শফিকুল ইসলাম ভূঁইয়া, মনোয়ার হোসেন বিপ্লব, আতাউর রহমান, আব্দুস সালাম, বিদ্যুৎ মিয়া, সৈয়দ শফিকুল ইসলাম জনি, রেজাউল ইসলাম, নান্টু কন্ট্রাক্টার, আব্দুল হামিদ, আব্দুল মজিদ, আমিনুল ইসলাম, নয়ন মিয়া, ইউসুফ আলী ও তসলিম। এদের মধ্যে আব্দুস সামাদ, জামশেদুর রহমান, বেলায়েত হোসেন, ইউসুফ আলী ও সহিদুল ইসলামের মঞ্জুরি আদেশ ছাড়াই তাদের বিরুদ্ধে চার্জশীট গ্রহণ করা হয়েছে। আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর আনোয়ারুল কবির বাবুল বলেছেন, চার্জশীট দাখিল হওয়ার পর আদালত থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ওই ৫ জনের মঞ্জুরি আদেশ চাওয়া হয়েছিল। মন্ত্রণালয় থেকে ওই ৫ জন জড়িত নয় মর্মে প্রতিবেদন আসে। কিন্তু আদালতের কাছে প্রতিবেদনটি বিশ^াসযোগ্য না হওয়ায় মঞ্জুরি আদেশ ছাড়াই চার্জশীট গ্রহণ করেছেন। মামলাটির চার্জশীটভুক্ত অপর আসামিদের মধ্যে একমাত্র ভবন মালিক সোহেল রানা কারাগারে রয়েছেন। জামিনে আছেন ১৭। এরা হলেন সোহেল রানার বাবা আব্দুল খালেক ওরফে কলু খালেক, মা মর্জিনা বেগম, রেফাত উল্লাহ, মোহাম্মাদ আলী খান, রফিকুল ইসলাম, রাকিবুল হাসান রাসেল, বজলুস সামাদ আদনান, মাহমুদুর রহমান তাপস, আনিসুর রহমান ওরফে আনিসুজ্জামান, আমিনুল ইসলাম, সারোয়ার কামাল, উত্তম কুমার রায়, অনিল দাস, শাহ আলম, আবুল হাসান, মোহাম্মদ আলী খান ও রাকিবুল হাসান। হত্যা ও ইমারত নির্মাণ আইনের দুই মামলা গত ১ জুন রানা, রানার বাবা-মাসহ ৪২ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশীট দাখিল করেন সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার বিজয় কৃষ্ণ কর। গত ৮ জুলাই ইমারত নির্মাণ আইনের মামলায় সোহেল রানাসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে চার্জশীট গ্রহণ করে আদালত। কিন্তু হত্যা মামলায় চার্জশীটভুক্ত ৫ সরকারী কর্মকর্তা মঞ্জুরি আদেশ না থাকায় একাধিকবার পেছানো হয় মামলাটির চার্জশীট গ্রহণের শুনানি। হত্যা মামলায় চার্জশীটে আসামি ৪১ এবং ইমারত নির্মাণ আইনের মামলায় চার্জশীটে ১৮। তবে ইমারত নির্মাণ আইনের ১৮ আসামির মধ্যে ১৭ জনই দ-বিধির চার্জশীটে রয়েছেন। তাই দুই চার্জশীট মিলে মোট আসামি ৪২। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল রানা প্লাজা নামক ভবন ধসে ১ হাজার ১১৭ জনকে মৃত উদ্ধার করা হয়। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরও ১৯ জন মারা যায়। সে হিসেবে নিহত হয় ১ হাজার ১৩৬। অন্যদিকে আহত হয় ১ হাজার ১৭০। মৃত উদ্ধারকৃতদের মধ্যে ৮৪৪ জনের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ডিএনএ পরীক্ষার নমুনা রেখে ২৯১ জনের অশনাক্ত লাশ জুরাইন কবরস্থানে দাফন করা হয়। গুরুতর আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করে ৭৮।
×