ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

এশিয়া কাপ দিয়েই শুরু রনির!

প্রকাশিত: ০৪:১৬, ২১ ডিসেম্বর ২০১৫

এশিয়া কাপ দিয়েই শুরু  রনির!

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বিপিএলে এবার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি কী? যে কাউকে প্রশ্ন করা হলে, উত্তরটা আসবে হয়ত আবু হায়দার রনিই। সেই রনির জাতীয় দলের জার্সি গায়ে জড়ানোর সুযোগ হয়ে যেতে পারে এশিয়া কাপ দিয়েই। বিপিএলে নতুন আরেক পেসারের আবির্ভাব ঘটল। বিপিএল দিয়ে আবিষ্কার হলো রনি নামক এক পেসারের। যিনি কি না ‘ইনসুইং’ দিতে পারেন। ‘আউট সুইং’ও দিতে পারেন। ‘সেøায়ার’ করতে পারেন। ‘কাটার’ মারতে পারেন। তার সবচেয়ে বড় গুণ যেটি, ‘ইয়র্কার’ও অহরহ করতে পারেন! একজন বোলারের মধ্যে যখন এত গুণ, স্বাভাবিকভাবেই তাকে নিয়ে সবাই ভাবতে বাধ্য। আবার বিপিএলে এবার দেশী বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ২১ উইকেটও নিয়েছেন রনি। সবার ভাবনার চেয়ে বেশি গুরুত্ব জাতীয় দলের জন্য কী রনিকে ভাবছেন বিসিবির নির্বাচকরা? ভাবছেন। এবং খুব ভালভাবেই ভাবছেন। নির্বাচক কমিটির সূত্রে যতদূর জানা গেল, ফেব্রুয়ারিতে দেশের মাটিতে অনুষ্ঠেয় এশিয়া কাপেই রনিকে ঝালিয়ে নেয়া হতে পারে। এশিয়া কাপে ভাল করলে টি২০ বিশ্বকাপের টিকেটও মিলে যেতে পারে। সূত্র জানিয়েছে, বিপিএলে রনি অসাধারণ বোলিং করেছে। এ বোলারকে নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই ভাবতে হচ্ছে। সেই ভাবনার প্রকাশও হতে পারে। এশিয়া কাপ যেহেতু এবারও দেশের মাটিতেই হবে। সেটি হবে টি২০ ফরমেটে। তাই রনিকে ঝালিয়ে নেয়ার সুযোগ আছে। প্রধান নির্বাচক ফারুক আহমেদ এ পেসারের দ্রুতই জাতীয় দলে খেলার সম্ভাবনার কথা আগেই জানিয়েছিলেন। বলেছিলেন, ‘অবশ্যই সম্ভাবনা থাকবে। আমরা তিন ফরমেটেই ক্রিকেট খেলছি। এই ফরমেটে (টি২০) আমরা মুস্তাফিজকে অভিষেক করিয়েছিলাম। সে দারুণ করেছে। রনি নিশ্চয়ই আমাদের বিবেচনায় থাকবে।’ এবার বিপিএলের সবচেয়ে আলোচিত এ পেসারকে নিয়ে ফারুক আরও বলেন, ‘বাঁহাতি বোলারের সবচেয়ে বড় গুণ ডানহাতি ব্যাটসম্যানের বিপক্ষে বল ভেতরে আনা। সেটা ও করতে পারে। ওয়াসিম আকরাম বা চামিন্দা ভাস সবাই বল ভেতরে আনতে পারত। সে সেøায়ার মারতে পারে, কাটার মারতে পারে, ইয়র্কার এসব কিছুই আছে তার বোলিংয়ে।’ তার মানে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের হয়ে খেলা, প্রথমবারের মতো টি২০ খেলতে নেমেই চমক দেখানো এ পেসারকে নিয়ে নির্বাচকরাও ভালভাবেই ভাবছেন। আর ভাবনা মানেই হচ্ছে জাতীয় দলে কড়া নাড়া! বিপিএল দিয়ে এবার পাদপ্রদীপের আলোয় আসা রনি গুরুত্বপূর্ণ সময়ে উইকেট নিয়েছেন। কুমিল্লাকে ফাইনালে ওঠানোর পেছনে তার অনেক বড় অবদান রয়েছে। বিপিএলের মাধ্যমেই টি২০’র দুনিয়াতে পা রাখা এ পেসার প্রথম কোয়ালিফায়ারে ৪ উইকেট নিয়ে কুমিল্লাকে ফাইনালে ওঠান। প্রতি ম্যাচেই উইকেট নিয়েছেন। ঘুরিয়ে দিয়েছেন কয়েকটি ম্যাচের মোড়ও। গতিময় আগ্রাসী বোলিংয়ে কাঁপিয়ে দিয়েছেন প্রতিপক্ষকে। এখন দেশী ক্রিকেটারদের মধ্যে এক আসরে সবচেয়ে বেশি উইকেট রনিরই। ১১ ম্যাচে ২১ উইকেট নিয়েছেন। এ পেসার অবশ্য এত ভাল করার পেছনে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা থেকেই সবটুকু প্রেরণা পেয়েছেন। নেত্রকোনার ছেলে রনির ক্রিকেটে হাতেখড়ি সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময়ে। স্কুল ক্রিকেট দিয়ে। এরপর বয়সভিত্তিক ক্রিকেটের সিঁড়ি বেয়ে দুইবার খেলেছেন অনুর্ধ ১৯ বিশ্বকাপ। সর্বশেষ ছিলেন বিসিবি হাইপারফর্মেন্স কর্মসূচিতেও। খেলেছেন জাতীয় লীগ, ঢাকা লীগ ও বিসিএলও। রনির আদর্শ ক্রিকেটারের নাম-মাশরাফি বিন মর্তুজা। ১৯ বছর বয়সী তরুণ এ পেসার বলেছেন, ‘মাশরাফি ভাই এক কথায় অসাধারণ। অধিনায়ক হিসেবেও দুর্দান্ত। তিনি নিজে পেসার বলে আমাদের খুব ভাল বোঝেন। পেস বোলারদের সমস্যাগুলো নিয়েও কড়া দৃষ্টি তার। খারাপ খেললেও উৎসাহ দেন।’ মাশরাফিও এ পেসারের উজ্জ্বল ভবিষ্যত দেখছেন। বলেছেন, ‘ওর ভেতরে এমনিতেই অনেক কিছু আছে, যা আশাবাদী করে। সে সবে উন্নতি করতে পারলে আরও ভাল করবে। প্রথম থেকেই ইয়র্কার মারতে চায়। সেই আত্মবিশ্বাস ওর আছে। সেøায়ারটাও খারাপ না। লেংথ বলও ভাল করে। জায়গায় বল করতে পারে। পেসও বেশ ভাল। এই বয়সে এত স্কিল থাকা মানে দারুণ বিষয়। আরও কাজ করলে দুই-এক বছর পর ও খুব ভাল বোলার হয়ে উঠবে।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘বিপিএলে আমাদের ঘরোয়া টুর্নামেন্টের চেয়ে একটু বেশি প্রেসার থাকে। কারণ এখানে বিদেশী খেলোয়াড়রা থাকে। এরপরও রনি যেভাবে বোলিং করেছে, আমার মনে হয় রনি অনেক পরিণত। ওকে এমন জায়গায়ও বোলিংয়ে পাঠিয়েছি, যেখানে প্রেসার আছে। এখনও সে নতুন। কখনও হয় তো নিতে পারছে। কখনও হয় তো পারছে না। ওকে কাছে থেকে দেখেছি। ও খুবই সম্ভাবনাময়। বাংলাদেশ ক্রিকেটের ভবিষ্যত বলা যায় তাকে। তবে ক্লাব ক্রিকেট ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের পার্থক্যটা অনেক বড়। এসেই পারফর্ম করা অনেক সময় সহজ। অনেক সময় কঠিন। বাংলাদেশ দলের কথা চিন্তা করলে ওকে গ্রেট ফিউচার বলা যায়।’ এখন স্বপ্ন পূরণ করতে চান রনি। জাতীয় দলে খেলতে চান। বলেছেন, ‘সবার মতো আমার স্বপ্ন জাতীয় দলে খেলা। একবার সুযোগ পেলে অনেক দিন খেলতে চাই। দেশকে ম্যাচ জেতাতে চাই।’ রনির সেই আশা বোধ হয় এশিয়া কাপেই পূরণ হয়ে যাবে।
×