ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সংস্কৃতি সংবাদ

সিমিন হোসেন রিমির আলোকচিত্রে বাংলার প্রকৃতি

প্রকাশিত: ০৫:২১, ২০ ডিসেম্বর ২০১৫

সিমিন হোসেন রিমির আলোকচিত্রে বাংলার প্রকৃতি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ লেখক সিমিন হোসেন রিমির সঙ্গে পরিচিত অনেকেই। বিশেষ করে দৈনিক পত্রিকায় তাঁর রচিত প্রবন্ধ কিংবা নিবন্ধ পাঠের সুযোগ ঘটেছে বহু পাঠকের। সংসদ সদস্য ও সমাজকর্মী হিসেবেও রয়েছে দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের এই মেয়েটির পৃথক পরিচয়। প্রগতিশীল এই নারী ভালবাসেন রূপসী বাংলার নিসর্গকে। সেই ভালবাসা ও ভাললাগার টানেই প্রায় ছুটে যান সবুজ-শ্যামল বাংলার নানা প্রান্তে। প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগের পাশাপাশি শখের বশে ক্যামেরায়ও ধারণ করেন নান্দনিক সেসব দৃশ্যপট। সেই সূত্রে তাঁর নামের সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হয়েছে আলোকচিত্রীর বিশেষণ। রিমির নতুন এই পরিচয়টি সবার সামনে উন্মোচিত হলো শনিবার। এদিন পৌষের সন্ধ্যায় ধানম-ির গ্যালারি টোয়েন্টিওয়ানে শুরু হলো এই আলোকচিত্রীর আলোকচিত্র প্রদর্শনী। শিরোনাম প্রকৃতি। রিমির মা সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীনের জš§দিন আজ ২০ ডিসেম্বর। তার চারদিন পর প্রাণপ্রিয় মায়ের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী। মায়ের জš§-মৃত্যুর স্মরণে নিজের তোলা ১১৪টি আলোকচিত্র দিয়ে প্রদর্শনীটি সাজিয়েছেন তিনি। পৌষের সন্ধ্যায় প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রোকেয়া আফজাল রহমান। উদ্বোধনী আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী মনিরুল ইসলাম এবং শিল্পী অধ্যাপক রোকেয়া সুলতানা। অসুস্থতার কারণে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন না সিমিন হোসেন রিমি। তবে পাঠ করা হয় তাঁর লিখিত বক্তব্য। এতে আলোকচিত্রীর অনুভূতি থেকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, প্রকৃতিতে সুন্দর যা কিছু অজান্তেই আমরা বলি ছবির মতো। প্রকৃতি আসলে জীবন্ত ক্যানভাস। আমরা শুধু ক্যামেরায় ধরে রাখি কিছু মুহূর্তকে। বইপড়ার মতোই আনন্দ আমার প্রকৃতির সঙ্গে এই কথোপকথনে। আমার তোলা ছবি আমার আনন্দের একান্ত নিভৃত প্রকাশ। বন্ধু শামীম সুব্রনার আগ্রহে তা আজ ভিন্ন পরিচিতি পেল। মা সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীনের পুণ্য স্মৃতির প্রতি নিবেদন করে আমার এই আয়োজন। নিসর্গপ্রেমী রিমির আলোকচিত্রে ধরা দিয়েছে পাখি, মেঘ, বৃক্ষ, তৃণগুল্ম, সমুদ্রসহ প্রকৃতির নানা অনুষঙ্গ। কোন ছবিতে আবার দেখা মিলেছে নদীতে চলমান নৌকা কিংবা আবহমান বাংলার দৃষ্টিনন্দন কোন চিরন্তন চিত্রকল্প যার মাঝে গ্রামবাংলা রূপময়তা ফুটে উঠেছে জীবনানন্দীয় সরল সৌন্দর্যে। রয়েছে প্রস্তরময় বেলাভূমিতে সাগরের আছড়ে পড়া, আবার সবুজাভ অপার্থিব মরকত রঙের জলের ঢেউ। বিভিন্ন ছবিতে উপস্থাপিত হয়েছে বিচিত্র রং ও গড়নের ফুল। সেখানে রয়েছে কত রকম মনজুড়ানো অর্কিড অথবা একগুচ্ছ বাদল দিনের প্রথম কদমফুল। রিমির ছবিগুলোর বিশেষ বড় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ফ্রেমে মানুষের অনুপস্থিতি। আর মানুষের এই অনুপস্থিতিই যেন আরও বেশি করে বাড়িয়ে তোলে মানুষের সচেতন উপস্থিতিটাকে। ১০৭টি আলোকচিত্র দিয়ে সাজানো হয়েছে প্রদর্শনী। আগামী দুই জানুয়ারি পর্যন্ত চলবে এ প্রদর্শনী। প্রতিদিন বেলা ১২টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। বাহাদুর শাহ পার্কে বিজয় উৎসব ॥ পুরনো ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্কে শুরু হলো সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট আয়োজিত দুইদিনব্যাপী বিজয় উৎসব। শনিবার বিকেলে প্রধান অতিথি হিসেবে এ উৎসব উদ্বোধন করেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ। মঞ্চের আহ্বায়ক সালমা চৌধুরীর সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন জোটেনর কেন্দ্রীয় কমিটির দফতর সম্পাদক ফয়জুল আলম পাপ্পু, জোটের নির্বাহী কমিটির সদস্য আবুল ফারাহ পলাশ, হানিফ খান ও বাহাদুর শাহ মঞ্চের সদস্য সচিব বাবু রাম। উদ্বোধনী আলোচনা শেষে বিভিন্ন পরিবেশনায় অংশ নেয় আওয়ামী শিল্পী গোষ্ঠী, মৈত্রী, সীমান্ত খেলাঘর আসর, বঙ্গবন্ধু গবেষণা পরিষদ, গে-ারিয়া কচি-কাঁচার মেলা, ভিন্ন ধারা, মহীরুহ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আবৃত্তি সংঘ, স্পন্দন ও রঙ্গপীঠ। গান ও কবিতার একক পরিবেশনায় অংশ নেন শিবু রায়, মাহফুজা আক্তার নীরা, আবিদা রহমান সেতু, কানান বালা সরকার, উর্মী হালাদার, শান্তা সরকার, রূনা নাগ, প্রদীপ সরকার, আলী মুহম্মদ দেলওয়ার প্রমুখ। আজ রবিবার একই মঞ্চের সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মাধ্যমে শেষ হবে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আট দিনব্যাপী বিজয় উৎসব। আইজিসিসিতে বুলবুল মহলানবীশের সঙ্গীতসন্ধ্যা ॥ ইন্দিরা গান্ধী সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের (আইজিসিসি) আয়োজনে শনিবার অনুষ্ঠিত স্বাধীন বাংলা বেতারের শিল্পী বুলবুল মহলানবীশের সঙ্গীতসন্ধ্যা। আইজিসিসির গ্রন্থাগার মিলনায় এ সঙ্গীতসন্ধ্যায় একগুচ্ছ গান শোনান বুলবুল মহলানবীশ। কণ্ঠের মাধুর্যে মুগ্ধ করেন শ্রোতাদের। গেয়ে শোনান ‘আমার দেশের মাটির গন্ধে ভরে আছে’, ‘ও আমার দেশের মাটি’, ‘তোমায় গান শোনাব’, ‘এই মণিহার আমায় নাহি সাজে’, ‘কে আবার বাজায় বাঁশি’, ‘তুমি নির্মল কর মঙ্গল কর’সহ কুড়িটি গান। শিল্পীর সঙ্গে তবলায় সঙ্গত করেন বিপ্লব শর্মা, বাঁশিতে মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম, গিটারে সাহাদাত চৌধুরী ও কি-বোর্ডে সুনীল সরকার। কচি-কাঁচার মেলার শিশু-কিশোর প্রতিযোগিতা ॥ শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন, পল্লীকবি জসীমউদ্্দীন এবং বিজ্ঞান লেখক ড. আবদুল্লাহ-আল-মুতী শরফুদ্দিনের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে দুইদিনব্যাপী শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন, আবৃত্তি প্রতিযোগিতা ও বিজ্ঞান মেলা আয়োজনে কচি-কাঁচার মেলা। শুক্রবার শুরু হওয়া প্রতিযোগিতার শেষ দিন ছিল শনিবার। এদিন সকালে আবৃত্তি প্রতিযোগিতা উদ্বোধন করেন মেলার সহ-সভাপতি কবি ও স্থপতি রবিউল হুসাইন। বিচারক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাচিকশিল্পী ও অধ্যাপক কাজী মদিনা, বিশিষ্ট বাচিকশিল্পী আলেয়া ফেরদৌসী, বাচিকশিল্পী সাগর লোহানী, বাচিক শিল্পী শাকিলা মতিন মৃদুলা, বাকশিল্পী রেজিনা ওয়ালি লীনা প্রমুখ। ৩ থেকে ১৫ বছর বয়সের প্রায় ২৫০ জন শিশু-কিশোর অংশ নেয় প্রতিযোগিতায়। বিজ্ঞান মেলার বিচারক ছিলেন প্রফেসর শামসুর রহমান সেলু ও প্রফেসর মুহম্মদ এনামুল হক খান। আগামী ১ জানুয়ারি শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হবে। শেষ হলো উদীচীর সাংস্কৃতিক সম্মেলন ॥ লাখো শহীদের রক্তের ঋণ শোধে প্রয়োজনে নিজের জীবনবাজি রাখা এবং সাম্রাজ্যবাদ ও ধর্মীয় মৌলবাদÑএই দুইয়ের বিরুদ্ধে নিরবচ্ছিন্নভাবে সংগ্রাম অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়ে শেষ হলো বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী আয়োজিত তিনদিনব্যাপী জাতীয় সাংস্কৃতিক সম্মেলন। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত সম্মেলনের তৃতীয় ও শেষ দিনে নানা বৈচিত্র্যপূর্ণ সাংস্কৃতিক পরিবেশনা তুলে ধরেন দেশের বিভিন্ন জেলা ও শাখা থেকে আগত উদীচীর শিল্পী ও কর্মীরা। এদিন শুরুতেই গণসঙ্গীত পরিবেশন করেন নোয়াখালী উদীচীর শিল্পী ঝুটন চন্দ্র মজুমদার। এরপর দলীয় গণসঙ্গীত নিয়ে মঞ্চে আসে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সংসদ। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের শিল্পীদের দু’টি অনবদ্য নৃত্য পরিবেশনার পর নাটক ‘বৌ’ নিয়ে মঞ্চে আসেন গাইবান্ধার দরিয়াপুর উদীচীর শিল্পীরা। এছাড়া সম্মেলক কণ্ঠে গণসঙ্গীত পরিবেশন করে উদীচী কক্সবাজার জেলা সংসদ, গাজীপুর জেলা সংসদ, নারায়ণগঞ্জ জেলা সংসদ ও নড়াইলের নড়াগাতি শাখা শিল্পীরা। গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী বিয়ের গীত পরিবেশন করেন মাগুরা জেলা সংসদের শিল্পীরা। সব শেষে ছিল উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের শিল্পীদের পরিবেশিত আলেখ্যানুষ্ঠান। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী গণসঙ্গীতসমূহ সংকলন করে উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি শংকর সাওজালের পরিচালনায় আলেখ্যানুষ্ঠানটি উপভোগ করেন অজস্র দর্শক-শ্রোতা। শিল্পকলা একাডেমির শিশু চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ॥ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪০তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে দেশব্যাপী শিশু চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা এবং মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে ঢাকা মহানগরের শিশুদের অংশগ্রহণে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির উদ্যোগে চারুকলা বিভাগের ব্যবস্থাপনায় অনুষ্ঠিত চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয় শনিবার। সকালে একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। দুইটি পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় শিশুশ্রেণী থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত ‘ক’ ‘খ’ ও ‘গ’ ৩টি গ্রুপে ভাগ করা হয়। বঙ্গবন্ধুর শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে দেশব্যাপী শিশু চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে প্রায় আড়াই হাজার খুদে চিত্রকর। বিজয় দিবস উপলক্ষে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে ৩১৫ জন শিশু চিত্রকর। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে শিশুদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন সংস্কৃতিবিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য জেবুন্নেছা আফরোজ। শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বরেণ্য শিল্পী সমরজিৎ রায় চৌধুরী। স্বাগত বক্তব্য রাখেন একাডেমির চারুকলা বিভাগের পরিচালক উৎপল কুমার দাস। পুরস্কার প্রদান শেষে শিশুশিল্পীদের অংশগ্রহণে অনিক বোসের পরিচালনায় স্পন্দন নৃত্য সংগঠন পরিবেশন করে পরপর সমবেত নৃত্য। এছাড়া একাডেমি এ্যাক্রোবেটিক দলের পরিবেশনায় পরিবেশিত হয় এ্যাক্রোবেটিক প্রদর্শনী।
×