স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ সাফ ফুটবলের শিরোপা বাংলাদেশ সর্বমেষ জিতেছিল সেই একযুগ আগেÑ ২০০৩ সালে। সেই একযুগের শিরোপা-খরার অবসান হবে কি আগামী ৩ জানুয়ারি? আগামী ২৩ ডিসেম্বর থেকে ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত সাউথ এশিয়ান ফুটবল ফেডারেশনের (সাফ) ব্যবস্থাপনায় ‘সাফ সুজুকি কাপ ২০১৫’র খেলা ভারতের কেরলে অনুষ্ঠিত হবে। এই টুর্নামেন্টে বাংলাদেশসহ আফগানিস্তান, ভারত, নেপাল, ভুটান, মালদ্বীপ ও শ্রীলঙ্কা অংশগ্রহণ করবে। এই টুর্নামেন্টে অংশ নিতে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল আজ (রবিবার) সকাল ১০টা ৫ মিনিটে জেট এয়ার লাইন্সযোগে ভারতের কেরলের উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করবে।
এ উপলক্ষে শনিবার দুপুরে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) ভবনের কনফারেন্স রুমে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন বাফুফের সহ-সভাপতি ও ন্যাশনাল টিমস্ কমিটির চেয়ারম্যান কাজী নাবিল আহমেদ এমপি, বাফুফে সদস্য ও বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের টিম লিডার ইকবাল হোসেন, বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের ম্যানেজার আমিরুল ইসলাম বাবু, বাফুফে সদস্য ও টিম অফিসিয়াল আজমল আহমেদ তপন, প্রধান প্রশিক্ষক মারুফুল হক, দলের অধিনায়ক মামুনুল ইসলাম এবং বাফুফে সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগ।
প্রধান কোচ মারুফুল বলেন, ‘যখন দলের দায়িত্ব নিয়েছিলাম তখন গোল সেট করে ফেলি চ্যাম্পিয়ন হবার জন্য। এটা অবশ্যই অর্জন করার মতো। এ জন্য নিয়েছি সব ধরনের প্রস্তুতি। দলকে ৩৮ সেশন অনুশীলন করিয়েছি। নেপালের সঙ্গে একটি প্রস্তুতি ম্যাচও খেলেছি। এই ম্যাচে যেসব ভুল হয়েছে সেগুলো শুধরে নেব।’ মারুফুল আরও যোগ করে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য। আফগানিস্তান বর্তমান চ্যাম্পিয়ন। তাদের শক্তিশালী এবং দুর্বল দিকগুলো আমরা পর্যবেক্ষণ করেছি। গেম প্ল্যান অনুযায়ী খেললে তাদের হারানো সম্ভব। মালদ্বীপ দলেও অনেক অভিজ্ঞ এবং মানসম্পন্ন খেলোয়াড় আছে। ভুটান অনেক পিছিয়ে থাকলেও তাদের খাটো করছি না। আশাকরি সবাইকেই হারানো যাবে।’ নিজ দলের খেলোয়াড়দের মানসিকতা শক্তিশালী করার ব্যাপারেও গুরুত্ব আরোপ করেন মারুফুল। এছাড়া ম্যাচের পরিস্থিতি অনুযায়ী দলকে বিভিন্ন ফর্মেশনে খেলানোরও ইঙ্গিত দেন তিনি। এছাড়া জুয়েল রানা ‘তুরুপের তাস’ হতে পারেন বলে উল্লেখ করেন। সবশেষে বলেন, ‘সেট পিসে আমাদের যে সমস্যা আছে তা নিয়ে প্রচুর কাজ করেছি। সাফে প্রত্যাশার চাপে ন্যুব্জ নই। আমার দায়িত্ব সাফ পর্যন্তই। এ জন্যই চাইব স্মরণীয় কোন রেজাল্ট এনে দিতে। ২১ দিন প্রস্তুতির জন্য পর্যাপ্ত নয়। তারপরও এটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি।’
অধিনায়ক মামুনুল বলেন, ‘শেষ ১৮ দিন কঠোর ট্রেনিং করেছি। মিটিংয়ে দলের সবাই কোচের কাছে কমিটমেন্ট করেছি আমরা এই আসরের শিরোপা জিতব। আমরা সবাই নিজের সেরাটা দিতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। আত্মবিশ্বাস এবং টিমওয়ার্কই পারে আমাদের সফলতা এনে দিতে।’ সবশেষে মামুনুল বলেন, ‘বিশ্বকাপ বাছাই এবং চীনে গিয়ে টুর্নামেন্ট খেলে আমরা মোটেও ক্লান্ত নই। বরং বেশি ম্যাচ খেলে আমরা এখন আরও পরিণত।’
আসন্ন সাফ চম্পয়নশিপে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল ২০১৬ সালের প্রথম তিনদিনে দেশবাসীকে উৎসব করার একটা উপলক্ষ এনে দেবে বলে আশা প্রকাশ করেন কাজী নাবিল আহমেদ। ২০১৩ সালের সাফ প্রস্তুতি আর এবারের সাফ প্রস্তুতিতে ফেডারেশনের ভূমিকায় রয়েছে ব্যাপক তফাত। সেবার একজন বিদেশী হেড কোচ, বিদেশী সহকারী কোচ, বিদেশী ফিটনেস ট্রেনার, বিদেশী গোলকিপিং কোচ ছিলেন দলে। এ ছাড়া দেশে ও বিদেশে বেশ ক’টি প্র্যাকটিস ম্যাচ খেলেছিল বাংলাদেশ। আর এবার পুরোপুরি দেশী কোচিং স্টাফ আর নেপালের বিপক্ষে একটি মাত্র প্রস্তুতি ম্যাচ। এ প্রসঙ্গে নাবিল আহমেদ বলেন, ‘২০১৫ সালে জাতীয় ফুটবল দল অনেক চড়াই উৎড়াই পেরিয়েছে, কোচ বদল হয়েছে তিনবার। জাতীয় দলের খেলোয়াড়রা এ বছর বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে ভাল দলের বিরুদ্ধে বেশ কিছু ম্যাচ খেলেছে, এ ছাড়া সারা বছর তারা বেশ কিছু আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছে, ভিন্ন ভিন্ন কোচের অধীনে আন্তর্জাতিক ফুটবলের ভিন্ন ভিন্ন কৌশল ও পারিপার্শ্বিকতা সম্পর্কে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে, তারা এখন আগের চেয়ে বেশি পরিপক্ব। আমাদের আশা এবার ফুটবল দল ভাল খেলবে। নতুন বছরের প্রথম তিনদিন জাতিকে একটা আনন্দের উপলক্ষ করে দেবে। উল্লেখ্য, ১ জানুয়ারি সাফের সেমিফাইনাল ও ৩ জানুয়ারি ফাইনাল।
বাফুফে আগাম কোনও পুরস্কার ঘোষণা করছে না। তবে ফাইনালে গেলে বা শিরোপা জিতলে ফেডারেশনের পক্ষ থেকে বোনাস ও পুরস্কারের কোন কমতি থাকবে না।