ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

মেয়র প্রার্থীদের অধিকাংশই ব্যবসায়ী, কোটিপতি ৪৭ জন

প্রকাশিত: ০৬:১৮, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৫

মেয়র প্রার্থীদের অধিকাংশই ব্যবসায়ী, কোটিপতি ৪৭ জন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পৌর নির্বাচনে মেয়র পদে অংশ নেয়া অধিকাংশ প্রার্থীই ব্যবসায়ী। সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজনের প্রার্থী পর্যালোচনায় দেখা গেছে প্রার্থীদের ৭২ ভাগ ব্যবসায়ী। এরমধ্যে বিএনপির সংখ্যাই বেশি। এছাড়া সম্পদের দিক দিয়ে কোটিপতি প্রার্থীর সংখ্যা মাত্র ৪৭ জন। তবে কোটিপতি প্রার্থীর সংখ্যা আওয়ামী লীগের বেশি। আওয়ামী লীগে কোটিপতি প্রার্থীর সংখ্যা ২০ জন হলেও বিএনপিতে এ সংখ্যা মাত্র ১৩ জন। পর্যালোচনায় দেখা গেছে, কোটিপতি প্রার্থীর পাশাপাশি বেশি সম্পদের মালিকও আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। তবে বছরে কোটি টাকার বেশি আয় করেন এমন প্রার্থীর সংখ্যা একেবারে নগণ্য। মাত্র আটজন প্রার্থী বছরে কোটি টাকার বেশি আয় করেন। এরমধ্যে আওয়ামী লীগের রয়েছেন পাঁচজন আর বিএনপির দু’জন। এতে দেখানো হয়েছে, প্রার্থীদের বেশিরভাগেরই বছরে আয় পাঁচ লাখ টাকা বা তার চেয়ে কম। এছাড়া আওয়ামী লীগের তুলনায় বিএনপির প্রার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে বেশি। প্রার্থীদের অধিকাংশই কর দেন বলে তাদের তথ্য পর্যালোচনায় উঠে এসেছে। শুক্রবার সুজন আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে পৌর নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বী মেয়র প্রার্থীদের হলফনামার তথ্য পর্যালোচনা তুলে ধরা হয়। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ৯০৪ জন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে শতকরা ৩৭.৭২ জনের শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক বা স্নাতকোত্তর। আওয়ামী লীগের ২২১ জন প্রার্থীর মধ্যে এই সংখ্যা ৪০.৭২ ভাগ। অপরদিকে বিএনপির প্রার্থীর মধ্যে শিক্ষিত প্রার্থীর সংখ্যার হার ৪০.২৯। এছাড়া ২২৪ জন প্রার্থী বিদ্যালয়ের গ-ি পেরোতে পারেননি। বিশ্লেষণে দেখা যায়, উচ্চশিক্ষিত প্রার্থীর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও বিএনপির অবস্থা প্রায় একই রকম হলেও নিরক্ষর বা স্বল্পশিক্ষিত প্রার্থীর শতকরা হার আওয়ামী লীগের চেয়ে বিএনপিতে সামান্য বেশি। প্রার্থীদের পেশা সম্পর্কে জানানো হয়, ৯০৪ জন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে ৭২.১২ ভাগ ব্যবসায়ী। আওয়ামী লীগের মধ্যে ব্যবসায়ীর হার ৭৪.৬৬, বিএনপিতে ব্যবসায়ী রয়েছেন ৭৮.৬৪ ভাগ। বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের চেয়ে বিএনপির প্রার্থীদের মধ্যে ব্যবসায়ীর হার প্রায় ৪ ভাগ বেশি। প্রার্থীদের মধ্যে বর্তমানে মামলা রয়েছে ২১৯ জনের বিরুদ্ধে। ৩২১ জনের বিরুদ্ধে অতীতে এবং ১২১ জনের বিরুদ্ধে উভয় সময়ে মামলা আছে বা ছিল। আওয়ামী লীগের প্রার্থীর মধ্যে বর্তমানে ৩৩ জনের বিরুদ্ধে, অতীতে ১০২ জনের বিরুদ্ধে এবং উভয় সময়ে মামলা ছিল বা আছে ২০ জন প্রার্থীর বিরুদ্ধে। বিএনপির ৯৬ জনের বিরুদ্ধে বর্তমানে মামলা রয়েছে। অতীতে মামলা ছিল ১০৯ জনের বিরুদ্ধে। ৬১ জনের বিরুদ্ধে উভয় সময়ই মামলা ছিল বা আছে। মেয়র প্রার্থীর মধ্যে ৩৬ জনের বিরুদ্ধে বর্তমানে, ৬১ জনের বিরুদ্ধে অতীতে এবং পাঁচজনের বিরুদ্ধে উভয় সময়ে ৩০২ ধারায় মামলা (হত্যা মামলা) ছিল বা আছে। বিশ্লেষণে দেখানো হয়েছে, অতীত, বর্তমান, উভয় সময় অর্থাৎ সকল ক্ষেত্রেই আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের তুলনায় বিএনপির প্রার্থীদের মামলা বেশি। এতে আরও দেখানো হয়, মেয়র প্রার্থীর ৬৩৪ জন বছরে পাঁচ লাখ টাকা বা তার কম আয় করেন। আওয়ামী লীগের প্রার্থীর মধ্যে এই সংখ্যা ১২৫ জন। বিএনপির প্রার্থীর মধ্যে ১৪৪ জন। মেয়র প্রার্থীর মধ্যে মাত্র আটজন বছরে কোটি টাকার বেশি আয় করেন। আওয়ামী লীগের এই সংখ্যা পাঁচজন। বিএনপির রয়েছে দু’জন। এতে বলা হয়, অধিক আয়কারী প্রার্থীদের সংখ্যা আওয়ামী লীগে বেশি হলেও স্বল্প আয়কারী প্রার্থী বিএনপিতে সামান্য বেশি। প্রার্থীদের সম্পদ সম্পর্কে বলা হয়, ৪৯০ জন প্রার্থীর সম্পদ পাঁচ লাখ টাকা বা তার কম। আওয়ামী লীগের এই সংখ্যা ৭৯ জন। বিএনপিতে রয়েছেন ৯৯ জন। মেয়র প্রার্থীর মধ্যে কোটিপতির সংখ্যা ৪৭ জন। আওয়ামী লীগে রয়েছেন ২০ জন আর বিএনপিতে আছেন ১৩ জন। কোটিপতি প্রার্থীর সংখ্যা বিএনপির তুলনায় আওয়ামী লীগে বেশি। কম সম্পদের মালিক আওয়ামী লীগের তুলনায় বিএনপিতে বেশি। প্রার্থীদের ঋণ সম্পর্কে বলা হয়েছে, প্রার্থীর মধ্যে ঋণগ্রহীতার হার মাত্র ১৬.১৫ ভাগ। আওয়ামী লীগের এই হার ২২.৭৪ ভাগ, বিএনপির ২০.৩৮ ভাগ। কোটি টাকার অধিক ঋণ গ্রহণ করেছেন ১৮ জন। ১৮ জনের মধ্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পাঁচজন, বিএনপির সাতজন। কর প্রদান সম্পর্কে বলা হয়, প্রার্থীদের মধ্যে কর প্রদান করেন ৭২৯ জন। আওয়ামী লীগের মধ্যে ১৮১ জন, বিএনপিতে ১৬৯ জন এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র ৪৭৭ জন প্রার্থীর মধ্যে ৭৯.৪৫ ভাগ প্রার্র্থী কর প্রদান করেন। তথ্য পর্যালোচনা করে দেয়া গেছে, প্রার্থীদের অধিকাংশই করদাতা। সংবাদ সম্মেলনে ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, সুজনের পক্ষ থেকে প্রতিটি নির্বাচনে হলফনামায় প্রদত্ত প্রার্থীদের তথ্যের বিশ্লেষণ তুলে ধরা হয়, যাতে ভোটাররা জেনে-শুনে-বুঝে ভোট দিতে পারেন। তথ্যপ্রাপ্তির অধিকার ভোটারদের বাক্স্বাধীনতার অংশ। নির্বাচন কমিশনের উচিত ভোটারদের জ্ঞাতার্থে সব প্রার্থীর এসব তথ্য তুলে ধরা। একই সঙ্গে হলফনামায় ভুল তথ্য দেয়া হয়েছে কি-না তা কমিশনের খতিয়ে দেখা দরকার। তিনি বলেন, নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু নির্বাচন কমিশন কারও বিরুদ্ধে তেমন কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না। কমিশন বলছে, অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখা হবে। কিন্তু কমিশন এর মাধ্যমে তার দায়িত্ব এড়াতে চাইছে। সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে কমিশনের যে অগাধ ক্ষমতা রয়েছে তা প্রয়োগ করা দরকার বলেও মন্তব্য করেন তিনি। অনুষ্ঠানে ড. হামিদা হোসেন বলেন, পৌর নির্বাচনে প্রার্থী, মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। বিশেষ করে মহান বিজয় দিবসেও কয়েকটি এলাকায় কয়েকজন মন্ত্রী-এমপির বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু নির্বাচন কমিশন কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না। কমিশনের উচিত নিজ উদ্যোগে আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনা খতিয়ে দেখা, যাতে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। প্রার্থীদের তথ্য বিশ্লেষণ উপস্থাপন করেন সংগঠনের সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার।
×