নিজস্ব সংবাদদাতা, লালমনিরহাট, ১৮ ডিসেম্বর ॥ লালমনিরহাটে নির্মাণাধীন তিস্তা দ্বিতীয় সেতুর গার্ডার ভেঙ্গে পড়ায় নির্মাণ কাজ সাময়িকভাবে বন্ধ করা হয়েছে। বর্তমানে আহত প্রকৌশলীর চিকিৎসা চলছে। নির্মাণ কাজের ত্রুটি বিচ্যুতি দেখতে ঢাকা থেকে এলজিইডির উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটি রওনা দিয়েছে। রবিবার হতে তারা সেতুটির নির্মাণ কাজের বিষয়ে তদন্ত শুরু করবে।
জানা গেছে, ১৭ ডিসেম্বর বিকেলে লালমনিরহাটে গঙ্গাচরা ইউনিয়নের মহিপুরে তিস্তা নদীর ওপর নির্মাণাধীন দ্বিতীয় তিস্তা সেতুর গার্ডার ভেঙ্গে পড়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলী সাইফুলসহ কয়েকজন শ্রমিক আহত হয়। এর আগেও ১৪ ডিসেম্বর ১৭ নম্বরের ৪র্থ গার্ডারটিও স্থাপনের পর হঠাৎ ভেঙ্গে পড়ে ছিল। বিষয়টি কৌশলে চেপে যায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু দ্বিতীয় দফা বৃহস্পতিবার বিকেলে তিস্তা নদীর দুর্গম চরাঞ্চল কাকিনা মহিপুরে তিস্তা নদীর ওপর নির্মাণাধীন তিস্তা সেতুর গার্ডারটি ভেঙ্গে পড়ে। এই সময় নির্মাণ কাজের তত্ত্বাবধায়নে থাকা প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম গার্ডারের সঙ্গে থাকায় তিনিও গার্ডারের সঙ্গে নিচে পড়ে আহত হয়। মৃত্যুর মুখ হতে প্রকৌশলী অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যায়। তাকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এই ঘটনায় শত কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সেতুটির নির্মাণ কাজে নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে।
তিস্তা সেতুর গার্ডারগুলো অন্যত্র নির্মাণ করে ক্রেনে করে তুলে সেতুতে স্থাপন করা হয়। ১৭ ডিসেম্বর ২২ নম্বর গার্ডারটি ক্রেনে তোলার সময় ভেঙ্গে পড়ে চার টুকরো হয়ে যায়। এর আগে ১৪ ডিসেম্বর ১৭ নম্বর ৪র্থ গার্ডার স্থাপনের পর রাতে সেতুর মূলকাঠামো হতে ভেঙ্গে পড়ে যায়। প্রাথমিকভাবে ধারণা কারা হচ্ছে, গার্ডারগুলো অন্যত্র নির্মাণ করার সময় তাতে লোহার অবকাঠামো নির্মাণে ত্রুটি ছিল। এছাড়াও নির্মাণ সামগ্রী ছিল নিম্নমানের। তাই প্রায় এক পঞ্চশ টন ওজনের গার্ডারগুলো ক্রেনের সহায়তায় তোলার সময় নিজের ওজন ধরে রাখতে পারছে না। সেই কারণে সেতুর কাঠামোতে লাগানোর আগেই ক্রেনের উপরেই ভেঙ্গে যাচ্ছে। নিজের ওজন ধরে রাখতে না পারায় সেতু হতে গার্ডারগুলো ভেঙ্গে পড়ে দুর্ঘটনার সৃষ্টি হচ্ছে।
এলজিইডি কালীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ পারভেজ নেওয়াজ খান জানান, ১৪ ও ১৭ ডিসেম্বর নির্মাণাধীন দ্বিতীয় তিস্তা সেতুর পর পর দুইটি গার্ডার ভেঙ্গে যায়। এই কারণে সেতুর কাজটি ও দুর্ঘটনার কারণ জানতে কেন্দ্রীয় এলজিইডির প্রধান প্রকৌশল অধিদফতর থেকে একটি তদন্ত টিম শুক্রবার রাতে ঢাকা হতে রওনা দেবে। তারা রবিবার সকাল হতে তদন্ত কাজ শুরু করবে। পরপর দুটি দুর্ঘটনার কারণে সেতুর কাজ সাময়িকভাবে বন্ধ রয়েছে। কবে কাজ শুরু হবে তা অনিশ্চিয়তা মধ্যে পড়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১১ সালের ১৯ অক্টোবর লালমনিরহাট সফরে এসে তিস্তা প্রথম সেতুর উদ্বোধন করেন। একই দিনে কাকিনা মহিপুর দিয়ে তিস্তা সেতুর দ্বিতীয় নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এতে ব্যয় ধরা হয় এক শ’ ২১ কোটি টাকা। চলতি বছরেই শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ২০১৫ সালের ৩০ জুন কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। এরই মধ্যে পরপর দুই বার নির্মাণকারী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নাভানা গ্রুপ ও ডাব্লুএমসিজি কাজের মেয়াদ বাড়িয়ে নেয়। কাজ চলছে খুবই সম্ভুক গতিতে। দুর্ঘটনা তিস্তা সেতুর কাজকে অনিশ্চয়তার মুখে ফেলে দিয়েছে। এমন সময় তিস্তা দ্বিতীয় সেতুর দুর্ঘটনা ঘটেছে লালমনিরহাট দুই আসনের (আদিতমারী কালীগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত) এমপি ও খাদ্য প্রতিমন্ত্রী নূরুজামান আহম্মেদ তার নিজ নির্বাচনী এলাকা ও বাড়িতে সফরে রয়েছে। ১৭ ডিসেম্বর প্রতিমন্ত্রীকে সন্ধ্যায় লালমনিরহাট চেম্বার অফ কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবসায়ী নেতা ও সাধারণ ব্যবসায়ীগণ সংবর্ধনা দেয়। এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠান চলাকালে তিস্তা সেতুর গার্ডার ভেঙ্গে যাওয়ার খবর আসে।
উল্লেখ্য, তিস্তা সেতুটি দৈর্ঘ্য ৮৫০ মিটার, প্রস্থ ২৪ ফিট হবে। গাডার হবে ৮৫টি, সøাব হবে ১৭টি, দুই পাড়ে সেতুটির গাইড বাধ ও লেন রয়েছে। পাঁচ বছরে তিস্তা দ্বিতীয় সেতুর কাজ হয়েছে ২৬টি গাডার ও ৪টি সøাব নির্মাণ কাজ। ১৭ তারিখে গার্ডার ভেঙ্গে পড়ার ঘটনাটি ১৮ তারিখের জনকণ্ঠের প্রথম পাতায় প্রকাশ হয়। এই খবরে এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলীর দফতরসহ জেলা এলজিইডির দফতরে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: