মায়াপথ
সোহরাব পাশা
সন্ধে নামেনি তখনো
পাখিরাও ডানায় খোঁজেনি ফেরার ভাষা
ছায়ার ওপাশে জল অথই সাঁতার
অন্ধ শীত বুনো আঁধারের মায়াপথ
আলো কুড়ানো হয় না আর মেয়েটির
ফুল খোঁজে, কিছু বিস্মৃতির ভুল খোঁজে
দেহে নিভৃতির অসংকোচ সরিয়ে
নিরালায়,
সে কি শবরী বালিকা, ছিঁড়ে ফেলেছে গুঞ্জারমালা!
গোপন ভাষার ফুল ফোটে,
পেছনে ঝাপটা মারে পাকুড় গাছের নিচে মাতাল দুপুর
এখন সেসব দিন আর বাড়ি নেই;
এই রাজ্যপাট অব্যবহৃত সময়
চশমায় যোগ করা আলো
অবিশ্বাসের বিষাদ, স্বপ্ন ভাঙা দহনের স্মৃতি
সবখানে কী দখল নেবে দীর্ঘ মসৃণ শূন্যতা!
সন্ধ্যে বেলা জানালার আয়নায় অন্য
চোখ খুঁজে নেবে হু হু করা নিঃস্বতার
স্বপ্নগুচ্ছ
ভাগের মানুষ
মাহফুজ রিপন
রানী ভবানীর রাজ প্রাসাদে- বসে আছে কালের খেয়া। জলডুঙ্গি জলধারায় চিৎ সাঁতারে ডুব সাঁতারে ভাসতে থাকে বনলতা। সুলক্ষণার রাজবাড়িতে দেখা দিল ভাগের মানুষ অবাক চোখে দেখি শুধু ছোট তরফ বড় তরফ। কাচারী বাড়ির আমদগুলো নিয়ে গেল ঘড়ির কাঁটা রাস লীলা নাশ হলো রইলো শুধু কথার কথা। বনলতার স্বপ্নগুলো লুটেনিলো ভাগের বাঘে। শরীর শুধু পড়ে রইল বাইজি ঘরের অন্ধকারে। রানী ভবানী- রানী ভবানী কোথায় তোমার গেরস্থালি মানুষগুলো ভাগ হয়েছে! বাঘ হয়েছে, ভাগ হয়েছে! আগুন মুখে গিলে খাবে সভ্যতারই শুভ্রতাকে।
ঝলমলে রোদগুলো হারিয়ে যাচ্ছে
শিউল মনজুর
শীতের কুয়াশায় প্রবেশ করছে বেদনাসিক্ত রোদ। ধীরে ধীরে মরে
যাচ্ছে সবুজপাতা। জড়ো পদার্থ হয়ে যাচ্ছে, বৃক্ষগুলো। কোনো কোনো
বাড়ির দরজা জানালা লেগে যাচ্ছে দ্রুত। আজ তোমার হাত ছুঁয়ে দেখি,
ভীষণ ঠা-া হয়ে যাচ্ছো তুমি আর তোমার পাপড়ির মতো কোমল
আঙুলগুলো ধুলোবালির মতো খসখস শব্দে যেন খুব বেশি বিরক্ত।
লক্ষ করি নতুন কেনা কার্ডিগানে প্রবেশ করছে তোমার সজীবতা ও
অনুভব। তুমি লুকিয়ে যাচ্ছো টাইটানিক জাহাজের মতো গভীর
কুয়াশায়। অন্যদিকে আমার ছাদ থেকে ঝলমলে রোদগুলো কীভাবে
যেন হারিয়ে যাচ্ছে... অনন্ত নীরবতায়!
নিঃস্ব বৃক্ষ
মামুন খান
বৃক্ষ কতো পাতা হারিয়েছে
রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, জীবনানন্দ
কতো জল কালে অকালে
নদীর বুক ভেঙে বয়ে গেছে
নিঃস্ব হয়েছে নক্ষত্রে ভরা আকাশ
আব্দুর রাজ্জাক, আহমদ শরীফ, আহমদ ছফা
জ্ঞানের তপোবন থেকে বৃন্তচ্যুত পত্র
অলীক মেঘেরা খরা দহে
আর্য বিধৌত প্রফুল্ল মৃত্তিকা
দু’ফোঁটা সান্ত¡নার বাক্যমাত্র
ভরা যমুনা মরূদ্যান
রাত্রির কালা পাহাড় ভেঙে পড়েছে
আমরা শকুন, জাতির পিতার অস্তিত্ব গিলেছি
হে মহাকাল
আমাদের ক্ষমা করো না
নিঃস্ব বৃক্ষের জ্বলন্ত অভিশাপ
বহু শাসকের কর্দমাক্ত মাটি
এখনো করুণায় অন্ন জোগায়
কেবল থুতু আর ঘৃণাই যাদের প্রাপ্য
গাঙ্গেয় ব-দ্বীপে এখনও সান্ধ্যসঙ্গীত বাজে।
সুবর্ণভোর
সঞ্জয় দেবনাথ
গতরাতে স্বপ্ন এসেছিল
আলগোছে ছুঁয়ে দেখেছি
অনুভূতি রয়ে গেছে চুপিসারে।
স্বপ্নরা সম্ভ্রম হারায় না
ফুলের সুবাস জড়িয়ে
ওঁৎ পেতে থাকে হৃদয়ে হৃদয়ে।
অপেক্ষার চাবুকে ন্যুব্জ স্বপ্ন
তবু হবে স্বপ্নের জয়োৎসব, সাম্যময় সুবর্ণভোর।
শীর্ষ সংবাদ: