ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জিতে প্রামাণ করেছি, বললেন চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা

‘ক্রিকেটে কাগজ-কলমের হিসাব সব সময় সত্যি হয় না’

প্রকাশিত: ০৬:৩৪, ১৭ ডিসেম্বর ২০১৫

‘ক্রিকেটে কাগজ-কলমের হিসাব সব সময় সত্যি হয় না’

মিথুন আশরাফ ॥ বিপিএলের তৃতীয় আসরে চ্যাম্পিয়ন হয় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। প্রথমবারের মতো অংশ নিয়ে শিরোপা জিতে। কুমিল্লার অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা তো টানা তিনবার চ্যাম্পিয়ন হলেন। ঢাকার হয়ে দুইবার, কুমিল্লার হয়ে একবার চ্যাম্পিয়ন হলেন। হ্যাটট্রিক শিরোপা নিজের হাতে তুললেন। এবার যে কুমিল্লা চ্যাম্পিয়ন হয়েছে, তাতে সবাই আশ্চর্য্যই হয়েছেন। দলটি যে ছিল সাদামাটা। মাশরাফি তাই বললেন, ‘আমিও আগেও বলেছি, এখনও বলছি, ক্রিকেটে কাগজ-কলমের হিসাব সব সময় সত্য হয় না। আমরা সেটাই প্রমাণ করেছি। আর এর জন্য অবশ্যই ওপরওয়ালা আর টিম ম্যানটাদের ধন্যবাদ জানাতেই হয়।’ তাই বলে ইমরুল কায়েস ও অলক কাপালীদের নৈপুণ্যকেও খাটো করছেন না মাশরাফি। ইমরুল শেষে এসে ধারাবাহিক নৈপুণ্য করেছেন। আর কাপালী তো ফাইনাল ম্যাচেই জিতিয়েছেন। বলেছেন, ‘সবচেয়ে বড় ধন্যবাদটা অবশ্যই অলকের প্রাপ্য। এর বাদে ইমরুলের কথাও মনে রাখতে হবে। ব্যাটিংয়ে ভাল সূচনাটা কিন্তু ইমরুলই এনে দিয়েছিল।’ শাহরিয়ার নাফীস ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ চতুর্থ উইকেটে ৮১ রানের জুটি গড়ে বরিশালকে ১৫৬ রানে যাওয়ার রাস্তা তৈরি করে দেন। ফাইনালে সেকুগে প্রসন্ন শুরুতেই ধুমধারাক্কা ব্যাটিং করে ৩৩ রান করেন। এরপর শাহরিয়ার ৪৪ রানে অপরাজিত থাকেন। ৪৮ রান করে আউট হন মাহমুদুল্লাহ। এ রান অতিক্রম করতে গিয়ে ইমরুলের ৫৩, কাপালীর অপরাজিত ৩৯ ও আহমেদ শেহজাদের ৩০ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে ১৫৭ রান করে ম্যাচ জিতে কুমিল্লা। শিরোপাও জিতে নেয়। শেষ বলে গিয়ে ১ রানের প্রয়োজন থাকে। কাপালী তা নিয়ে নেন। কুমিল্লার মতো বরিশালও সাদামাটা দলই ছিল। ক্রিস গেইল আসায় শক্তি বেড়েছে। তবে ফাইনালে কিন্তু কোনভাবেই শক্তিকে এগিয়ে ছিল না বরিশাল। এমন দলটিকে ফাইনালে এনেছেন মাহমুদুল্লাহ। আবার ফাইনালেও দুর্দান্ত নৈপুণ্য দেখিয়েছে বরিশাল। আর তাই তো মাহমুদুল্লাহর প্রশংসাও করতে ভুলেননি মাশরাফি। বলেছেন, ‘রিয়াদের অধিনায়কত্ব দেখে আমি বিস্মিত। আগের ম্যাচগুলোতেও সে দলকে দুর্দান্তভাবে নেতৃত্ব দিয়েছে।’ বিপিএলে প্রথমবার অংশ নিয়ে, প্রথমবারেই বাজিমাত করেছে। প্রথমবারেই সাদামাটা দল গড়ে। সেই দল নিয়েই চ্যাম্পিয়ন হয়ে যায়। আইকন ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মর্তুজা, দেশী ক্রিকেটারদের মধ্যে ইমরুল কায়েস, কামরুল ইসলাম রাব্বি, লিটন কুমার দাস, মাহমুদুল হাসান, আবু হায়দার রনি, আরিফুল হক, ধীমান ঘোষ, নাঈম ইসলাম জুনিয়রকে নেয় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। বিদেশী ক্রিকেটারদের মধ্যে পাকিস্তানের আহমেদ শেহজাদ, শ্রীলঙ্কার নুয়ান কুলাসেকারা, ওয়েস্ট ইন্ডিজের সুনীল নারাইন, আন্দ্রে রাসেল, মারলন স্যামুয়েলস, ক্রিসমার সানটোকি, ড্যারেন স্টিভেন্স, আসহার জাইদি ও শোয়েব মালিককে দলে ভেড়ায় কুমিল্লা। শুরুতে মনে হচ্ছিল, এ দলটি আর কতদূর যাবে? তারকা ক্রিকেটার বলতে শুধু মাশরাফি, স্যামুয়েলস, মালিককেই নেয় দলটি। কিন্তু এমন একজন দলে আছেন, যার ছোঁয়াতেই কুমিল্লা এখন চ্যাম্পিয়ন দল। তিনি মাশরাফি বিন মর্তুজা। দলকে এমনভাবে ‘ইউনিট’ করে তুলেছেন, শিরোপাই জিতে নেন। ইনজুরিতে থাকা সত্ত্বেও মাশরাফি শুধু মাঠে উপস্থিত থেকে নেতৃত্ব দিয়েই দলকে জেতাতে থাকেন। অথচ দলটি যখন সাদামাটা দল গড়ে এবং প্রথম ম্যাচেই ঢাকা ডায়নামাইটসের কাছে ৬ উইকেটে হারে, তখন ‘গেল-গেল’ রবই উঠে। কিন্তু দ্বিতীয় ম্যাচ থেকেই বদলে যায় কুমিল্লা। যাদের কেউ সেভাবে চিনত না, তাদের সম্বন্ধে জানত না, সেই রনি, জাইদিরাই হয়ে ওঠেন বিপিএলের সেরা ক্রিকেটারদের একেকজন। তাতে করে দ্বিতীয় ম্যাচ থেকে টানা তিন জয় পায় কুমিল্লা। আবার একটি ম্যাচ হেরে আবার তিন জয় পায়। মাঝে একটি করে হার হয়, এরপর টানা জয় পায়। প্রথম ৮ ম্যাচের ৬টিতেই জয় পায় কুমিল্লা। সবার আগে শেষ চারে খেলা নিশ্চিত করে নেয়। পরের ২ ম্যাচের ১টিতেও জয় পেয়ে লীগ পর্বে পয়েন্ট তালিকার সেরা দল হয় মাশরাফির দল। ১০ ম্যাচের ৭টিতেই জয় পায় কুমিল্লা। এতটাই ছন্দ খুঁজে পায় কুমিল্লা, প্রথম কোয়ালিফায়ারে রংপুরকে পাত্তাই দেয়নি। ৭২ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়ে সবার আগে ফাইনালে খেলাও নিশ্চিত করে নেয়। ফাইনালে কুমিল্লার প্রতিপক্ষ থাকে বরিশাল বুলস। যে দলটিকে লীগ পর্বে দুইবার মুখোমুখি হয়ে দুইবারই হারিয়েছে কুমিল্লা। ফাইনালেও হারিয়ে দেয়। শিরোপা জিতে নেয়। সাদামাটা একটি দলকে চ্যাম্পিয়ন করানোয় মাশরাফিও বলতে পারছেন, ‘ক্রিকেটে কাগজ-কলমের হিসাব সব সময় সত্যি হয় না, তা প্রমাণ করেছি।’
×