ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

রুশ অবস্থান মেনে নিলেন কেরি ॥ মস্কোয় পুতিন ও লাভরভের সঙ্গে বৈঠক

আসাদ ক্ষমতায় থাকবেন

প্রকাশিত: ০৬:১৫, ১৭ ডিসেম্বর ২০১৫

আসাদ ক্ষমতায় থাকবেন

সিরীয় প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের ভাগ্য তার নিজস্ব জনগণের হাতেই নির্ধারিত হবে রাশিয়ার দীর্ঘদিনের এ দাবি মেনে নিলেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি। যখন ওয়াশিংটন ও মস্কো সিরীয় গৃহযুদ্ধের অবসান ঘটানোর উপায় নিয়ে তাদের কয়েক বছরের মতানৈক্য দূর করার পথে ধীরে ধীরে অগ্রসর হচ্ছে, তখন কেরি মঙ্গলবার এ মনোভাব ব্যক্ত করলেন। যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া বলেছে, সিরীয় শান্তিপ্রক্রিয়া অনুমোদন করে জাতিসংঘের একটি প্রস্তাব পাস করতে বিশ্বশক্তিগুলো শুক্রবার নিউইয়র্কে বৈঠকে মিলিত হবে। এর আগে কেরি মস্কোতে তার রুশ প্রতিপক্ষ সের্গেই লাভরভ এবং প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের সঙ্গে আলোচনায় মিলিত হন। খবর বিবিসি ও ইয়াহু নিউজের। পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের পর রুশ রাজধানীতে কেরি সাংবাদিকদের বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও এর অংশীদাররা তথাকথিত শাসক পরিবর্তন চাচ্ছে না। চলতি সপ্তাহের শেষদিকে সিরীয় প্রশ্নে এক বড় ধরনের আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে বলে কেরি ঘোষণা করেন। কেরি মার্কিন অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, আসাদ সিরিয়ায় চার বছরেরও বেশি সময় ধরে চলমান সংঘাতের অবসান ঘটাতে পারবেন না। পশ্চিমা দেশগুলো মানবাধিকারের ব্যাপক লঙ্ঘন এবং রাসায়নিক অস্ত্রের হামলা চালানোর দায়ে আসাদকে অভিযুক্ত করে থাকে। কিন্তু আসাদের প্রধান আন্তর্জাতিক সমর্থক রাশিয়ার সঙ্গে একদিনের আলোচনার পর কেরি বলেন, এখন আসাদ সম্পর্কে অবিলম্বে কি করা যাবে বা যাবে না সে সম্পর্কিত আমাদের মতপার্থক্যের দিকে দৃষ্টি দেয়া হচ্ছে না। বরং যেখানে সিরীয়রাই সিরিয়ার ভবিষ্যত সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেবেÑ এমন এক শান্তিপ্রক্রিয়ার পথ সুগম করার দিকে দৃষ্টি দেয়া হবে। যখন মধ্যপ্রাচ্যে ইসলামিক স্টেটের প্রভাব ক্রমশ বৃদ্ধি পাওয়ার বিষয়টি আলোচনায় প্রাধান্য পাচ্ছে, তখন কেরির ঘোষণায় গত কয়েক মাস ধরে আসাদ সম্পর্কিত মার্কিন নীতির বিবর্তন স্পষ্ট রূপ নিল। প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা প্রথম ২০১১ সালের গ্রীষ্মকালে আসাদকে ক্ষমতা ছাড়ার আহ্বান জানান। সেই সময় থেকে যুক্তরাষ্ট্র আসাদকে অবশ্যই সরতে হবে বলে অনবরত দাবি জানিয়ে এসেছে। পরে আমেরিকান কর্মকর্তারা রাজনৈতিক পরিবর্তনের প্রথম দিনই তাকে পদত্যাগ করতে হবে বলে মেনে নেন। এখন আসাদ কখন ক্ষমতা থেকে বিদায় নেবেন তা কেউই বলতে পারবেন না। এর বিপরীতে রাশিয়া সব সময়ই একই অবস্থান বজায় রেখেছে। রাশিয়ার দৃষ্টিভঙ্গি হলো, কোন বিদেশী সরকারই আসাদের পদত্যাগ দাবি করতে পারে না এবং সিরীয়দের তাদের নেতৃত্ব নিয়ে নিজেদের মধ্যেই আলোচনা করতে হবে। সেপ্টেম্বরের শেষদিক থেকে রাশিয়া সিরিয়ায় সন্ত্রাসী ও বিদ্রোহীদের লক্ষ্য করে বোমাবর্ষণ করছে। পশ্চিমারা একে আসাদ সরকারকে শক্তিশালী করার চেষ্টা বলে অভিহিত করে থাকে। কেরি বলেন, কাউকে একজন একনায়কের শাসনে থাকা বা সন্ত্রাসীদের হাতে নির্যাতিত হওয়ার মধ্যে কোন একটা বেছে নিতে বাধ্য করা উচিত নয়। তবে তিনি শান্তি আলোচনা শুরু হলেই আসাদকে অবশ্যই ক্ষমতা ছাড়তে হবে সিরীয়বিরোধী পক্ষের এ দাবিকে স্পষ্টতই সফল হওয়ার সম্ভাবনা নেইÑ এমন অবস্থান বলে বর্ণনা করেন। এর আগে ক্রেমলিনে পুতিন রাশিয়া এবং এর সাবেক ঠা-া লড়াই যুগের বৈরী যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার কয়েকটি অমীমাংসিত ইস্যুর কথা উল্লেখ করেন। আসাদ ছাড়াও এসব ইস্যুর মধ্যে রয়েছে সিরিয়ার কোন কোন বিদ্রোহী দলকে রাজনৈতিক পরিবর্তন প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে দেয়া হবে এবং কোন কোন দলকে ইসলামিক স্টেট ও আল কায়েদার মতো সন্ত্রাসী হিসেবে গণ্য করা হবে সেই ইস্যু। লাভরভ বলেন, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র সিরীয়বিরোধী পক্ষের প্রতিনিধি দল গঠনের মতো বিরোধপূর্ণ ইস্যুতে কাজ করে যাচ্ছে। কেরি বলেন, তারা সন্ত্রাসী দলগুলোর মতবিষয়ে কিছু মতৈক্যে পৌঁছেছে। লাভরভ বলেন, নিউইয়র্কে শুক্রবার অনুষ্ঠেয় বৈঠকে গত মাসে ভিয়েনায় সম্মত হওয়া শান্তিপ্রক্রিয়ার নীতিগুলো পুনর্ব্যক্ত করে জাতিসংঘের এক প্রস্তাব পাস করা হবে। তিনি কেরির সঙ্গে আয়োজিত ওই যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ভাষণ দিচ্ছিলেন।
×