ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নারীর কারণে কমছে দারিদ্র্য

প্রকাশিত: ০৬:০৯, ১৭ ডিসেম্বর ২০১৫

নারীর কারণে কমছে দারিদ্র্য

‘সংসার সুখের হয় রমণীর গুণে’- এই আপ্তবাক্যটির সত্যতা মিলেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) পরিচালিত এক জরিপে। বিবিএস পরিচালিত সর্বশেষ গৃহস্থালি বা খানা আয়-ব্যয় জরিপ বিশ্লেষণ করে দেখা যায় নারী পরিচালিত পরিবারগুলোর দারিদ্র্যের হার পুরুষ পরিচালিত পরিবারগুলোর তুলনায় কম। যে পরিবারের প্রধান নারী সেই পরিবারে দারিদ্র্যের হার কমে এবং ক্রয়ক্ষমতা বাড়ে। তথ্য হিসেবে এটি যে অভিনব ও চমকপ্রদ তাতে কোন সন্দেহ নেই। বাংলাদেশে নারী পরিচালিত পরিবারের সংখ্যা কত, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোন পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি। তবে মোটের ওপর বলতেই হয় যে, কয়েকটি মাতৃতান্ত্রিক ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর কথা বাদ দিলে সমতলের অধিকাংশ পরিবারই পিতৃতান্ত্রিক। প্রধানত পুরুষের আয়-উপার্জন ও রোজগারের ওপর নির্ভরশীল। সেসব পরিবারের এমনকি সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় পুরুষের ভূমিকাই প্রধান। তবে এ কথাও সত্য যে, সময় ও চাহিদার অনিবার্য প্রয়োজনে বাংলাদেশের নারীরা রাজনীতি-অর্থনীতি-শিক্ষা-দীক্ষাসহ নানা ক্ষেত্রে এগিয়ে এসেছে অনেকাংশে। অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা অর্জনের ক্ষেত্রেও নারীর অগ্রগতিকে অস্বীকার করা যাবে না। এর বাইরেও নারী-পুুরুষের বিভিন্ন কর্মস্থলে থাকার সুবাদে এবং প্রবাসে কর্মরত বাংলাদেশীদের পরিবারের ক্ষেত্রে সংসার পরিচালনাসহ সিদ্ধান্ত গ্রহণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন নারীরাই। আর্থিক সক্ষমতা, আয়-ব্যয়, হাট-বাজার, শিক্ষা-স্বাস্থ্য, সর্বোপরি সুবিধা-অসুবিধা, সমস্যা-সঙ্কট মোকাবেলায় দেখা যায়, পুরুষের তুলনায় নারীরাই সফল হচ্ছে বেশি সংসার পরিচালনায়। এখানে ‘নারী পরিচালিত পরিবার’-এর সামান্য ব্যাখ্যা দেয়া আবশ্যক। বিষয়টি সরাসরি পরিবারের উপার্জনের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। নারী নিজে আয় করতে পারলে তো ভাল। না করলেও অসুবিধা নেই। তবে এসব পরিবারেও সাধারণত নারীকেই ‘প্রধান’ হিসেবে গণ্য করা হয়ে থাকে। বিষয়টি ঠিক প্রচলিত সমাজ কাঠামোতে স্বীকৃত না হলেও নারীর ব্যবস্থাপনায়ই সংসার চলে বিধায় বলা চলে নারী পরিচালিত পরিবার। সাধারণভাবে নারী পরিচালিত পরিবারগুলোর ভালভাবে চলার অবশ্য কারণও আছে। নারীরা স্বভাবতই মায়ের জাত। পরিবারের সব সদস্যের মন-মানসিকতা, চাওয়া-পাওয়া-আশা-আকাক্সক্ষা এমনকি সমস্যা ও সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে সে সুবিদিত। এ ক্ষেত্রে পুরুষেরা রোজগার ও আয়-উপার্জনের নিমিত্ত অধিকাংশ সময় বাইরে অতিবাহিত করতে বাধ্য থাকায় পরিবারের সার্বিক চাহিদায় সম্পৃক্ত থাকতে পারেন না তেমনভাবে। ফলে তিনি সর্বদাই সংসারের রাশ টেনে ধরতে পারেন না। এর পাশাপাশি এটাও বলতেই হয় যে, নারীরা তুলনামূলকভাবে মিতব্যয়ী। তিনি আয়-উপার্জনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সংসার ব্যয় নির্বাহ করতে অধিকতর পারঙ্গম। পরিবারের সব সদস্যের সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকায় এবং চাওয়া-পাওয়া সম্পর্কে সম্যক জানার ফলে খাদ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আনুষঙ্গিক ব্যয় নিষ্পন্ন করা তার পক্ষে সম্ভব সুচারুভাবে। পুরুষ প্রধান প্রায়ই এক্ষেত্রে খেই হারিয়ে ফেলে। ফলে সংসারে অশান্তি ও খিটিমিটি লাগে প্রায়ই। অন্যদিকে নারীরা অনেক ক্ষেত্রে মুখবুুজেই মেনে নিতে বাধ্য হন। আর যাই হোক, নারীর সহিষ্ণুতা তো সুবিদিত। তারপরও বলতে হয়, নারী-পুরুষ একে অপরের পরিপূরক। একা নারী কিংবা পুরুষ কখনোই ‘সম্পূর্ণ’ হয়ে ওঠে না অথবা বিকশিত হয় না। বরং একে অপরকে বোঝা, সমঝোতা ও সহযোগিতার মাধ্যমেই সংসারে সুখ-শান্তি নিশ্চিত করা সম্ভব। এমনকি দারিদ্র্য কমাতেও তা পালন করে সহায়ক ভূমিকা। অন্তত বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি সেই সাক্ষ্যই বহন করে।
×