ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দেশকে অস্থিতিশীল করতেই বিদেশী নাগরিক হত্যা

প্রকাশিত: ০৬:৫৪, ১৬ ডিসেম্বর ২০১৫

দেশকে অস্থিতিশীল করতেই বিদেশী নাগরিক হত্যা

মানিক সরকার মানিক, রংপুর ॥ জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) নতুন করে সক্রিয় ও সংগঠিত হচ্ছে রংপুর-দিনাজপুর অঞ্চলে। এতে করে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বৃহত্তর এ দুই জেলা। জাপানী নাগরিক হোসি কুনিওসহ রংপুর-দিনাজপুরে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ৬টি ঘটনাই ঘটিয়েছে জেএমবির সদস্যরা। সোমবার রাতে রংপুরের চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ বিষয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীও দিয়েছে গ্রেফতার জেএমবির এহসার সদস্য এসাহাক আলী। সে নিজেকে অস্ত্রের জিম্মাদার বলেও স্বীকার করেছে। মঙ্গলবার পুলিশের রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি তার কার্যালয়ে প্রেস বিফ্রিংয়ে হোসি কুনিও হত্যাসহ সাম্প্রতিক ঘটে যাওয়া ঘটনার অগ্রগতিসহ জেএমবি তৎপরতার সামগ্রিক বিষয়গুলো তুলে ধরেন। আট জেলার পুলিশ সুপারদের উপস্থিতিতে ডিআইজি হুমায়ুন কবীর জানান, জাপানী নাগরিক হোসি কুনিওসহ রংপুর এবং দিনাজপুরের সবগুলো ঘটনাই এরা ঘটিয়েছে। গত ২ ডিসেম্বর পীরগাছার কল্যাণী ইউনিয়নের টাঙ্গাইল পশুয়া পাড়া থেকে গ্রেফতার করা হয় মাসুদ রানাকে। সে রংপুরের পীরগাছা-কাউনিয়া উপজেলা অঞ্চলের জেএমবি কমান্ডার। সে নিজেই আদালতের কাছে হোসি কুনিওসহ অন্যান্য ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। তার স্বীকারোক্তি প্রেক্ষিতে পরবর্তীতে গ্রেফতার করা হয় এহসার সদস্য এসাহাক আলীকে। সেও সোমবার রাতে আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছে। এছাড়া খয়বার নামে পীরগাছা ইউনিটের কমান্ডারকেও গ্রেফতারের কথা জানান তিনি। তবে তাকে অন্য মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে উল্লেখ করে তিনি জানান, এসব ঘটনায় তারও সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। তারা স্বীকারোক্তি দিয়েছে, দেশে ইসলামের দ্বীন প্রতিষ্ঠা, বিদেশীকে খুন করলে বিশ্বের কাছে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ, অর্থনৈতিকভাবে দেশকে পঙ্গু করা এসব নানা কারণেই এসব ঘটনা ঘটিয়েছে তারা। তিনি জানান, এসাহাক মাসুদ রানার ঘনিষ্ট বন্ধু। তার কাছেই অস্ত্র থাকতো। এক সময় বেশ কিছুদিন ইরাকে ছিল এই এসাহাক। তবে সে সেখানে কোন জঙ্গী প্রশিক্ষণ নিয়েছে কী না তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। সেদিন কুনিও হত্যায় মাসুদ রানাই গুলি করে। এসাহাকের বড় ভাই ইনসান জেএমবির বড় মাপের নেতা ছিল। ২০০৬ সালে তার কাছেই মাসুদ রানা জেএমবির দীক্ষা নিয়ে জেএমবিতে যোগ দেয়। পরবর্তীতে ইনসান লিবিয়ায় চলে যায় এবং সেখানে মৃত্যুবরণ করে। তার পরিবার থেকে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাবার কথা বলা হলেও বিষয়টি নিয়ে তার সন্দেহ রয়েছে বলে জানান ডিআইজি। তিনি জানান, ৫Ñ৬ জনের একটি গ্রুপ সক্রিয়ভাবে সম্প্রতি এ কাজগুলো করে আসছে। তাদের কাছে একে ২২ সহ অত্যাধুনিক অস্ত্র রয়েছে। সেসব তারা উদ্ধার করেছে। এছাড়াও গ্রেনেড তৈরির সরঞ্জাম, ৪৭ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, সাত জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে তারাও জেএমবির সক্রিয় সদস্য। এছাড়া গাইবান্ধার পলাশবাড়ি থেকে ফুয়াদ নামের একজনকে গ্রেফতার করা হয়। তার কাছে ল্যাপটপে পাওয়া গেছে আফগান যুদ্ধের প্রশিক্ষণের নানা কলা কৌশল সম্বলিত ছবি। রংপুর দিনাজপুর এবং গাইবান্ধার পলাশবাড়ির গ্রেফতারকৃতরা প্রত্যেকেই একে অপরের সহযোগী বলেও জানান তিনি। তিনি জানান, জাপানী নাগরিক হত্যা, কাউনিয়ায় মাজারের খাদেম হত্যা এবং বাহাই সম্প্রদায়ের নেতা এবং রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালকের একান্ত সহকারী রুহুল আমিনকে গুলি করে হত্যা চেষ্টার সঙ্গে এরাই জড়িত তা স্পষ্ট করে স্বীকার করেছে তারা।
×