ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রামে রেলের জমি দখলে কর্মচারীরা

প্রকাশিত: ০৬:৫৪, ১৬ ডিসেম্বর ২০১৫

চট্টগ্রামে রেলের জমি দখলে কর্মচারীরা

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রাম-কক্সবাজার বাস্তবায়নাধীন রেল রুটের উভয় দিকে হাজারো বস্তিঘর থাকায় ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে চলমান চট্টগ্রাম-নাজিরহাট-দোহাজারি ট্রেন চলাচল। চট্টগ্রামে রেল কর্মচারীরাই এখন রেল ভূমির অবৈধ দখলদার হিসেবে চিহ্নিত। কর্তৃপক্ষের নজরদারি না থাকায় পিয়ন থেকে শুরু করে উর্ধতন কর্মকর্তা সকলেই রেল ভূমি দখল করে ভাড়া বাণিজ্য গড়ে তুলেছে। রেলের আবাসিক এলাকাগুলোতে শুধু স্ব স্ব নামে বরাদ্দকৃত ঘরের আশপাশই নয়, রেললাইনের পাশে ঝুঁকিপূর্ণ কাঁচাপাকা ঘর তৈরি করেও অবৈধ দখল বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে বছরের পর বছর। শুধু কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীই নয়, অবসরপ্রাপ্তরাও পিছিয়ে নেই রেলভূমি দখল থেকে। রেলের পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান প্রকৌশলীর দফতর সূত্রে জানা গেছে, গত ১ নবেম্বর বিভাগীয় ভূসম্পত্তি দফতরের অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী আবুল হাশেমের বিরুদ্ধ একটি অভিযোগপত্র জমা পড়েছে অত্র দফতরে। ওই অভিযোগে বলা হয়েছে, হাশেমের তত্ত্বাবধানে রয়েছে রেল ভূমির ওপর গড়ে তোলা প্রায় শতাধিক স্থাপনা। ব্যবসা কেন্দ্র থেকে শুরু করে বস্তিঘর পর্যন্ত কোনটিই বাদ নেই। বছরের পর বছর ভাড়া বাণিজ্য চালিয়ে এ কর্মচারী অবসরে গেলেও দখল তৎপরতা থেমে নেই। পাহাড়তলী বাজারের ‘ডি’ ব্লকে ১৩১ নম্বর প্লটে ভুয়া নামে ক্ষতিপূরণের কাগজ তৈরি করে সেমিপাকা দ্বিতল দোকানঘর নির্মাণ করার মতো ঘটনাও ঘটেছে। ওই বাজারের বিভিন্ন দোকানদারের কাছ থেকে অর্থ লেনদেনের মাধ্যমে ক্ষতিপূরণ কাগজ সৃষ্টির অপতৎপরতার অভিযোগ রয়েছে। পশ্চিম মাদারবাড়ি এলাকায় রেলের বিদ্যুত বিভাগের অধীন পাম্প হাউস এলাকায় তার পরিবারের সদস্যদের নামে দুটি প্লটের ক্ষতিপূরণের জাল কাগজ তৈরি করা হয়েছে ফায়দা লোটার উদ্দেশ্যে। এদিকে চট্টগ্রাম পলিটেকনিক হল্ট স্টেশন সংলগ্ন তুলাতুলি রেললাইনের পাশে সেমিপাকা প্রায় ৫০টি বসতঘর তৈরি করা হয়েছে এ কর্মচারীর তত্ত্বাবধানে। মাসে লক্ষাধিক টাকা ভাড়া আদায় হচ্ছে এসব স্থাপনা থেকে। রেললাইনের প্রায় ৫ ফুটের মধ্যেই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে এসব ঘর তৈরি করা হলেও ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না। চট্টগ্রাম-নাজিরহাট-দোহাজারি রেললাইনের পলিটেকনিক হল্ট স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় এ ধরনের প্রায় দু’শতাধিক স্থাপনা রয়েছে রেল কর্মচারীসহ বিভিন্ন অবৈধ দখলদারদের। ওই এলাকার আবু হুরায়রা মাদ্রাসা সংলগ্ন রেলের জায়গায় এ কর্মচারী নিজেও সপরিবারে অবৈধ স্থাপনা তৈরির মাধ্যমে বসবাস করে আসছেন দীর্ঘ প্রায় ৪০ বছর। আরও অভিযোগ রয়েছে, এ কর্মচারী জানালীহাট ও কালুরঘাট এলাকায় ক্ষতিপূরণের জাল কাগজ দিয়ে ওই এলাকায় ১৫টি দোকান বিভিন্ন ব্যবসায়ীর কাছে হস্তান্তর করেছে মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে। ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন, এসব অবৈধ লেনদেনের কারণে ওই সকল স্থাপনা দ্বিতল হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। মূলত রেলের লিজ নেয়া ভূমিতে দ্বিতল ভবন নির্মাণের কোন সুযোগ নেই। বাণিজ্যিক লাইসেন্স প্রদান করা হলেও অবৈধভাবে দ্বিতল করা হয়েছে এসব দোকান। এদিকে এ কর্মচারী ষোলশহর ২ নম্বর গেট সংলগ্ন কর্ণফুলী মার্কেটের পাশে দুটি দোকান নির্মাণ করেছে। রেলের এস্টেট বিভাগের কর্মচারী হওয়ার কারণে এমনকি অবসরে যাওয়ার পর এখনও বিভিন্নভাবে দখলবাজি চালিয়ে আসছেন।
×