ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

কেয়া চৌধুরী

প্রজন্মের জয়ধ্বনি...

প্রকাশিত: ০৬:১৩, ১৬ ডিসেম্বর ২০১৫

প্রজন্মের  জয়ধ্বনি...

লাখো শহীদের রক্তমাখা, সবুজরূপে লাল সূর্য আঁকা, এই তো আমাদের জাতীয় পতাকা। এক সাগর রক্তের বিন্দুু বিন্দুু রক্তের রেখা দিয়ে লেখা আমাদের পবিত্র সংবিধান। বাংলার মাঠে-ঘাটে পরতে পরতে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগ, গৌরবের কত না মুক্তা ছড়ানো। এই তো আমাদের বাংলাদেশ। স্বাধীন বাংলাদেশ বাঙালীর শ্রেষ্ঠ অর্জন। যে অর্জনের মূলে ছিল দেশপ্রেম। মাতৃভূমির প্রতি প্রতিজ্ঞা রক্ষা করা। পৃথিবীর বুকে আর কয়টি দেশ আছে? যে দেশের নিরীহ, নিরপরাধ, নিরস্ত্র জনগণ হয়েও শুধু দেশমাতৃকাকে মুক্ত করার জন্য, জীবন বিলিয়ে দিতে প্রস্তুত হয়েছে। মানুষ হয়ে মানুষ দ্বারা অপমান-লাঞ্ছনা সহ্য করতে না পেরে অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছে। নিরস্ত্র থেকে সশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধা হয়েছে। পৃৃথিবীকে জানান দিয়েছে, বাংলাদেশ নামে একটি রাষ্ট্র মুক্তি সংগ্রামের মধ্য দিয়ে পৃথিবীর মানচিত্রে জন্ম নিতে যাচ্ছে। ১৯৭১ সালের এই গৌরবের কথা আমাদের সবার জানা। সঠিক ইতিহাসের গর্বকে আরও দৃঢ়ভাবে বুকে ধারণ করার ক্ষমতা অর্জন করতে যাচ্ছি আমরা, অন্ধকারকে ভেদ করে আলোর যাত্রী হয়ে। আমরা জেনেছি, আমাদের পূর্ব-পুরুষেরা আমাদের স্বাধীনতার গর্বকে অর্জন করেছেন। মুক্তির সংগ্রামের মধ্য দিয়ে। তাই তো প্রাণ ভরে গাইতে পারি... মুক্তির ও মন্দিরের সুপানোতলে, কত প্রাণ হল বলি দান, লেখা আছে অশ্রুজলে... পাখির কুঞ্জভরা, শীতল ছায়া ঘেরা, একটি নীল আকাশ প্রজন্মকে উপহার দেয়ার জন্য, আমাদের পূর্ব-পুরুষেরা ভয়ঙ্কর দানবের থাবায় রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল একাত্তরে। সদ্য ফোটা একঝাঁক লাল শাপলা ফুল হাতে তুলে দেয়ার জন্য, অচেনা অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিল সেদিন। পেটভরে খাব বলে, দুধে-ভাতে থাকব বলে, শিক্ষার আলোয় সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায়, এক অসমযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন আমাদের পূর্ব-পুরুষেরা। এভাবেই তো নির্মিত হয়েছে বাংলাদেশ। একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধাদের হাজারো রঙিন স্বপ্নে ঘেরা প্রিয় বাংলাদেশ। বাংলার ভাষা, কৃষ্টি, আমাদের সংস্কৃতিকে রক্ষার জন্য জীবনটাকে হাতে মুঠোয় তুচ্ছ করে তুলে দিয়েছিলেন তারা। শুধু একটি উজ্জ্বল দিনের অপেক্ষায়, যে দিনটি ছিল ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১। আর এই সংগ্রামের, এই অর্জনের ইতিহাস তো একদিনের নয়। পাওয়া না পাওয়ার জীবনতরী এই ইতিহাস। দীর্ঘ তেইশ বছরের। মা, মাতৃভাষা, মাতৃভূমির প্রতি আত্মনিবেদিত বাঙালী জাতি, তার আপন সত্তায় বিকাশের ক্ষেত্রে সংগ্রামী হয়েছে কখনও অস্ত্র নিয়ে, কখনও নিরস্ত্র হাতে। প্রতিবাদী হয়েছে, নির্যাতন-লাঞ্ছনা ভোগ করেছে। জীবন দিয়েছে অকাতরে। রক্তের বিনিময়ে স্বাক্ষর রেখেছে, ইতিহাসের পাতায় পাতায়। আর তাই তো আমরা ‘বীর বাঙালী।’ বীর বাঙালীর এই ইতিহাস সাধারণ মানুষের মুক্তির সংগ্রামের ইতিহাস। জীবন ও রক্তের বিনিময়ে লেখা এ ইতিহাস, আজকের প্রজন্মের গৌরবের ধন। যার ক্ষয় নেই। আছে সুবৃদ্ধি, আছে সম্মান। যার ব্যাপকতা দু-চোখ মেলে যতটুকু নীল আকাশ দেখা যায়। স্বাধীনতার ঘোষণা করে, এক সাগর রক্তের বিনিময়ে সৌরভে-গৌরবে যে লাল-সবুজ পতাকা আকাশে পতপত করে উড়ছে, এ তো শুধু একখ- কাপড় নয়। এক সাগর রক্তের প্রতীক এটি। আমাদের পতাকার মর্যাদা প্রজন্মকেই রক্ষা করতে হবে। প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে হবে দেশের সম্মান রক্ষায়। রক্ত দিয়ে নয়, সততা-দক্ষতা, দেশপ্রেম দিয়ে, দৃঢ় প্রতিজ্ঞায় দেশ গড়ার কাজে মন দিতে হবে। গভীর প্রাণের অনুভূতিতে জানতে হবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। তাঁর সোনার বাংলার স্বপ্নকে ছুঁতে হবে। বুকে ধারণ করতে হবে ত্রিশ লাখ শহীদের দেশের জন্য, জীবন দেয়ার ইতিকথা। সকল নির্যাতিত নারী মুক্তিযোদ্ধার স্বপ্নঘরে বাতি জ¦ালাতে হবে আমাদের প্রজন্মকেই। দেশ স্বাধীন হয়েছে, সে তো অনেক দিন আগের কথা। লাল-সবুজের পতাকার দেশে আজ নতুন ইতিহাস সৃষ্টি হচ্ছে। সাকা, মুজাহিদ, কামারুজ্জামানের মতো বিকৃত মানসিকতার নরপশুদের দম্ভ গুঁড়িয়ে দিতে পেরেছি আমরা। তাদের নির্লজ্জের মতো বিজয় চিহ্নিত আঙ্গুলের হেলনিকে আমরা পরাজিত করতে পেরেছি। বাংলার আকাশে, আমরা তরুণরাই, জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু সেøাগান দিয়ে সকল অশুভকে উড়িয়ে দিতে পারি। কারণ আমরা বিজয়ীর সন্তান। একাত্তরে দুঃস্বপ্নের মতো, বেঁচে থাকা, আমাদের শহীদ পরিবারগুলোর সদস্যদের চোখে, স্বপ্নে জেগে ওঠার মতো অবাক করে দিয়ে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় আমরা কার্যকর করতে পেরেছি। ফাঁসি কার্যকরের মধ্য দিয়ে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করে যাচ্ছেন বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা। সঙ্কটের কল্পনাতে জাতি মুহ্যমান হয়নি। শক্তিধর দেশের রক্তচক্ষুকে আমরা ভয় পাইনি। ন্যায্যতার প্রশ্নে বাঙালী জাতি আপোসহীন। একাত্তরের পরে আবারও আমরা তা প্রমাণ করলাম। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছে, হতেই থাকবে। কারণ আমরা জানি, স্বর্গজগত থেকেও সুন্দর আমার দেশ, পবিত্র আমার মাতৃভূমি। মা তোর বদনখানি মলিন হলে আমি নয়ন... মা, মাতৃভূমির মুখ মলিন হয় এমন কোন কিছুর অস্তিত্ব থাকতে পারে না মুক্তিযোদ্ধাদের অর্জিত বাংলায় এ কথা আজ প্রতিষ্ঠিত সত্য। লেখক : সমাজকর্মী ও সংসদ সদস্য
×