ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

চ্যালেঞ্জের মুখে ক্যামেরন ॥ ইইউ সংস্কার পরিকল্পনা

প্রকাশিত: ০৬:১০, ১৬ ডিসেম্বর ২০১৫

চ্যালেঞ্জের মুখে ক্যামেরন ॥ ইইউ সংস্কার পরিকল্পনা

ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকা না থাকা প্রশ্নে ব্রিটেনে জনমত আরও তীব্রভাবে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছে। চলতি সপ্তাহে ব্রাসেলসে ইইউ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের বৈঠক সামনে রেখে পরিচালিত এক জনমত জরিপে বিষয়টি উঠে এসেছে। ইইউ ছাড়ার জন্য ব্রিটেনের ভোটারদের মধ্যে আগ্রহ ক্রমেই বাড়ছে। ভোট লিভ শীর্ষক প্রচারের অংশ হিসেবে আইসিএম (ব্রিটেনভিত্তিক গবেষণা সংস্থা) পরিচালিত জরিপে দেখা গেছে, প্রায় অর্ধেক ভোটার ‘ব্রেক্সিট’ বা ব্রিটেনের ইইউ ত্যাগের ধারণা সমর্থন করেন। ইইউতে থাকতে চান জানিয়েছেন ৪২ শতাংশ ভোটার আর ছাড়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করেছেন ৪১ শতাংশ ভোটার। ইইউ ত্যাগ প্রশ্নে গণভোট বিল গত সপ্তাহে পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ হাউস অব লর্ডসে পাস হয়েছে। এর ফলে ক্যামেরন এখন চাইলে আগামী বছর জুনে গণভোট দিতে পারবেন। স্বাধীন মতামত জরিপ সংস্থাটি জানিয়েছে, ইইউতে থাকা না থাকা প্রশ্নে ব্রিটেনে জনমতের মধ্যে ব্যবধান গত দুই বছরে অনেকটা কমে এসেছে। বর্তমান এই জনমত আধাআধিতে বিভক্ত রয়েছে। জনমত জরিপের ফল ক্যামেরনের জন্য একটি বিব্রতকর বিষয় হতে পারে। কারণ বৃহস্পতিবার ব্রাসেলসে ইইউ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে তিনি বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন। এই বৈঠকে তিনি ইউরোপে আসা অভিবাসীদের ব্রিটেন যেসব সুুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে তা চার বছরের জন্য স্থগিত করার পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলবেন। এখন ধরেই নেয়া হচ্ছে ফেব্রুয়ারির মধ্যেই যেন ইইউ সংস্কারের বিষয়টি চূড়ান্ত করা যায় যে লক্ষ্যে ক্যামেরন কিছু ছাড় দেবেন, কারণ নিজ দেশেই তিনি এখন (ইইউ ইস্যুতে) গণভোটের সম্মুখীন। সব মিলিয়ে ক্যামেরন ইইউতে দর কষাকষির জায়গাটি হারাতে চলেছেন। ব্রিটেন ইইউর সংস্কার চায়। কিন্তু ব্রিটেনের জনগণের মধ্যেই যদি ইইউ ছাড়ার আগ্রহ বাড়তে থাকে তখন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে তখন সংস্কার পরিকল্পনা নিয়ে এগোনো কঠিন হয়ে যায়। পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমন্স মঙ্গলবার এক চিঠিতে সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, ক্যামেরন যে সংস্কারই আনুন না কেন ইইউ বিচারক তা পরে বাতিল করে দেবেন। এদিকে ইইউ সমীক্ষা কমিটি বলেছে, ক্যামেরনের সংস্কার পরিকল্পনা আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক হবে না। ইইউর অন্যতম মূলনীতি চলাফেরার স্বাধীনতা বা একদেশ থেকে অন্যদেশে অবাধে যাতায়াতের স্বাধীনতা। এর ফলে ইউরোপের অভিবাসী শ্রমিকরা ব্রিটেনে কাজ করার সুযোগ পাচ্ছে। আইসিএম ভোটে অংশগ্রহণকারী ৪৫ শতাংশ ভোটার জানিয়েছেন চলাফেরার স্বাধীনতা এখন যেমন আছে সংস্কারের পরও যদি তাই থাকে তবে তারা ইইউ ছাড়তে ইচ্ছুক। অন্যদিকে এ বিষয়ে ৪০ শতাংশ ভোটার জানিয়েছেন তারা ইইউর সঙ্গে থাকতে চান। ভোট লিভ আন্দোলনের প্রধান নির্বাহী ম্যাথিউ ইলিয়ট টেলিগ্রাফকে বলেছেন, ‘আজকে জরিপের ফল দেখিয়ে দিচ্ছে সাধারণ নির্বাচনের পর মানুষের মধ্যে ইইউ প্রশ্নে দৃষ্টিভঙ্গি অনেক পরিবর্তিত হয়েছে।’ তিনি বলেন, ক্যামেরন ইইউ সংস্কার পরিকল্পনাতে এমন কিছু নেই যা সাধারণ ব্রিটিশ নাগরিকদের আশা-আকাক্সক্ষাকে প্রতিফলিত করে। বৃহস্পতিবার ইইউর সঙ্গে ক্যামেরনের পূর্ব নির্ধারিত বৈঠকের আগেই এমন আভাস পাওয়া গেছে যে ওই আলোচনা ফলপ্রসূ হচ্ছে না। গত সপ্তাহে ইউরোপিয়ান কাউন্সিলের সভাপতি ডোনাল্ড টাস্ক বলেছিলেন, ‘ইউরোপের প্রতিটি দেশই ক্যামেরনের প্রস্তাবিত কল্যাণ সংস্কারের বিরোধী।’ ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফিলিপ হ্যামন্ড সোমবার বলেন, অভিবাসী আসা কমে এ বিষয়ে কোন ইইউ নেতাই কোন বিকল্প পরিকল্পনা উপস্থাপন করতে পারেননি। বৃহস্পতিবারের আলোচনার টেবিলে ব্রিটেন ছাড়া আর অন্য দেশ থেকে কোন প্রস্তাব আসেনি। হ্যামন্ড বলেন, ‘অভিবাসীদের ব্রিটেনে আসার পর কল্যাণমূলক প্যাকেজগুলো পেতে অন্তত চার বছর অপেক্ষার যে পরিকল্পনা আমরা তুলে ধরেছি সে ব্যাপারে আপতত কোন নড়চড় হচ্ছে না।’ অভিবাসী ইস্যুতে ইতালি ও জার্মানিও শেষ পর্যন্ত সুর কিছুটা নরম করেছে। Ñটেলিগ্রাফ
×