ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

হ্যাটট্রিক শিরোপা জয়ের সুযোগ মাশরাফির, আজ সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় মিরপুর শেরেবাংলায় শুরু টানটান উত্তেজনার ফাইনাল

শিরোপা কুমিল্লা না বরিশালের ফয়সালা আজ

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৫

শিরোপা কুমিল্লা না বরিশালের ফয়সালা আজ

মিথুন আশরাফ ॥ টানা দুইবার দলকে চ্যাম্পিয়ন করান মাশরাফি বিন মর্তুজা। এবার যখন তৃতীবারের মতো বিপিএল হচ্ছে, এবারও ফাইনালে খেলছেন। তাহলে কী হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়ন হয়ে যাবেন মাশরাফি! প্রথম দুই আসরে নেতৃত্ব দিয়ে ঢাকাকে শিরোপা জেতালেও, এবার মাশরাফির দল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। যে দলটি আজ সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় শুরু হতে যাওয়া ফাইনাল ম্যাচে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের বরিশাল বুলসের মুখোমুখি হবে। যদি জিতে যায় কুমিল্লা, তাহলেই হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়ন হয়ে যাবেন মাশরাফি। প্রথমবারের মতো বিপিএলে অংশ নিয়ে বাজিমাত করবে কুমিল্লাও। মাশরাফি কী পারবেন তা করতে? নাকি প্রথমবারের মতো মাহমুদুল্লাহ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বাদ পাবেন। তা ম্যাচটি শেষ হতেই বোঝা যাবে। মাশরাফি অবশ্য আগেই জানিয়ে দিয়েছেন, যখন খেলেন তখন শীর্ষে থাকার জন্যই খেলেন। বলেছিলেন, ‘যে পর্যায়ের ক্রিকেটই হোক না কেন, পেশাদার ক্রিকেটার হিসেবে সব সময়ই লক্ষ্য থাকে শীর্ষে যাওয়ার।’ সেই শীর্ষে যাওয়া মানেই হচ্ছে শিরোপা জেতা। তাই যদি হয় তাহলে হ্যাটট্রিক শিরোপা শোভা পাবে মাশরাফির হাতেই। বরিশালের অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ’র দৃষ্টিও আছে শিরোপাতেই। যেহেতু ফাইনালে উঠে গেছেন, শিরোপাও ঘরে তুলতে চান। বলেছেন, ‘আমরা দল হিসেবে ভাল ক্রিকেট খেলেছি। আরেকটি ম্যাচ আছে এখন। আশা করি, সেটিতেও ভাল কিছু করব। দলের সবাই খুশি। তবে সেই খুশি আরও বেড়ে যাবে যদি ফাইনালেও জিততে পারি।’ বোঝাই যাচ্ছে, কুমিল্লাকে কোন ছাড় নয়। এমন মুুহূর্তে এসে ছাড় দেয়ার প্রশ্নও আসে না। কোন দলই প্রতিপক্ষকে ছাড় দেয় না। কিন্তু ম্যাচটিতে নামার আগে কুমিল্লার চেয়ে পিছিয়ে থাকছে বরিশালই। দলের সেরা ব্যাটসম্যান ক্রিস গেইল যে নেই। যদিও গেইলকে ছাড়াই দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার ম্যাচে রংপুর রাইডার্সকে যেভাবে হারিয়েছে বরিশাল, তাতে যে কোন দলকেই হারাতে পারে। সাব্বির রহমান রুম্মন যে ‘গেইল’ হয়ে গিয়েছিলেন, তা আজও হলে কুমিল্লার জন্য বিপদই আছে। ৪৯ বলে ৭ চার ও ৩ ছক্কায় করা সাব্বিরের ৭৯ রানের ইনিংসে রংপুরের গড়া ১৬০ রানকে টপকে জিতে যায় বরিশাল। এরসঙ্গে শাহরিয়ার নাফীস দুর্দান্ত খেলেছেন। মাহমুদুল্লাহর সঙ্গে আছেন ‘হার্টহিটার’ রায়াদ এমরিট ও কেভন কুপার। ব্যাটিংয়ে দুর্দান্ত বরিশাল। সঙ্গে বোলিংয়ে মোহাম্মদ সামি, আল আমিন হোসেন, কুপার ছন্দে আছেন। যদি এভিন লুইসকে নামায় বরিশাল, আর ধুন্ধুমার ব্যাটিং শুরু করে দেন এবারের আসরের একমাত্র সেঞ্চুরিয়ান; তাহলে বাড়তি পাওনাই হয়ে যাবে। এরপরও কুমিল্লাই এগিয়ে থাকছে। দলটি যে একটি ‘ইউনিট’ হয়ে গেছে। যখন কোন দল ‘ইউনিট’ হয়ে যায়, তখন জয় তাদের হাতেই ধরা দেয়। ছন্দ পাওয়ার অপেক্ষা থাকে না, তা আপনাআপনিই দলকে ঘিরে ধরে। তার প্রমাণ প্রথম কোয়ালিফায়ার ম্যাচে রংপুরের বিপক্ষে মিলেছেও। রংপুরের বিপক্ষে ১৬৩ রান গড়েছিল কুমিল্লা। অথচ ১১২ রানেই ৪ উইকেট হারিয়েছিল। ৬৭ রান করা ইমরুল কায়েস ও ২৮ রান করা লিটন কুমার দাসের ছন্দ ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছিল। তখন মনে হয়েছিল, ১৫০ রানও অতিক্রম করতে পারবে না। এমন সময় একজন ব্যাটসম্যানকে হাল ধরার দরকার ছিল। একটি দল যখন ছন্দে থাকে, মানসিকভাবে শক্তিশালী থাকে, তখন কেউ না কেউ প্রয়োজনের মুহূর্তে ঠিকই জ্বলে উঠেন। ঠিক তাই হলো। জ্বলে উঠলেন জাইদি। ১৫ বলে ৪ চার ও ২ ছক্কায় অপরাজিত ৪০ রান করে দলকে অনেক দূর নিয়ে যান। যেখানে বড় স্কোর হওয়ার কোন সম্ভাবনা ছিল না, সেখানে রংপুরকে শুরুতেই চাপে ফেলে দেয় কুমিল্লা। এ চাপের ভারে মাথা নত করতে বাধ্য হয় সাকিবের দল রংপুর। কুমিল্লার চেয়ে শক্তিশালী দল হয়েও কিছুই করতে পারেনি। অসহায় আত্মসমর্পণ করতে হয়েছে। এবার বিপিএলে একজন পেসারের আবিষ্কার ঘটেছে। তার নাম-আবু হায়দার রনি। কুমিল্লাতেই খেলেন। সর্বোচ্চ উইকেটশিকারিও। চতুর্থ ওভারেই ২ উইকেট নিয়ে নেন রনি। এরপর অষ্টম ওভারে গিয়ে আবার জাইদি বোলিং তা-ব দেখান। ২ উইকেট নিয়ে নেন। এরমধ্যে সাকিবও আউট হয়ে যান। ৪৫ রানেই গুরুত্বপূর্ণ ৪ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে যায় রংপুর। শেষে ৯১ রানেই অলআউট হয়ে যায়। ৭২ রানের বড় ব্যবধানে জিতে কুমিল্লা। সবার আগে ফাইনালেও খেলা নিশ্চিত করে নেয়। ‘ইউনিট’ হওয়ার ফল পায় কুমিল্লা। সাদামাটা একটি দল হয়েও ফাইনালে খেলছে কুমিল্লা। মাশরাফির ছোঁয়ায় বাংলাদেশ দল যেমন বদলে গেছে। তেমন করে কুমিল্লাও বদলে গেছে। ধীরে ধীরে সবাই ভাল খেলতে শুরু করেন। ব্যাটসম্যানদের মধ্যে ইমরুল কায়েস, লিটন কুমার দাস, আসহার জাইদি, আহমেদ শেহজাদ, অলক কাপালীরা যে কোন প্রতিপক্ষের বিপক্ষে এখন হাল ধরার যোগ্যতা রাখেন। আর বল হাতে আবু হায়দার রনি তো এ টুর্নামেন্টেরই সেরা বোলার। নুয়ান কুলাসেকারাও আছেন। মাশরাফি নিজেও ইনজুরি থাকা সত্ত্বেও প্রয়োজনে বল হাতে নিচ্ছেন। আর জাইদি যে এত ভাল খেলে দিচ্ছেন, তা দেখে মাশরাফি নিজেই তো অবাক! তবে ফাইনাল ম্যাচে খেলবেন না আন্দ্রে রাসেল। যা কুমিল্লাকে একটু হলেও সমস্যায় ফেলতে পারে। অবশ্য কোন সমস্যাই এখন কুমিল্লার কাছে সমস্যা নয়। মাশরাফির ছোঁয়ায় যে একটি ‘ইউনিট’ হয়ে গেছে কুমিল্লা। সাদামাটা দল থেকে হয়ে গেছে শক্তিশালী দল। বদলে গেছে। যেই বদলের হাওয়া ফাইনালেও লেগে যেতে পারে। তাতে করে বরিশালও উড়ে যেতে পারে। লীগ পর্বে কুমিল্লার বিপক্ষে দুই ম্যাচ খেলে দুটিতেই হেরেছে বরিশাল। এবারও যদি বরিশালের হার হয়, হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়ন হয়ে যাবেন মাশরাফি। প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন হওয়ার খায়েশ পূরণ হবে না মাহমুদুল্লাহর। পারবেন হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়ন হতে মাশরাফি?
×