স্টাফ রিপোর্টার ॥ বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেছেন, স্বাধীনতার পর থেকে দাবি উঠেছে, বুদ্ধিজীবী হত্যাকারীদের বিচার চাই। সেই দাবি ৪৪ বছর পর পূরণ হয়েছে। এখন শহীদ বুদ্ধিজীবীদের অনুসরণে জাতি গঠন করতে হবে। তবে যুদ্ধাপরাধ বা বুদ্ধিজীবী হত্যার বিচার এখনো শেষ হয় নি। পাকিস্তানের ১৯৫ জন চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীর বিচার করার উদ্যোগ নিতে হবে বাংলাদেশকেই। বিদ্যমান আইনে বাংলাদেশেই অথবা আন্তর্জাতিক আদালতে ওই ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধীকে বিচারের মুখোমুখি করা যেতে পারে। এজন্য আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা জোরদার করতে হবে।
সোমবার রাজধানীতে ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটিতে (ডিআরইউ) ‘স্বজনদের স্মৃতিতে শহীদ বুদ্ধিজীবী’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এসব কথা বলেন। একই অনুষ্ঠানে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্বজনরা যুদ্ধাপরাধী সাকা চৌধুরী ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের ফাঁসি কার্যকরে সন্তোষ প্রকাশ করেন। একই সঙ্গে বুদ্ধিজীবী হত্যা ও যুদ্ধাপরাদের দায়ে অভিযুক্ত চৌধুরী মঈনুদ্দিন ও আশরাফুজ্জামান খানকে বিদেশ থেকে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করার দাবি জানান। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে ডিআরইউ প্রথমবারের মতো এ ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজন করে। ডিআরইউ সভাপতি জামাল উদ্দিন এতে সভাপতিত্ব করেন। অনুষ্ঠানে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্বজনদের পাশাপাশি বক্তব্য রাখেন মুক্তিযোদ্ধা ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল বীরপ্রতীক, পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) সদস্য মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ড. আনোয়ারা বেগম, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি মুহাম্মদ শফিকুর রহমান, ডিআরইউ সাবেক সভাপতি শাহেদ চৌধুরী, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক রাজু আহমেদ, সহ-সভাপতি শরীফুল ইসলাম প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে রাশেদ খান মেনন বলেন, জামায়াত ও তার প্রভূ পাকিস্তান শুরু থেকেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে আসছে। তারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গে বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে স্বাক্ষরিত সিমলা চুক্তির ভুল ব্যাখ্যা দিচ্ছে। চুক্তিতে স্পষ্টভাবে লেখা আছে, চিহ্নিত ১৯৫ জন সেনা সদস্যের যুদ্ধাপরাধের বিচার পাকিস্তান করবে। কিন্তু পাকিস্তান সেই কথাও রাখেনি। এখন বাংলাদেশকেই এই বিচার করার উদ্যোগ নিতে হবে। বিদ্যমান আইসিটি ট্রাইব্যুনালে ওই ১৯৫ জনের প্রতীকী বিচার করাও সম্ভব বলে মনে করেন পর্যটনমন্ত্রী। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ করে মুহাম্মদ শফিকুর রহমান বলেন, আমি মহসীন হলে থাকতাম। চৌধুরী মঈনুদ্দিন ও আশরাফুজ্জামান খান মহসীন হলে আমার পাশের কক্ষেই থাকতো। ১৪ ডিসেম্বর এক বিহারী দারোয়ানের সহায়তায় এই দুজন মিলে অধ্যাপক ড. গিয়াসউদ্দিন আহমেদকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তুলে নিয়ে হত্যা করে। আমার অনেক সহপাঠীকে লাইনে দাঁড় করিয়ে ব্রাশফায়ার করে। ১৩ ডিসেম্বর বাড়িতে চলে আসায় আমি প্রাণে বেঁচে যাই।
অনুষ্ঠানে সাইফুদ্দিন আব্বাস তার বাবার স্মৃতিচারণ করে বলেন, আমার বাবা ছিলেন সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদের নেতা। যুদ্ধের সময় তিনি বরিশালের স্বরূপকাঠিতেই ছিলেন। শর্ষিনার পীরের (পীর মাওলানা আবু জাফর মোঃ সালেহ) নির্দেশে পাকিস্তান আর্মির ক্যাপ্টেন এজাজ বাবাকে গুলি করে হত্যা করে। অথচ স্বাধীনতাবিরোধী ওই পীরকেই জিয়াউর রহমান ১৯৮০ সালে স্বাধীনতা পদক প্রদান করেন। শর্ষিনার পীরের স্বাধীনতা পদক বাতিলের জন্য সাইফুদ্দিন সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। শহীদ অধ্যাপক আব্দুল ওয়াহাব তালুকদারের ছেলে মিজানুর রহমান তালুকদার আবেগী কণ্ঠে তার বাবার স্মৃতিচারণ করে বলেন, বাবা মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করতেন। একাত্তরের আগস্টে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দলের সঙ্গে ভারতে যাচ্ছিলেন। পাকিস্তানিরা তাদের ধাওয়া করে ভারত সীমান্তে ঢুকে পড়ে। সেখানেই আমার আহত বাবার সর্বস্ব লুটে নিয়ে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে। বাবাকে পরে সেখানেই কবর দেয়া হয়। এই শহীদ সন্তান চান, সরকার যেন তার বাবার কবর বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগে তাকে সহায়তা করেন।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: