জলবায়ু সম্মেলন শেষ হওয়ার পর একটি প্রশ্নই সবাইকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে : নতুন চুক্তিটি বিশ্বের ভবিষ্যতের জন্য কি ফল বয়ে আনবে? ফ্রান্সের লা বুর্জেতে অনুষ্ঠিত ওই আলোচনা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেছিলেন এমন কথা বিজ্ঞানীরা বলেছেন, এটি সেই চুক্তি নয় যা মানবজাতির জন্য প্রকৃতক্ষে প্রয়োজন। এ চুক্তিটি পৃথিবীকে বাঁচাবে না। বড় বড় তুষার-প্রান্তর বিপন্নই রয়ে গেছে, মহাসাগরগুলোর উচ্চতা এখনও বাড়ছে, বনভূমি ও শৈলশিরা চাপের মুখে রয়েছে, দাবদাহ ও বন্যায় হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটছে এবং কৃষি ব্যবস্থা এখনও ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে অথচ এ কৃষিই সাত শ’ কোটি মানুষের খাদ্য যুগিয়ে থাকে। বিশ্বের উষ্ণায়ন সম্পর্কে প্রথম সতর্কবাণী কোন মার্কিন প্রেসিডেন্টের ডেস্কে পেশ হওয়া এবং তা দ্রুত ভুলে যাওয়ার ৫০ বছর পরে হলেও বিশ্বের রাষ্ট্রগুলো শেষ পর্যন্ত এমনভাবে সাড়া দিচ্ছেন যা বিজ্ঞানীরা উষ্ণায়নজনিত হুমকির মাত্রার সঙ্গে সমানুপাতিক বলে দেখতে পান।
নেতৃস্থানীয় মার্কিন জলবায়ু বিজ্ঞানী ক্রিস্টোফার বি ফিল্ড বলেন, আমার মনে হয় প্যারিস সম্মেলনের ফলাফল বিশ্বকে বদলে দিতে যাচ্ছে। আমরা সমস্যার সমাধান করিনি, কিন্তু আমরা সমাধানের ভিত্তি স্থাপন করেছি। শনিবার লা বুর্জেতে স্বাক্ষরিত চুক্তি যদি বিশ্বস্ততার সঙ্গে পালন করা হয়, তা হলে এটি পূর্ববর্তী যে কোন চুক্তির তুলনায় গ্রীন হাউস গ্যাস নির্গমন আরও অনেক বেশি পরিমাণে হ্রাস করবে। এটি নিয়ন্ত্রিত জলবায়ু পরিবর্তন বিশ্বের কোন কোন অংশকে অবাসযোগ্য করে তুলবে এমন ঝুঁকি দূর না করলেও হ্রাস করবে। এটি কোন তুষার প্রান্তরের পতনের সম্ভাবনা কিছুটা কমবে, যা সমুদ্রের উচ্চতা ২০ ফুট বা এরও বেশি বাড়াত। সংক্ষেপে বলতে গেলে, চুক্তিটি বিশ্বের দেশগুলোকে এমন এক অভিন্ন লক্ষ্যের দিকে নিয়ে যেতে শুরু করেছে, যা সম্ভবত এক বাসযোগ্য পৃথিবী দীর্ঘকাল রক্ষা করার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। পরিবেশ বিজ্ঞানের অন্যতম অগ্রদূত হ্যান্সি জোয়াচিম সেলনহুবার শনিবার ঘোষণা করেন যে, এটি মানুষের উদ্যোগের ক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী ঘটনা, সেখানে পরিবেশের ক্ষতি না করে জ্বালানি ব্যবহার করার সম্ভাবনার লক্ষ্যে বড় পরিবর্তনের সূচনা হচ্ছে। সম্ভবত চুক্তিটির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো, এটি স্পষ্টত স্বীকার করছে যে, দেশগুলো প্যারিস আলোচনার আগে গ্রীন হাউস গ্যাস নির্গমন হ্রাস করার বিষয়ে প্যারিস আলোচনার আগে যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, যে সব প্রতিশ্রুতি চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, সেগুলোর বিষয়ে তারা উচ্চাভিলাষী নয়। গ্যাস নির্গমন কমানোর বিষয়ে যথেষ্ট কিছু কার্যত করা হয়নি বলে চুক্তিতেই আত্মসমালোচনা করা হয়।
গ্রীন হাউস গ্যাস নিঃসরণ, প্রধানত জীবাষ্ম জ্বালানি ব্যবহার এবং বনভূমি ধ্বংস করার ফলে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের নিঃসরণ কয়েক দশক ধরেই বেড়ে চলেছে। ২০১৫ সাল রেকর্ড করা ইতিহাসে সবচেয়ে উত্তপ্ত বছর হবে। ১৮৮০ সাল থেকে বিশ্বের ইতিহাসের ১০টি অতি উত্তপ্ত বছরের সবই ১৯৯৮ সালের পরে ঘটে। ২০১০ সালের কানকুন চুক্তির পর আন্তর্জাতিক জলবায়ু নীতির অফিসিয়াল লক্ষ্য ছিল বিশ্বের উষ্ণায়নের মাত্রা শিল্প বিপ্লবের আগের তাপমাত্রার চেয়ে ২ ডিগ্রী সেলসিয়াস, বা ৩ দশমিক ৬। ফারেনহাইটের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা। শিল্প থেকে গ্যাস নির্গমনের ফলে ১৯৫০ সাল থেকে দ্রুত উষ্ণায়ন ঘটায় পৃথিবীর উষ্ণায়নের মাত্রা এরই ওই নির্ধারিত মাত্রায় অর্ধেকে (১ ডিগ্রী সেলসিয়াস) রয়েছে। প্যারিস চুক্তিতে আরও উচ্চাভিলাষী লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়। Ñনিউইয়র্ক টাইমস