ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আবুল মাল আবদুল মুহিত

ছেলেবেলা ও ছাত্রজীবন

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ১৪ ডিসেম্বর ২০১৫

ছেলেবেলা ও ছাত্রজীবন

দ্বাদশ অধ্যায় ছাত্রজীবনের অবসান (১৩ ডিসেম্বরের পর) মোটামুটিভাবে ১৯৫৫ সালেই আমার ছাত্রজীবনের অবসান ঘটে। এ বছরের শুরুতে আমি সলিমুল্লাহ মুসলিম হল ছাত্র ইউনিয়নের সহ-সভাপতির দায়িত্ব নিই এবং বছর শেষে আমার উত্তরসূরি ইব্রাহিম তাহা-র হাতে সেই দায়িত্বটি অর্পণ করি। দেশ বিভাগের পর এবারই প্রথম একটি শিক্ষা বছরের ছাত্র ইউনিয়ন প্রথম ৬ মাসের মধ্যেই অভিষিক্ত হয়। আমার অভিষেক হয় ১০ জানুয়ারি ১৯৫৫ সালে এবং ৩০ নবেম্বর আমি এই দায়িত্ব আমার পরবর্তী সহ-সভাপতির হাতে সমর্পণ করি। এই বছরের উল্লেখযোগ্য ঘটনাবলীর একটি বড় কাহিনী ইতোমধ্যেই আমি বলে ফেলেছি এবং সেটি ছিল সুপ্রীমকোর্টের বিচারপতি মুনীরের দেয়া ‘প্রয়োজনের তত্ত্বকথা’। এই রীট মামলার রায় এক ধরনের সামরিক অভ্যুত্থানকে আইনগত স্বীকৃতি প্রদান করে। বড়লাট গোলাম মোহাম্মদ ১৯৫৪ সালের ২৪ অক্টোবর যে গণপরিষদ বাতিল করে দেন সেটাই প্রকৃতপক্ষে ছিল সামরিক শাসনের প্রথম পদক্ষেপ। গোলাম মোহাম্মদ এ ঘোষণাটি দেন সেনাধিনায়ক আইয়ুব খানের সমর্থনের ওপর ভিত্তি করে। আর বিচারপতি মুনীর এই অবৈধ ঘোষণা তার সুন্দর তত্ত্বকথা দিয়ে সমর্থন করে। বিচারপতির ১৯৫৫ সালের ২১ জুনের এই রায় নিয়ে ইতোমধ্যে আমি মন্তব্য করেছি। এছাড়াও অনেকগুলো ঐতিহাসিক ঘটনা এ বছর ঘটে। এ বছর মাহমুদ নুরুল হুদার উদ্যোগে ঢাকায় একটি সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ‘বুলবুল একাডেমি অব ফাইন আর্টস’ ১৭ মে ওয়াইজঘাটে প্রতিষ্ঠিত হয়। এ বছর ৬ জুন প্রায় এক বছর বিরতির পর পূর্ব বাংলায় লাট সাহেবের শাসনের অবসানে আবু হোসেন সরকার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে প্রাদেশিক মন্ত্রিসভা গঠন করেন। সে মন্ত্রিসভাও পরিষদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের আস্থা সম্বন্ধে নিশ্চিত ছিল না বলে একটি বছর বাস্তবে প্রাদেশিক পরিষদের কোন অধিবেশনই হলো না। এ বছর আমার জীবনে ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু করে ২১ মার্চ পর্যন্ত ৪২ দিন জেল জীবনের অভিজ্ঞতা হয়। এ বছর বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠান ‘আর্টস কাউন্সিল’ স্থাপিত হয়। একই সঙ্গে এ বছর ৩ ডিসেম্বর বাংলা একাডেমি প্রতিষ্ঠিত হয়। এ বছর সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে টেলিফোন সংযোগ দেয়া হয় এবং হল ইউনিয়ন একটি মাইক্রোফোন খরিদ করে। এই দুটি সম্ভব হয় হল ইউনিয়নের সহ-সভাপতি হিসেবে আমারই উদ্যোগ ও প্রচেষ্টায়। এ বছর আমার ছাত্রজীবনের সমাপ্তি ঘটে এবং চাকরিতে যোগ দেয়ার বিষয়টি ছিল মাত্র কয়েক মাসের ব্যাপার। এ বছর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অংশগ্রহণে একটি ছাত্র সম্মেলন হয় ১৮Ñ২১ অক্টোবর কুমিল্লাতে এবং সেখানে ঢাকা থেকে ২২ জন প্রতিনিধি দলের নেতা হিসেবে আমি অংশগ্রহণ করি। ৫Ñ১৫ অক্টোবরের মধ্যে আমার মাস্টার্স পরীক্ষা শেষ হয়। তার অব্যবহিত পরেই ১৪ নবেম্বর থেকে ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত আমি সুপিরিয়র সার্ভিসের জন্য পরীক্ষা দিই। এ বছরের আন্তর্জাতিক লক্ষণীয় বিষয় ছিল দু’টি। ১৪ মে সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃত্বে ‘ডধৎংধি চধপঃ’ হয় সব সাম্যবাদী দেশ নিয়ে। ‘ডধৎংধি চধপঃ’ ছিল আদর্শগতভাবে বিভক্ত একটি দ্বিতীয় জোট। এর সদস্য ছিলÑ আলবেনিয়া, বুলগেরিয়া, চেকোশ্লোভাকিয়া, পূর্ব জার্মানি, হাঙ্গেরি, পোল্যান্ড, রুমানিয়া, সোভিয়েত রাশিয়া। প্রথম জোটটি স্থাপিত হয় ১৯৪৯ সালের ৪ এপ্রিলে যখন আমেরিকার নেতৃত্বে উত্তর আটলান্টিক চুক্তি বলে পশ্চিমের দেশগুলো তাদের জোট স্থাপন করে। এই জোটে সদস্য ছিলÑ বেলজিয়াম, কানাডা, ডেনমার্ক, ফ্রান্স, আইসল্যান্ড, ইতালী, লুক্সেমবার্গ, নেদারল্যান্ডস্্, নরওয়ে, পর্তুগাল, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র। চলবে...
×