ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জাপানের জন্য নতুন অর্থনৈতিক অঞ্চল

প্রকাশিত: ০৫:২৪, ১৪ ডিসেম্বর ২০১৫

জাপানের জন্য নতুন অর্থনৈতিক অঞ্চল

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ জাপানের জন্য নতুন অর্থনৈতিক অঞ্চল করছে সরকার। এ জন্য গাজীপুরের নয়নপুরে এবং নারায়ণগঞ্জের আড়াই হাজারে সম্ভাব্যতা যাচাই করা হচ্ছে। জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) কারিগরি সহায়তায় এ সম্ভাবতা যাচাই করার পরই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে কোথায় এটি তৈরি হবে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী জনকণ্ঠকে বলেন, আগামী দেড় মাসের মধ্যেই চূড়ান্ত করা হবে কোথায় এই অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি করা হবে। তিনি জানান, ইতোমধ্যেই গাজীপুরে ৫০০ একর এর বেশি জমি এবং নারায়ণগঞ্জে প্রায় ১ হাজার একর জমি জাপানীদের বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরির জন্য নির্বাচন করা হয়েছে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) জানায়, অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরির জন্য ফরেন ডাইরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট প্রমোশন শীর্ষক একটি প্রকল্প হাতে নিচ্ছে সরকার। এটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হবে প্রায় ১ হাজার ৫১৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাপান সরকার সহজ শর্তে ঋণ দিচ্ছে ১ হাজার ২৯ কোটি টাকা, যা মোট ব্যয়ের ৬৭ শতাংশ। বাকি টাকা সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় করা হবে। এ প্রকল্পটির মাধ্যমে বাংলাদেশে জাপানী বিনোয়োগ আকৃষ্ট করতে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হবে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন বলেন, জাপান বাংলাদেশের বিশ্বস্ত বন্ধু। স্বাধীনতার পর থেকে দেশটি তাদের সহায়তা অব্যাহত রেখেছে। মধ্য আয়ের দেশে দেশে আমাদের প্রচুর বিনিয়োগ দরকার। এক্ষেত্রে অর্থনৈতিক অঞ্চলটি তৈরি হলে জাপানের বিনিয়োগ আসবে এবং বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি বাড়বে। অন্যদিকে ফরেন ডাইরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট প্রমোশন প্রজেক্টসহ ছয়টি প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ৮ হাজার ৬৬০ কোটি টাকার ঋণ চুক্তি স্বাক্ষর করেছে সরকার। জাপান সরকারের ৩৬তম ওডিএ লোন প্যাকেজের আওতায় সংস্থাটি এ ঋণ দিচ্ছে। রবিবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি-২ সম্মেলন কক্ষে এ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন অর্থনেতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন এবং জাইকার চীফ রিপ্রেজেনটেটিভ মিকিও হেতেদা। একই অনুষ্ঠানে এ বিষয়ে একটি বিনিময় নোটও স্বাক্ষরিত হয়। এতে মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন ও জাপানের রাষ্ট্রদূত মাসাটো ওটানাবে স্বাক্ষর করেন। মিকিও হেতেদা বলেন, এই ঋণ অত্যন্ত সহজ শর্তে দেয়া হচ্ছে। এর বার্ষিক সুদের হার শূন্য দশমিক শূন্য ১ শতাংশ, যা দশ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ৪০ বছরে পরিশোধযোগ্য। তিনি জানান জাপনের প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত অর্থ সহায়তা থেকে এসব ঋণ দেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ মধ্য আয়ের দেশে যেতে আমাদের এ সহায়তা ভূমিকা রাখবে। কেননা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে সরাসরি বিনিয়োগ ও অবকাঠামো উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে। জাপানের রাষ্ট্রদূত মাসাটো ওটানাবে বলেন, ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে জাপান বাংলাদেশকে সহায়তা দিয়ে আসছে। জাপানের জন্য অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরিতে সহায়তা দেয়া হচ্ছে। এতে করে এদেশে জাপানী বিনিয়োগকারীরা আকৃষ্ট হবে। ইআরডি সূত্র জানায়, পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) লিমিটেডের ঢাকা-চট্টগ্রাম মেইন পাওয়া গ্রিড স্ট্রেংদেনিং প্রজেক্টটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হবে ৪ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা। এই চুক্তির আওতায় জাপান সরকার দেবে ২ হাজার ৮৪৪ কোটি টাকা, সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের ওয়েস্টার্ন বাংলাদেশ ব্রিজ ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্টটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হবে প্রায় ২ হাজার ৯১৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে চুক্তির আওতায় জাপান দেবে ১ হাজার ৯০৭ কোটি টাকা। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মা, নবজাতক, শিশু স্বাস্থ্য এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্পে মোট ব্যয় হবে প্রায় ১ হাজার ৩৯৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাপান দিচ্ছে ১ হাজার ১৩৮ কোটি টাকা। গৃহায়ন ও গণপূর্ত অধিদফতরের আরবান বিল্ডিং সেফটি প্রজেক্টটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হবে প্রায় ৯১২ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাপান দিচ্ছে ৭৮৫ কোটি টাকা এবং স্থানীয় সরকার বিভাগের উপজেলা গবার্নেন্স এ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হবে প্রায় ১ হাজার ১১৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাপান দিচ্ছে ৯৫৭ কোটি টাকা। ছয়টি মেগা প্রকল্প যুক্ত হচ্ছে জাপানের প্রতিশ্রুত ৬০০ কোটি ডলারে। এ জন্য ত্রিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। দেশটির আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা), অর্থনেতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) এবং প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা দায়িত্বশীলরা উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে। প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে বঙ্গবন্ধু সেতুর সমান্তরাল যমুনা সেতুর ওপর আরও একটি রেল সেতু, যমুনা নদীর নিচে বহুমুখী টানেল, ঢাকা বহুমুখী ইস্টার্ন বাইপাস সড়ক এবং ঢাকার চারটি নদী পুনরুদ্ধার প্রকল্প ও গঙ্গা ব্যারাজ প্রকল্প। এসব মেগা প্রকল্পগুলোর অর্থায়নের বিষয়ে সবুজ সঙ্কেত পাওয়া গেছে। চুক্তিসহ বাকি কার্যক্রম শেষ করার উদ্যোগ নিচ্ছে ইআরডি। সূত্র জানায়, গত বছর জাপানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরের সময় ৬০০ কোটি ডলারের প্রতিশ্রুতি দেয় জাপান। বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়নসহ বিভিন্ন অগ্রাধিকারমূলক প্রকল্পে জাপান ৪-৫ বছরে অর্থায়নের জন্য এ অর্থ ব্যয় করবে। তারই অংশ হিসেবে এই ছয় প্রকল্পে সহায়তা দিচ্ছে জাপান। এর আগে জাইকা দেশের কয়েকটি মেগা প্রকল্পে সহযোগিতা করছে। এর মধ্যে অন্যতম মেট্রোরেল প্রকল্প। রাজধানীর যানজট নিরসনে প্রায় ২০ দশমিক ১ কিলোমিটার দীর্ঘ প্রকল্পটির মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে প্রকল্প সাহায্য হিসেবে জাইকা ১৬ হাজার ৫৯৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। বাকি পাঁচ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা দেবে সরকার। দেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্প মহেশখালীর মাতারবাড়ি। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ। ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ দশমিক ১৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ৪০ হাজার ৩২০ কোটি টাকা। ৭০ শতাংশ বিনিয়োগ করছে জাপান ইন্টারন্যানশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)।
×