ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ভাণ্ডারগ্রাম ও শাহজাদপুর

কবিগুরুর স্মৃতি বিজড়িত ॥ কাছারি ধসে পড়ার শঙ্কা

প্রকাশিত: ০৬:০৫, ১২ ডিসেম্বর ২০১৫

কবিগুরুর স্মৃতি বিজড়িত ॥ কাছারি ধসে পড়ার শঙ্কা

বিশ্বজিৎ মনি, নওগাঁ ॥ জেলার রানীনগর উপজেলার ভা-ারগ্রামে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত কাছারিবাড়িটি বর্তমানে ধ্বংসের মুখে। শত বছরের পুরনো মাটির তৈরি প্রধান ভবনে পরবর্তীতে ভা-ারগ্রাম ইউনিয়ন ভূমি অফিস হিসেবে কার্যক্রম শুরু করা হয়। বর্তমানে ধ্বংসপ্রায় এই মাটির তৈরি ঘরেই ভূমি অফিসের যাবতীয় কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। কখন যে মাথার ওপর ভেঙ্গে পড়বে, তার কোন নিশ্চয়তা নেই। তবুও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। দেশের রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ এই ভূমি অফিসটিতে আজ পর্যন্ত আধুনিকতার কোন ছোঁয়া লাগেনি কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায়। জানা গেছে, তদানীন্তন ব্রিটিশ শাসনামলে ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতামহ দ্বারকানাথ ঠাকুর কালীগ্রাম পরগনা ক্রয় করে ঠাকুর পরিবারের জমিদারির অংশ হিসেবে আত্রাইয়ের পতিসরের সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করেন। এরপর বিশ্বকবি ১৮৯১ খ্রিস্টাব্দের ১৩ জানুয়ারি প্রথম আসেন পতিসরের কাচারিবাড়িতে। এখানে তিনি জমিদারি দেখাশোনা ও খাজনা আদায় করতেন। সেই সময় কালীগ্রাম অঞ্চলের জমিজমার খাজনা আদায়সহ বিভিন্ন কাজের সুবিধার্থে কবিগুরু (অনুমান ১৯১৪ইং সালে) ভা-ারগ্রাম কাছারিবাড়ি প্রতিষ্ঠা করেন। ভূমি অফিস প্রতিষ্ঠাকালে কবিগুরুর পৃষ্ঠপোষকতায় মাটি দিয়ে যে ভবনটি তৈরি করা হয়েছিল, আজও সেই মাটির নড়বড়ে কক্ষেই চলছে ভূমি অফিসের যাবতীয় কাজকর্ম। দীর্ঘদিন এই ভবনের কোন সংস্কার না করায় ভবনের কোথাও কোথাও দেয়ালের মাটি খসে পড়ে গেছে। ছাউনির টিন পুরনো হওয়ায় বর্ষাকালে ঘরের ভেতরে অঝরে বৃষ্টির পানি পড়ে। যার কারণে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র নষ্ট হয়ে গেছে, যা আর পাওয়া সম্ভব নয়। সেই সময়ে এখানে কাগজপত্র সংরক্ষণ করার তেমন কোন আসবাবপত্র না থাকার কারণে কবির জমিদারি শাসনের সময়ের অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাগজ নষ্ট হয়ে গেছে। মাটির কক্ষে দেখা দিয়েছে বড় বড় ফাটল। কাছারিটি ভা-ারগ্রাম মৌজায় ১.৮০ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত। নতুন ভবন তৈরি করার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ জায়গা থাকলেও তার সিংহভাগ বর্তমানে বেদখলের শিকার। স্থানীয়দের দাবি, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শত বছরের পুরনো স্মৃতিবিজড়িত কাচারিটি সংস্কার করে সংরক্ষণ করা হোক এবং এর পাশে আধুনিক ভবন তৈরি করা হোক, যেখানে ভূমি অফিসের কার্যক্রম চলবে। সংবাদদাতা শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ) থেকে জানান, সংস্কারের অভাবে শাহজাদপুরের প্রাণকেন্দ্র দ্বারিয়াপুর বাজারে অবস্থিত কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছারিবাড়ির মূল ভবনের প্রথম তলার ছাদ ও দ্বিতীয় তলার ছাদের বিভিন্ন স্থানে ভয়াবহ ফাটলের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে ওই দ্বিতল ভবনটি ধসে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ ভবনের বিভিন্ন অংশে পলেস্তরা উঠে গেছে। ১৯৬৯ সালে প্রতœতত্ত্ব অধিদফতর জরাজীর্ণ এই ভবনটিকে সংরক্ষিত পুরাকীর্তি হিসেবে ঘোষণা দেয়। তিন তৌজির অন্তর্গত ডিহি শাহজাদপুরের জমিদারি একদা নাটোরের রানী ভবানীর জমিদারির অংশ ছিল। ১৮৪০ সালে শাহজাদপুরের জমিদারিটি নিলামে উঠলে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতামহ প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর কিনে নেন। জমিদারির সঙ্গে সঙ্গে এই কাছারিবাড়িটিও ঠাকুর পরিবারের হস্তগত হয়। এর আগে এই বাড়িটির মালিক ছিল নীলকর সাহেবরা। ১৮৯০ থেকে ১৮৯৬ সাল পর্যন্ত কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জমিদারি দেখাশোনার কাজে সাময়িকভাবে শাহজাদপুরে বসবাস করতেন। এখানে বসে তিনি রচনা করেছেন অনেক কবিতা।
×