ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শীত পড়তে দেরি হবে এবার

প্রকাশিত: ০৫:০৬, ১২ ডিসেম্বর ২০১৫

শীত পড়তে দেরি হবে এবার

নিখিল মানখিন ॥ ঠা-া আমেজ অনুভূত হলেও কনকনে শীত পড়তে বেশ কিছুদিন সময় লাগবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। এবার অনেকটা দেরিতেই শীতের আগমন ঘটছে। দিনপঞ্জি অনুসারে এই সময়টায় পুরোপুরি শীত অনুভূত হওয়ার কথা থাকলেও সে রকম হচ্ছে না। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, অন্যান্য বছর ডিসেম্বর মাসে যে ধরনের তাপমাত্রা থাকে তার চেয়েও ৪ থেকে ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা বেশি অনুভূত হচ্ছে। সাধারণত নবেম্বরের শুরু থেকেই শীত অনুভূত হতে শুরু করে। গত বছরের ১১ ডিসেম্বর ঘন কুয়াশা, ঠা-া বাতাস ও কনকনে শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল সারাদেশ। কিন্তু এ বছর ডিসেম্বরের তিন ভাগের এক ভাগের বেশি সময় চলে গেলেও সেভাবে শীত অনুভূত হচ্ছে না। চলতি বছর তাপমাত্রা খুব একটা বেশি নিচে নামার সম্ভাবনা নেই। সামনে তিনটি শৈত্যপ্রবাহ বইতে পারে। এরমধ্যে চলতি মাসের শেষে একটি এবং জানুয়ারি মাসে দুটি। এরপরই শীতের বিদায় হতে পারে। চলতি বছর প্রত্যাশিত শীত অনুভূত হবে না বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। এক সপ্তাহ ধরে দেশের তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ২৯ থেকে ৩০ ও সর্বনি¤œ ১৩ থেকে ১৫ ডিগ্রী সেলসিয়াসের মধ্যে অবস্থান করছে। ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রাও ১৮ ডিগ্রী সেলসিয়াসের নিচে নামছে না। আবহাওয়াবিদরা জানান, উত্তর-পশ্চিম ভারত থেকে আসা কনকনে উত্তুরে হাওয়ার হাত ধরেই শীত আসে বাংলাদেশে। কিন্তু এ বছর ওই অঞ্চলে শীত পড়া তো দূরের কথা, অনেক জায়গায়ই রাতের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে নিচে নামতে পারেনি এখনও। বিহার-ঝাড়খন্ড থেকে যে ঠা-া উত্তুরে হাওয়া পায় বাংলা, সেটাও পাচ্ছে না। সামান্য হিমেল হাওয়া আসছে শুধু উত্তর-পূর্বাঞ্চল থেকে। কলকাতাসহ পশ্চিমবঙ্গেও শীত পরিস্থিতি তৈরি হতে দেরি হচ্ছে। তাই বাংলাদেশেও শীত আসতে দেরি করছে। আবহাওয়াবিদরা আরও জানান, ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল থেকে ঠা-া হাওয়া (পশ্চিমা ঝঞ্ঝা) নিয়মিত বয়ে আসতে শুরু করলে তবেই শীত পড়বে। কিন্তু ওই অঞ্চলে ঝঞ্ঝার আনাগোনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। এই অবস্থায় পাকিস্তান-আফগানিস্তানের ওপর দিয়ে একটা জোরদার পশ্চিমা ঝঞ্ঝা (ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল থেকে বয়ে আসা শীতল বায়ুপ্রবাহ) ধেয়ে এলেই জাঁকিয়ে ঠা-া পড়বে। আনন্দবাজার পত্রিকার অনলাইনে জানানো হয়, কয়েক সপ্তাহ আগে বঙ্গোপসাগরের তামিলনাড়ু উপকূলে দানা বাঁধে নিম্নচাপ। উত্তুরে হাওয়ার সামনে পাচিল তুলে দাঁড়ানো ওই নিম্নচাপের জেরে কলকাতায় শীতের আগমন পিছিয়ে যায়। ধীরগতিতে আসার কারণেও তার ছন্দপতনের আশঙ্কাও করছেন কেউ কেউ। শীতের মৌসুমে উত্তর-পূর্ব মৌসুমী হাওয়ার জেরে দক্ষিণ ভারতে বৃষ্টি হয়। বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ তৈরি হওয়ার ঘটনাও অমিল নয়। কিন্তু এ বছর ঘন ঘন নিম্নচাপ তৈরি হয়েছে। তার পেছনে কারণ হিসেবে বিশ্ব উষ্ণায়ন এবং জলবায়ু বদলকেই দায়ী করছেন আবহাওয়াবিদদের অনেকে। তাঁদের মতে, বিশ্ব উষ্ণায়নের জেরে সাগরের জলের তাপমাত্রা বেশি হওয়ার ফলেই ঘন ঘন নিম্নচাপ তৈরি হচ্ছে এবং তার প্রভাবেই বঙ্গোপসাগর এবং সংলগ্ন এলাকার আবহাওয়া অস্থির হয়ে উঠছে বলে জানান পশ্চিমবঙ্গের আবহাওয়াবিদরা। এদিকে, গত বছরের ১১ ডিসেম্বর ঘন কুয়াশা, ঠা-া বাতাস ও কনকনে শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল বাংলাদেশ। ঘন কুয়াশায় জল, স্থল ও আকাশপথে যান চলাচল মারাত্মক ব্যাহত হয়। কুয়াশার কারণে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমান ওঠানামায় বিলম্ব হয়। শীতজনিত কারণে হাসপাতাল ও ক্লিনিকে বেড়ে যায় নতুন রোগীর সংখ্যা। তীব্র শীত ও কুয়াশায় বোরো বীজতলায় ‘কোল্ড ইনজুরি’ দেখা দেয়। অনেক এলাকায় সাময়িকভাবে বন্ধ থাকে ধানের চাতালগুলো। শীতবস্ত্রের অভাবে চরম কষ্ট পেতে শুরু করে ছিন্নমূল ও দরিদ্র মানুষ। আবহাওয়া অধিদফতর আরও জানায়, গত বছরের ১১ ডিসেম্বর রাজধানীতে দিনের অধিকাংশ সময় শীত অনুভূত হয়। বেলা এগারোটার আগে সূর্যের মুখ দেখা যায়নি। দুপুরে কিছুক্ষণের জন্য সূর্য উঠলেও তেমন তেজ ছিল না। হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা বিরাজ করে দিনভর। বিকেল সাড়ে তিনটার পর রাজধানীর আকাশ যেন কুয়াশার পুরো দখলে চলে যায়। পাশাপাশি বইতে থাকে ঠা-া বাতাস। অধিকাংশ লোকজনকে দিনভর গরম কাপড় ব্যবহার করতে দেখা গিয়েছিল। বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, ডিসেম্বর মাসের শেষার্ধে দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে এক থেকে দুটি মৃদু অথবা মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। দেশের উত্তরাঞ্চলে ইতোমধ্যে মাঝারি ধরনের শীত অনুভূত হচ্ছে। সন্ধ্যা থেকে পরদিন সকাল পর্যন্ত পড়ছে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা। চলতি মাসে মাঝারি থেকে ভারি বর্ষণের তেমন সম্ভাবনা নেই। প্রতি বিভাগে চলতি মাসে ১১ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাত হবে না। ডিসেম্বর মাসে শেষ রাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের উত্তরাঞ্চল ও নদ-নদী অববাহিকায় মাঝারি অথবা ঘন কুয়াশা এবং অন্যত্র হালকা অথবা মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে। তবে সারাদেশে একটানা দুই থেকে তিন দিন ঘন অথবা মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে। ডিসেম্বর মাসে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হতে পারে। এ মাসে রাতের তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে হ্রাস পেতে পারে। দেশের প্রধান নদ-নদীসমূহে পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক থাকবে। চলতি মাসে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত ঢাকা বিভাগে ১০ মিলিমিটার, চট্টগ্রামে ৯ মি.মি, সিলেট ১০ মি.মি, রাজশাহীতে ১১ মি.মি, রংপুরে ৮ মি.মি, খুলনায় ১০ মি.মি ও বরিশালে ৯ মিলিমিটার হতে পারে।
×