ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সিএমএইচ ও সৌদি শিশুরোগ বিশেষজ্ঞদের যৌথ উদ্যোগে;###;চ্যারিটি মিশন- সফল অস্ত্রোপচার

নতুন জীবন ফিরে পেল দুস্থ ৫৯ শিশু

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ১১ ডিসেম্বর ২০১৫

নতুন জীবন ফিরে পেল দুস্থ ৫৯ শিশু

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঢাকা সেনানিবাসে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ) ও সৌদি আরবের শিশু হৃদরোগ বিশেষজ্ঞদের যৌথ উদ্যোগে ‘লিটল হার্ট’ নামের চ্যারিটি মিশন সিএমএইচে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। মিশনের অংশ হিসেবে সফলভাবে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে নতুন জীবন ফিরে পেয়েছে জটিল হৃদরোগে আক্রান্ত হতদরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত ৫৯ শিশু। আরও ৫০-৬০ শিশুর অস্ত্রোপচারের প্রক্রিয়া চলছে। সবমিলিয়ে হৃদরোগে আক্রান্ত অন্তত ২শ’ শিশুকে চিকিৎসা দেয়া হবে। অমিত সম্ভাবনাময় এসব শিশু দীর্ঘদিন ধরে জটিল হৃদরোগে ভুগছিল। বিনামূল্যে ব্যয়বহুল চিকিৎসা পাওয়া এসব শিশুর অধিকাংশই বেসামরিক। শিশুদের পরিবারগুলোতে বইছে আনন্দের বন্যা। ভবিষ্যতে সৌদি আরবের সঙ্গে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এমন মানবিক সেবা কার্যক্রম দিন দিন বৃদ্ধি পাবে। বৃহস্পতিবার এক আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে সিএমএইচ কর্তৃপক্ষ এসব তথ্য জানান। সংবাদ সম্মেলনে সিএমএইচের কমান্ড্যান্ট ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ ফসিউর রহমান বলেন, সৌদি আরবের কিং ফয়সাল হাসপাতালের হৃদরোগ বিষেশজ্ঞ ডাঃ জামিল আব্দুল আজিজ আল-আতার নেতৃত্বে ২৭ সদস্যের একটি চ্যারিটি দল বাংলাদেশে আসে। দলটির অন্যতম সদস্য হৃদরোগ বিষয়ক শল্য চিকিৎসক ডাঃ মোহাম্মদ সিহাতা। তারা ৫-১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত ঢাকা সেনানিবাসে অবস্থিত সিএমএইচে সশস্ত্র বাহিনী ও বেসামরিক হতদরিদ্র সুবিধাবঞ্চিত শিশু হৃদরোগীদের জটিল অপারেশনসহ চিকিৎসা প্রদান করছেন। তাদের সার্বিকভাবে সহযোগিতা করছেন সিএমএইচের শিশু হৃদরোগ বিশেষজ্ঞরা। হাসপাতালের চীফ সার্জন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুন্সী মোহাম্মদ মুজিবুর রহমান বলেন, শিশু হৃদরোগীদের অপারেশন নিঃসন্দেহে জটিল ও কঠিন। এমনকি ব্যয়বহুল। এমন উদ্যোগ সত্যিই যুগান্তকারী। ভবিষ্যতে সৌদি আরবের সঙ্গে এ ব্যাপারে আরও যোগাযোগ বাড়ানো হবে। হাসপাতালের উপদেষ্টা শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ (কার্ডিয়াক সার্জারি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম মুসা খান বলেন, ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা লাভের পর বাংলাদেশ সরকার প্রথম ১৯৮১ সালে হৃদরোগ হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করে। দ্বিতীয় দফায় ১৯৯০ সালে সিএমএইচে কার্ডিয়াক সেন্টার চালু হয়। সারাদেশে হৃদরোগের চিকিৎসার জন্য ২৭টি হাসপাতাল রয়েছে। এর মধ্যে ৪টি সরকারী, ২টি স্বায়ত্তশাসিত; বাকিগুলো বেসরকারী। বাংলাদেশে শিশু হৃদরোগীদের সব ধরনের চিকিৎসার জন্য আজও কোন পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল গড়ে উঠেনি। যেটি খুবই প্রয়োজন। বড়দের জন্য হৃদরোগের যথেষ্ট হাসপাতাল রয়েছে। বাংলাদেশে পূর্ণাঙ্গ শিশু হৃদরোগ হাসপাতাল তৈরি হলে প্রচুর টাকা বাঁচানো সম্ভব হবে, যা দেশের স্বার্থে কাজে লাগবে। কারণ জটিল হৃদরোগে আক্রান্ত শিশুদের অধিকাংশকেই চিকিৎসা নিতে হয় বিদেশ থেকে। যদিও দেশে আস্তে আস্তে এক্ষেত্রে যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। তবে যথেষ্ট ব্যয়বহুল, যা অনেকের পক্ষেই বহন করা সম্ভব নয়। ইতোমধ্যেই ২৪ শিশুর কার্ডিয়াক অপারেশন (ওপেন হার্ট সার্জারি) করা হয়েছে। বাকিদের ইন্টারভেনশন (বাইরে কাটা ছেঁড়া না করে অস্ত্রোপচার) করা হয়েছে। প্রতিটি অস্ত্রোপচার হয়েছে অত্যন্ত সফলভাবে। এসব শিশু ভাল আছে। সিএমএইচের উপদেষ্টা শিশু হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নুরুন নাহার ফাতেমা বলেন, হাসপাতালটিতে জন্ম নেয়া প্রতি এক হাজার শিশুর মধ্যে গড়ে ২৫ জন হৃদরোগে আক্রান্ত। তবে এদের মধ্যে জটিল হৃদরোগে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা কম। জন্মগত হৃদরোগে আক্রান্ত শিশুদের ৮০ ভাগেরও বেশি দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত শ্রেণীর অন্তর্গত। এদের চিকিৎসা খুবই ব্যয়বহুল। কিছু কিছু হৃদরোগ আপনা আপনিই বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেরে যায়। অধিকাংশকে বিদেশ থেকে চিকিৎসা করাতে হয়। আর্থিক সামর্থ্য না থাকায় হৃদরোগে আক্রান্ত অধিকাংশ শিশুকেই অকাল মৃত্যুবরণ করতে হয়। তিনি আরও বলেন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে পরিচালিত জরিপে দেখা গেছে, জন্মগত হৃদরোগের হার প্রতি হাজারে ৮-১০ জন। বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের শিশুদের এ রোগের হার দ্বিগুণেরও বেশি। রোগের চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল হওয়ায় এবং জটিল হৃদরোগীদের বেশির ভাগেরই বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা করানোর সঙ্গতি না থাকায় তারা ধীরে ধীরে অকালে মৃত্যুর মুখে পতিত হয়। যদিও বিদেশ থেকেও হৃদরোগে আক্রান্ত অনেক শিশু সিএমএইচে চিকিৎসা নিয়ে ভাল হয়ে যাওয়ার ভূরি ভূরি নজির আছে। সৌদি আরবের শিশু হৃদরোগ বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সর্বক্ষণিক যোগাযোগ আরও বাড়ানো হবে। আরও যাতে এ ধরনের মিশন হয়, অনেক হতদরিদ্র শিশু যাতে চিকিৎসা নিতে পারেÑ সে চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। সৌদি আরবের প্রতিনিধি দলের প্রধান ডাঃ জামিল আব্দুল আজিজ আল-আতা বলছিলেন, বাংলাদেশের মানুষ খুবই আবেগপ্রবণ। বিশেষ করে পিতামাতারা। যে শিশুর চিকিৎসা হয়েছে, তাদের পিতামাতার খুশি সত্যিই দেখার মতো। তাদের পিতামাতা এত খুশি হয়েছে, যা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। তারা দরিদ্র হলেও সন্তানদের খুবই ভালবাসেন, যা সত্যিই হৃদয়গ্রাহী। ভবিষ্যতে তিনি বাংলাদেশে এসে হতদরিদ্র এ ধরনের শিশু হৃদরোগীদের চিকিৎসাসেবা দেয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এমন আশা প্রকাশ করেছেন প্রতিনিধি দলের আরেক চিকিৎসক ডা. মোহাম্মদ সিহাতাও। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত চীফ ফিজিসিয়ান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এসকে রুহুল আমিন বলেন, অতীতেও বাংলাদেশে এমন মিশন হয়েছে। এ ধরনের মিশনের ক্ষেত্রে মিশনটি সব সময়ই সুসর্ম্পকের কারণে বাংলাদেশকে বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকে। গত বছর ৪২ জন এবং চলতি বছরের প্রথমদিকে হৃদরোগে আক্রান্ত ৮২ শিশুর চিকিৎসা দিয়েছে লিটল হার্ট ও মিশনটির লন্ডনভিত্তিক সাহায্য সংস্থা মুনতাদা এইড লিমিটেড। প্রজেক্টটি চলমান থাকবে। প্রতিবছর ২ বারের জায়গায় আরও বাড়ানো যায় কিনা, সে বিষয়েও আলোচনা চলছে। সংবাদ সম্মেলনে প্রতিনিধি দলের প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর আব্দুল্লাহ আল হেলেমী ও মুনতাদা এইডের জনসংযোগ কর্মকর্তা কবির মিয়া উপস্থিত ছিলেন।
×