ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আগামীতে অবমাননাকর নারী প্রতীক বাদ দেয়ার চিন্তাভাবনা

পৌর নির্বাচন অবাধ করতে ইসির নানা পদক্ষেপ

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ১১ ডিসেম্বর ২০১৫

পৌর নির্বাচন অবাধ করতে ইসির  নানা পদক্ষেপ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পৌরসভা নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে কঠোর অবস্থানে রয়েছে নির্বাচন কমিশন। ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, পৌর নির্বাচন দলভিক্তিক ও প্রতীকে হওয়ায় এ নির্বাচনে শৈথিল্য দেখানোর কোন সুযোগ কমিশনের নেই। নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে কমিশনের পক্ষ থেকে সব ধরনের ব্যবস্থায় নেয়া হচ্ছে। তাদের মতে, এবারই প্রথম মেয়র পদে রাজনৈতিক দলভিত্তিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এছাড়া বিএনপি দলীয়ভাবে প্রথম এ ইসির অধীনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। এ অবস্থায় এ নির্বাচনে সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রচ- আগ্রহ ও উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছে। তাই নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপক্ষেভাবে পরিচালনার লক্ষ্যে শান্তিপূর্ণ নির্বাচনী পরিবেশ বজায় রাখা এবং প্রার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে কমিশন। জানা গেছে, ইসির অনমনীয় মনোভাবের কারণে মনোনয়নপত্র জমা দেয়া থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত কোন প্রার্থীর বিরুদ্ধে বাধা দেয়াসহ বড় ধরনের অভিযোগ আসেনি। আচরণবিধি লঙ্ঘনের কিছু ঘটনা ঘটলে সঙ্গে সঙ্গে তাদের শোকজ করা হয়েছে। নির্বাচনে অংশ নেয়া সব রাজনৈতিক দল যাতে আচরণবিধি মেনে চলে সেজন্য বার বার ইসির পক্ষ থেকে দলগুলোকে চিঠি দিয়ে সতর্ক করা হয়েছে। সর্বশেষ নির্বাচন সুষ্ঠু করতে ও প্রার্থীদের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিতেও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে কমিশন। এদিকে, নারী প্রার্থীদের প্রতীক নিয়ে বিভিন্ন মহলে আপত্তি উঠলেও আইনী বাধ্যবাধকতা থাকায় পৌর নির্বাচনে তা বাতিলের সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছে কমিশন। তবে আগামী নির্বাচনগুলোতে নারীর জন্য অবমাননাকর সব ধরনের প্রতীক বাদ দেয়ার চিন্তাভাবনা করছে নির্বাচন কমিশন। কমিশন সচিব বলেন, আগামী নির্বাচনে আপত্তি ওঠা এসব প্রতীক বাদ দিতে এরই মধ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার নির্দেশনা দিয়েছেন। নির্বাচনে তফসিল ঘোষণা এবং কাউন্সিলর পদে ব্যালট পেপার ছাপা হয়ে যাওয়ায় এই মুহূর্তে প্রতীক পরিবর্তন করা সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়াও জানা গেছে, যেসব নারী প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিতে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন তারা তাদের পছন্দের প্রতীক মনোনয়নপত্রে উল্লেখ করেছেন। ফলে কমিশনের ইচ্ছা থাকলেও এখনই তা বাদ দিতে পারছে না। আদালতের আদেশে ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল পৌরসভা নির্বাচনে ছয় মাসের স্থগিতাদেশ দেয়ায় আগামী ৩০ ডিসেম্বর ২৩৪টি পৌরসভায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এসব পৌরসভায় যারা কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ইতোমধ্যে কমিশনের পক্ষ থেকে তাদের নিরপেক্ষতা, গ্রহণযোগ্যতা অক্ষুণœ ও সমুন্নত রেখে কাজ করার জন্য রিটার্নিং অফিসারদের নির্দেশনাও দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। ওই নির্দেশনায় বলা হয়েছে, বিশেষ কোন মহলের প্রভাব বা হস্তক্ষেপ নির্বাচনের নিরপেক্ষতা যাতে ক্ষুণœ করতে না পারে তা আইনী বিধিমালা ও আচরণ বিধিমালার আলোকে নিশ্চিত করতে হবে। নির্বাচনের ন্যায় একটি সংবেদনশীল, স্পর্শকাতর ও গুরুত্বপূর্ণ কর্মকা-ের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এমন কোন কাজ করবেন না, যার দ্বারা তাদের উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ বা স্থানীয় জনগণের নিকট হেয়প্রতিপন্ন হতে হয়। তারা যে পক্ষপাতদুষ্ট নন এমন ধারণা সৃষ্টির নিশ্চয়তা বিধানকল্পে প্রতিটি কাজে আইন ও বিধির যথার্থ প্রয়োগ ও অনুসরণ করতে হবে। কমিশনের ওই নির্দেশনায় কোন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনিয়ম ও পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার কথাও বলা হয়। এছাড়াও প্রিসাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার বা ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগের ক্ষেত্রেও স্বচ্ছতা বজায় রাখতে আহ্বান জানানো হয়েছে। বিশেষ করে কোন প্রার্থীর সমর্থন রয়েছে বা প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছে এমন কাউকে এ পদে নিয়োগ দেয়া থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে শান্তিপূর্ণ নির্বাচনে ব্যবস্থা নিতে ও প্রার্থীর নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বানও জানানো হয়েছে ইসির পক্ষ থেকে। নির্বাচন কমিশন সচিব সিরাজুল ইসলাম স্বাক্ষরিত চিঠিটি বৃহস্পতিবার দুপুরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোঃ মোজাম্মেল হক খান বরাবর পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, এবারই প্রথম মেয়র পদে রাজনৈতিক দলভিত্তিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এ নির্বাচনে সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রচ- আগ্রহ ও উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছে। তাই নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপক্ষেভাবে পরিচালনার লক্ষ্যে শান্তিপূর্ণ নির্বাচনী পরিবেশ বজায় রাখা এবং প্রার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এছাড়া পৌর নির্বাচনে ভোটাররা যাতে নির্বিঘেœ ভোটকেন্দ্রে যেতে পারে ও নির্ভয়ে ভোটদানে উদ্বুদ্ধ করার জন্যও আগেই জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে এলাকার জনগণের যৌথসভার মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ করতে বলা হয়। ওই নির্দেশনায় বলা হয়, ভোটদানের জন্য ভোটারদের নিশ্চয়তামূলক পরিবেশ সৃষ্টির জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী ভ্রাম্যমাণ ইউনিটসমূহকে নিবিড় টহলদানের ব্যবস্থা করতে হবে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা ও ভোটকেন্দ্রগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। যে কোন প্রকার অশুভ কার্যকলাপ প্রতিরোধে সতর্ক থাকার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের কঠোর নির্দেশ প্রদান করতে হবে। ভোটকেন্দ্রের অবস্থান বিষয়ে ভোটারদের অবহিত করার জন্য নির্বাচনের পূর্বে ব্যাপক প্রচারের ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হয়েছে। আগামী ১৯ ডিসেম্বর পৌর নির্বাচন নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বৈঠক করা হবে। কমিশন জানিয়েছে, এ বৈঠকে সব আইনশৃঙ্খলা রক্ষকারী বাহিনীর প্রধানদের উপস্থিতিতে সারাদেশে পরিস্থিতি আলোচনা করা হবে। পৌরসভা নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে, ভোটারদের নির্ভয়ে ভোট দিতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিতে কী ধরনের ব্যবস্থা নেয়া যায় সে বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবে। এছাড়া তাদের কাছ থেকে সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিষয়ে ওই বৈঠকে আলোচনা করা হবে বলে জানা গেছে। আগামীতে আপত্তিজনক নারী প্রতীক বাদ দেয়া হবেÑ ইসি সচিব ॥ নির্বাচন কমিশন সচিব বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেন, এবার নয়; আগামী নির্বাচনগুলোতে আপত্তি ওঠে এমন সব প্রতীক বাদ দেয়া হবে। তিনি বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নারী প্রার্থীরা অপমানিত বোধ করেন- এমন প্রতীক রাখা হবে না। এ লক্ষ্যে বিধিমালা ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সংশোধন আনা হবে। বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের নজরে ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, পৌর আইন ও বিধিমালা সংশোধন নিয়ে দ্রুত কাজ করতে হয়েছে। অসাবধানতাবশত এ ধরনের প্রতীক রয়ে গেছে। তফসিল ঘোষণা এবং কাউন্সিলর পদে কমন ব্যালট পেপার ছাপা হয়ে যাওয়ায় এই মুহূর্তে প্রতীক পরিবর্তন করা সম্ভব নয়।
×