ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

নীরব প্রস্থান

প্রকাশিত: ০৪:১০, ১১ ডিসেম্বর ২০১৫

নীরব প্রস্থান

নীরবেই চলে গেল নীরব নামের পাঁচ বছরের শিশুটি। তার এই প্রস্থান বেদনাদায়ক, গভীর মর্মবেদনারও। শিশু নীরবের এই করুণ পরিণতির দায়ভার কার? বাবা-মায়ের আদরের সন্তানটি এভাবে চলে যাবে, নির্মম মৃত্যুকে বরণ করে নেবে, কারও ভাবনায় তা আসে না। গভীর শোক ও বেদনা জাগিয়ে নির্মম মৃত্যুকে বরণ করে নিতে হলো শিশুটিকে। কিন্তু কেন এমন মৃত্যু? সে প্রশ্নের জবাবই বা দেবে কে? খেলতে খেলতে এক সময় মৃত্যুপুরীতে চলে যাবে, হয়ে যাবে লাশ, এমন ভাবনাটা কারও আসার কথা নয়। কিন্তু বাস্তব সত্য হচ্ছে তাই-ই। তাদের স্যুয়ারেজ লাইনের ঢাকনা খোলা থাকায় শিশুটিকে মৃত্যুর দিকে ধাবিত হতে হয়েছে। এমন মৃত্যু কারও কাম্য নয়। কিন্তু দুর্ঘটনা ঘটতে পারে যে কোন সময়। বিশেষ করে ওয়াসার ঢাকনা খোলা ম্যানহোল, স্যুয়ারেজ লাইনগুলো মৃত্যুফাঁদ হয়ে যেখানে অবস্থান করছে, সেখানে অবোধ শিশুরা সেই ফাঁদের শিকার হয়ে যেতে যে পারে, তা নীরবের এই নির্মম প্রস্থানে প্রমাণিত হলো। এর আগে গত বছরের শেষ দিকে চার বছরের শিশু জিহাদের অস্বাভাবিক নির্মম মৃত্যু ঘটেছিল। শাজাহানপুরে পরিত্যক্ত গভীর পানির পাম্পের ভেতর পড়ে যায় শিশু জিহাদ। ফায়ার ব্রিগেড, ওয়াসা, বুয়েটের বিশেষজ্ঞসহ সকলেই আপ্রাণ চেষ্টা করেছে শিশুটিকে উদ্ধারে। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ক্যামেরাসহ অনেক কিছুই ব্যবহার করা হয়। কিন্তু পাম্পের ভেতর পড়ে যাওয়া শিশুটিকে উদ্ধার তো দূরের কথা, তার অবস্থানই শনাক্ত করতে না পেরে অভিযান পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়, তখনই জনতা উদ্ধার করে তাকে। জিহাদকে বাঁচাতে পারেনি কেউ। অবশ্য নীরবকে বাঁচানোর কোন উপায় ছিল না। সমবয়সী আরও দুই বন্ধুর সঙ্গে বাড়ির সামনে মাঠে দৌড়াদৌড়ি করে খেলছিল। সেখানে ওয়াসার স্যুয়ারেজ লাইন রয়েছে। নতুন তৈরি করা লাইনে পর পর দুটি চৌবাচ্চা রয়েছে। তার একটি পুরোপুরি সিমেন্টের পাটাতন দিয়ে ঢাকা। আরেকটি অর্ধেক ঢাকা, প্রায় পাঁচ ফুট পাটাতনের আড়াই ফুট সিমেন্টের পাটাতন দিয়ে ঢাকা, বাকিটুকু ফাঁকা, খেলার এক পর্যায়ে স্যুয়ারেজের ওই ফাঁকা অংশ দিয়ে পড়ে যায় নীরব, সঙ্গে সঙ্গে খেলার সাথীরা বিষয়টি লোকজনকে জানায়। লোকজন স্যুয়ারেজ লাইনের কাছে যেতে যেতেই প্রচ- গতিতে যাওয়া বর্জ্য পানি নীরবকে টেনে নিয়ে যায় স্যুয়ারেজ লাইনের ভেতরে। ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ উদ্ধার অভিযানে নামে। তারা ভাটির দিকে অন্তত ১০টি স্যুয়ারেজ লাইনের ইস্পাতের পাটাতন গ্যাসকাটার দিয়ে দ্রুত কেটে নীরবকে সার্চ লাইট দিয়ে খুঁজতে থাকেন। কিন্তু লাইনের পানির গতি মারাত্মক বেশি থাকায় নীরবকে উদ্ধার করা যায়নি। মৃত্যুর ফাঁদ পাতা নগরীতে নীরবের জীবনদানের মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হলো, জিহাদের মৃত্যুতেও ওয়াসা কর্তৃপক্ষের টনক নড়েনি। আর তা হয়নি বলেই স্যুয়ারেজ লাইনের ঢাকনাটি খোলা রয়েছে। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানও যথাযথ দায়িত্ব পালন করেনি। তারা যদি ঢাকনা বন্ধ রাখত, তবে শিশুটিকে এই নির্মম মৃত্যুকে বরণ করতে হতো না। অবহেলা, গাফিলতির মাত্রা ক্রমশ বেড়ে চলেছে। আর তা রোধ না করায় নগরীর যেখানে সেখানে ঢাকনা খোলা ম্যানহোল ও স্যুয়ারেজ লাইন বিদ্যমান। ওয়াসা কর্তৃপক্ষের উচিত নিজেদের এই গাফিলতিকে স্বীকার করে অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা। কেউ চায় না নীরবরা এভাবে মৃত্যুর মুখে পতিত হোক।
×