ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রতীক নিয়ে প্রচারে নামা যাবে ১৪ ডিসেম্বর থেকে ;###;নারী প্রার্থীদের প্রতীক নিয়ে বিভিন্ন মহলে অসন্তোষ

পৌর নির্বাচনে সারাদেশে প্রার্থীরা প্রচারে ॥ মাঠে উৎসবের আমেজ

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ১০ ডিসেম্বর ২০১৫

পৌর নির্বাচনে সারাদেশে প্রার্থীরা প্রচারে ॥ মাঠে উৎসবের আমেজ

শাহীন রহমান ॥ বিভিন্ন মহলের ব্যাপক অসন্তোষ সত্ত্বেও পৌর নির্বাচনে নারী প্রার্থীদের প্রতীক চুড়ি, পুতুল, ফ্রক ইত্যাদি পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই। নির্বাচন কমিশন জানিয়ে দিয়েছে- সময়ের স্বল্পতার কারণে এসব প্রতীক এখন আর পরিবর্তন সম্ভব নয়। প্রার্থীরা দলীয় পরিচয়ে প্রচার শুরু করলেও ১৪ ডিসেম্বরের আগে প্রতীক নিয়ে নির্বাচনী প্রচারে নামতে পারবেন না। মেয়র প্রার্থীদের দলীয় প্রতীক নিশ্চিত হলেও অন্য প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ হবে ১৪ ডিসেম্বর। প্রার্থীরা প্রতীক ছাড়াই বুধবার থেকে প্রচারণা শুরু করেছেন। প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে দেশের সকল পৌরসভা। বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। সংরক্ষিত মহিলা প্রার্থীদের প্রতীক নিয়ে বিভন্ন মহল থেকে অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়েছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও মূল প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপিসহ বিভিন্ন দলের পক্ষ থেকে বিরূপ প্রতিক্রিয়া জানানো হয়। মহিলা ও শিশুবিয়যক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকিও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, নারীর প্রতীক কেন চুড়ি না হয়ে বিমান হলো না। নারীরা এখন আর শুধু চুড়ি পরে ঘরে বসে থাকেন না, বিমানও চালান। কমিশনে একজন নারী কমিশনার থাকলে এগুলো খেয়াল রাখতে পারতেন। নারীরা আজ সব ক্ষেত্রে সমান যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখছেন। ইসি নারীদের প্রতীক চুড়ি-পুতুল নির্ধারণ করে নারীর অবমাননা করছে। আগামী ৩০ ডিসেম্বর সারাদেশে ২৩৫ পৌরসভায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে মূলত নারীরাই অংশ নিয়ে থাকেন। ইসির পক্ষ থেকেও ইতোমধ্যে নারী প্রার্থীদের জন্য আলাদা প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, যা নিয়ে সারাদেশে সমালোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে। ইসি বরাদ্দকৃত এসব নারী প্রার্থীর প্রতীকের মধ্যে রয়েছে- আঙ্গুর ফল, কাঁচি, গ্যাসের চুলা, চকোলেট, চুড়ি, পুতুল, ফ্রক, ভ্যানিটি ব্যাগ, মৌমাছি ও হারমোনিয়াম। ইসির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে- সংরক্ষিত নারী আসনের প্রার্থীদের প্রতীক তাদের অবমাননার জন্য করা হয়নি। এটা করা হয়েছে মূলত প্রার্থী চেনার জন্য। নির্বাচন কমিশনার মোঃ শাহনেওয়াজ সংরক্ষিত নারী প্রার্থীর প্রতীক নিয়ে সমালোচনার প্রেক্ষিতে বলেন, কমিশন পৌর নির্বাচনের আইন পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বিধিমালাও পরিবর্তন করেছে। বিধিমালা পরিবর্তনের সময় প্রতীক নিয়ে আলোচনার জন্য খুব সময় পাওয়া যায়নি। যে কারণে ওই প্রতীকগুলোই তাড়াহুড়ো করে দেয়া হয়েছে। এ নিয়ে কেউ অভিযোগ দিলে তা বাদ দেয়ার চিন্তাভাবনা কমিশনের রয়েছে বলেও তিনি জানান। কমিশন জানিয়েছে, পৌর নির্বাচনের আগে এসব প্রতীক পরিবর্তনের কোন সম্ভাবনা নেই। কারণ ইতোমধ্যে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হয়েছে। আগামী ১৩ তারিখে প্রার্থিতা প্রত্যাহার শেষেই নারী প্রার্থীদের এসব প্রতীক বরাদ্দ নিয়ে নির্বাচন শুরু করতে হবে। পৌর নির্বাচনের আগের এসব প্রতীক বদল করতে না পারলেও সমালোচনা থেমে নেই। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, পুরুষ প্রার্থীকে পুতুল, গ্যাসের চুলা বা নারীর জন্য বরাদ্দ করা কোন প্রতীক দিলে নিশ্চয়ই তারা গ্রহণ করতেন না। আসন্ন পৌর নির্বাচনে সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রতীক বরাদ্দ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে বিভিন্ন নারী সংগঠনের পক্ষ থেকেও। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে- এ ধরনের প্রতীক বরাদ্দের সিদ্ধান্ত নারীদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ। সংগঠনের সভাপতি আয়েশা খানম বলেন, আজকে তৈরি পোশাকশিল্প, সামরিক বাহিনী, সরকার পরিচালনা সব ক্ষেত্রেই এখন মহিলারা কাজ করছেন। সুতরাং চকোলেট, পুতুল, ভ্যানিটি ব্যাগ- এসব মার্কা আসলে নারীর প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করে। নারী প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ভেতরেও। আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ফজিলাতুন নেছা এ বিষয়ে বলেন, নারীদের এ ধরনের প্রতীক বরাদ্দ দিয়ে কমিশন নারীদের অসম্মান করেছে। এতে কমিশনের দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত হয়েছে যে, নারীরা ঘরেই আবদ্ধ থাকবে। সারাদেশে জমজমাট প্রচারযুদ্ধ শুরু ॥ সারাদেশে ২৩৫ পৌরসভায় প্রার্থীদের শুরু হয়েছে জমজমাট প্রচারযুদ্ধ। জনগণের সমর্থন পেতে এখন তারা ছুটছেন সর্বত্র। বাড়ি বাড়ি, বাজার-হাটে ঘুরে তারা ভোট প্রার্থনা করছেন। পৌর নির্বাচন দলীয় হওয়ায় দলের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনাও বিরাজ করছে। পৌর নির্বাচনে জয়-পরাজয়কে এখন আর প্রার্থীর জয়-পরাজয় হিসেবে দেখছে না তারা। এ নির্বাচনে ভরাডুবি হলে রাজনৈতিকভাবে পরাজয়ের শিকার হতে হবে বলে মনে করছেন। এ কারণে দলের পক্ষে নেতাকর্মীরা আটঘাট বেঁধেই নেমে পড়েছেন। পৌর নির্বাচন দলীয় হওয়ায় অনেকটা জাতীয় নির্বাচনের আবহ বিরাজ করছে সারাদেশে। এদিকে বুধবার থেকেই প্রতীক নিয়ে নির্বাচনী প্রচারের কথা বলা হলেও এখন সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে ইসি। তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে কোন প্রার্থী ১৪ ডিসেম্বরের আগে প্রতীক নিয়ে নির্বাচনী প্রচারে নামতে পারবেন না। তবে পৌর নির্বাচনের ভোটযুদ্ধ শুরু হলেও দলীয় প্রার্থীদের কিছুটা বেকায়দায় পড়তে হচ্ছে বিদ্রোহী প্রার্থীদের কারণে। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পক্ষ থেকে একজন করে প্রার্থী মনোনয়ন দেয়া হলেও দলের একাধিক প্রার্থী এখনও নির্বাচনের মাঠে রয়ে গেছেন। এসব প্রার্থীর কারণে দলের প্রার্থীর ভোটে প্রভাব পড়ার শঙ্কা রয়েছে উভয় দলের মধ্যে। ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বিদ্রোহী প্রার্থীদের সরে দাঁড়ানোর আহ্বান জানানো হয়েছে। দলের আহ্বানের পরও যদি কোন প্রার্থী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন তবে তার বিরুদ্ধে বহিষ্কারসহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার কথা ঘোষণা দেয়া হয়েছে। যদিও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে দলের এখন পর্যন্ত যারা বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে রয়ে গেছেন তারা আগামী ১৩ ডিসেম্বরের মধ্যে তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেবেন। তবে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের অনেক প্রার্থী এখনও নির্বাচনের জন্য অনড় রয়েছেন। স্বতন্ত্র হিসেবে তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন। অপরদিকে একই সমস্য রয়েছে বিএনপির মধ্যেও। যদিও বিদ্রোহী প্রার্থী বিষয়ে দল থেকে এখনও প্রকাশ্যে কিছু বলা হয়নি। জানা গেছে, ভেতরে ভেতরে বিদ্রোহী প্রার্থী বসাতে কাজ করা হচ্ছে। পৌর নির্বাচন দলীয় হলে কমিশনের বিধিমালায় বিদ্রোহী প্রার্থীর অংশগ্রহণের কোন সুযোগ রাখা হয়নি। তবে দলের যেসব নেতাকর্মী প্রার্থী হতে চান তাদের সুযোগ দেয়ার জন্য স্বতন্ত্র প্রার্থীর বিধান রাখা হয়েছে। আর এ সুযোগে উভয় দলের অনেক প্রার্থী মেয়র পদে রয়েছেন। এদিকে বুধবার থেকে প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রতীক নিয়ে প্রচারের অংশ নেয়ার কথা বলা হলেও এখন সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে ইসি। এখন তারা বলছেন, ১৪ ডিসেম্বরের আগে কোন প্রার্থী প্রতীক নিয়ে নির্বাচনী প্রচারে নামতে পারবেন না। প্রার্থীরা যাতে প্রচারের ক্ষেত্রে কোনপ্রকার বৈষম্যের শিকার না হন সে কারণে এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এছাড়াও জানা গেছে, নির্বাচনী বিধিমালায় প্রতীক সংক্রান্ত ধারায় সামান্য ভুলত্রুটি থাকায় তা সংশোধনের জন্যই ১৪ ডিসেম্বরের আগে প্রতীক ব্যবহারের সুযোগ দেয়া হচ্ছে না। এ সময়ের মধ্যে তারা ভুলত্রুটি সংশোধন করতে চায়। তবে কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৪ ডিসেম্বর থেকে প্রতীক নিয়ে প্রচারে প্রার্থীরা প্রচারের জন্য খুব কম সময় পাবেন। ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচন হলে ৩২ ঘণ্টা আগে সব ধরনের প্রচার প্রচারণা বন্ধ করে দিতে হবে। সে অনুযায়ী প্রার্থীরা ২৮ ডিসেম্বর রাত ১২টা পর্যন্ত প্রচার চালাতে পারবেন। ফলে তারা নির্বাচনী প্রচারের জন্য সময় পাচ্ছেন মাত্র ১৪ দিন। অথচ আইন ও বিধি অনুযায়ী একজন প্রার্থী ভোটের ২১ দিন আগেই প্রতীক নিয়ে নির্বাচনের সুযোগ পান। সে অনুযায়ী ৯ ডিসেম্বর থেকেই প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারের সুযোগ পাওয়ার কথা রয়েছে। কমিশন জানিয়েছে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের তারিখ ১৩ ডিসেম্বর নির্ধারিত হওয়ায় ১৪ তারিখের আগে কোন প্রার্থী প্রতীক বরাদ্দ পাচ্ছেন না। ফলে বুধবার থেকে প্রতীক ছাড়া প্রচারে নামলেও প্রতীক নিয়ে নামতে হবে ১৪ তারিখে। কমিশন জানিয়েছে হাতে কম সময় নিয়ে তফসিল ঘোষণা করার কারণেই সময় কম পাচ্ছেন প্রার্থীরা। তবে পৌরসভার সীমানা যেহেতু উপজেলা বা ইউনিয়ন পরিষদের মতো বিশাল এলাকা নিয়ে নয়, তাই ১৪ দিন সময় পৌরসভা নির্বাচনের জন্য কম নয়। পৌরসভা নির্বাচন আইন অনুযায়ী ৩০ ডিসেম্বর প্রথমবারের মতো দলীয়ভিত্তিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এতে দলীয় প্রার্থী বরাদ্দ পাবেন দলের জন্য নিবন্ধত প্রতীকগুলো। আর স্বতন্ত্র ও নির্দলীয় কাউন্সিলররা পাবেন ইসির দেয়া প্রতীক। ইতোমধ্যে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থীদের জন্য ১২টি প্রতীক সংরক্ষিত কাউন্সিলরদের জন্য ১০টি ও সাধারণ কাউন্সিলরদের জন্য ১২টি প্রতীক বরাদ্দ রেখেছেন। দলীয় প্রার্থীদের জন্য প্রতীক বরাদ্দ থাকলেও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কে কোন প্রতীক পাচ্ছেন তা নির্ধারিত হবে ১৪ ডিসেম্বর। এ পরিস্থিতিতে ১৪ ডিসেম্বরের আগে দলীয় প্রতীকে প্রচার না করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে নির্বাচন কমিশন থেকে।
×