ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

কমলাপুর ও মুগদায় পোশাক শ্রমিকদের বিক্ষোভ, অবরোধ

প্রকাশিত: ০৫:১২, ৯ ডিসেম্বর ২০১৫

কমলাপুর ও মুগদায় পোশাক শ্রমিকদের বিক্ষোভ, অবরোধ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনের কাছে বাসচাপায় নিহত পোশাক শ্রমিকের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেয়ার দাবিতে কমলাপুর ও মুগদার বিশ্বরোড এলাকার ব্যস্ততম সড়কটি চার ঘণ্টা অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করেছে পোশাক শ্রমিকরা। এ সময় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা কয়েকটি বাসে ভাংচুর চালিয়েছে। এ সময় কমলাপুর রেলস্টেশনের কাছে চার রাস্তা মোড়, মতিঝিল নটর ডেম কলেজের সামনে টয়েনবি সার্কুলার রোড ও মুগদা বিশ্বরোডের যান চলাচল বন্ধ ছিল। এতে ভয়াবহ যানজটে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে। পরে পুলিশের ক্ষতিপূরণের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে দুপুর ২টায় অবরোধ তুলে নেন শ্রমিকরা। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সোমবার রাতে কমলাপুরের সামনে সড়ক দুঘর্টনায় পোশাক শ্রমিক আকলিমা আক্তার (৩৮) নিহতের ঘটনায় মঙ্গলবার সকাল থেকে অলিও এ্যাপারেলস লিমিটেডের তার সহকর্মীরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে। এ সময় তারা নিহত সহকর্মী আকলিমার পরিবারকে পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ, আহতদের চিকিৎসা, শ্রমিকদের নিরাপদে বাসায় ফেরা ও বাসচালকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। এই সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে এর পার্শ্ববর্তী কমলাপুর ও মুগদার কয়েকটি গার্মেন্টসের শ্রমিকরাও এ বিক্ষোভে অংশ নেয়। এ সময় মুগদায় কয়েকটি বাস ভাংচুর করে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা। বেলা ২টা পর্যন্ত কমলাপুর রেলস্টেশনের কাছে চার রাস্তার মোড় ও মতিঝিলের নটর ডেম কলেজের সামনে টয়েনবি সার্কুলার রোড দিয়ে যান চলাচল বন্ধ থাকে। মতিঝিল বিভাগের পুলিশের উপ-কমিশনার আনোয়ার হোসেন জানান, বেলা ১২টার পর আরামবাগে নটর ডেমের সামনে দিয়ে যান চলাচল কিছুটা স্বাভাবিক হয়। পরে সর্বোচ্চ ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দিলে দুপুর ২টার দিকে শ্রমিকরা কমলাপুরের সামনের রাস্তা থেকেও সরে যায়। তিনি জানান, সোমবার রাত পৌনে ৯টার দিকে কমলাপুর রেলস্টেশনের কাছে চার রাস্তার মোড়ে বলাকা ট্রান্সপোর্টের একটি বাসের চাপায় পোশাক শ্রমিক আকলিমা আক্তার (৩৮) নিহত হন। তার তিন সহকর্মী রেহানা বেগম (২৭), হাজেরা বেগম (৩০) ও জসিম (২৮) আহত হন। ঘটনার পরপরই চালক আরিফসহ (৩২) বাসটি আটক করা হয়। নিহত আকলিমা কমলাপুরের অলিও এ্যাপারেলস লিমিটেড’ কারখানায় কাজ করতেন। থাকতেন মুগদা এলাকায়। সহকর্মী নিহতের খবর পেয়ে রাতেই ওই কারখানার শ্রমিকরা রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখায়। এতে রাতেও ওই এলাকায় কিছু সময় যান চলাচল বন্ধ থাকে। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়। স্থানীয়রা জানান, মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে কমলাপুর এলাকায় অলিও এ্যাপারেলস লিমিটেডের কয়েক শ্রমিক প্রথমে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ শুরু করে। এ সময় পুলিশ বাধা দিলে শ্রমিকরা সরে যায়। এই সংবাদ পেয়ে সকাল সাড়ে ৯টার থেকে ১০টার মধ্যে ওই গার্মেন্টস থেকে অনেক শ্রমিক রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ শুরু করে। এ সময় তারা রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ করে দেয়। পরে আরামবাগের ‘ড্রাইভ স্টার’, জোনাকি হলের সামনের ‘ইপু গার্মেন্ট’ ও ‘অলিও এ্যাপারেলস লিমিটেডের’ শ্রমিকরা আবারও রেলস্টেশনের সামনের সড়কে জড়ো হয়। পরে মতিঝিল থানার আল হেলাল বক্সের সামনে আইডিয়াল স্কুলের কাছে যানবাহন আটকে বিক্ষোভ শুরু করে। অলিও এ্যাপারেলস লিমিটেড’এর শ্রমিক জোনাকী জানান, যে মারা গেছে তার পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। এভাবে যাতে দুর্ঘটনা না হয় তার ব্যবস্থা নিতে হবে। চালকের বিচার করতে হবে। ড্রাইভ স্টারের কর্মী কমলা জানান, আমাদের জানের কোন নিরাপত্তা নেই। বাসা থেকে বেরোলে মনে হয় কখন কোন্ বাসে চাপা পড়ি। চালকরা যেভাবে বেপরোয়া গতিতে বাস চালায়। বলেন, আমিও একজন শ্রমিক। সালমা অভিযোগ করেন, শুধু আকলিমা নন। সাথী ও রোকেয়া নামে আরও দুই শ্রমিক আগের রাতে দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। পুলিশ লাশ দুটি ‘গুম’ করে ফেলেছে। সালমার অভিযোগ অস্বীকার করে শাজাহানপুর থানার পরিদর্শক আব্দুল মাবুদ জানান, এটা গুজব। বাসচাপায় একজনই মারা গেছে। আহত আছেন তিনজন। এ সময় ওই পুলিশ পরিদর্শক সালমাকে উদ্দেশ করে তিনি জানান, যা শুনেছেন তা সত্যি নয়। ইতোমধ্যে চালক আরিফকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে। শ্রমিকদের বিক্ষোভের মধ্যেই তখন উর্ধতন পুলিশ কর্মকর্তা কারখানার মালিকপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে সমঝোতার চেষ্টা চলে। এ সময় বিজিএমইএ’র ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট বিভাগের কর্মকর্তা মঞ্জুর খালেদ ঘটনাস্থলে আসেন। পরে পুলিশ কর্তৃপক্ষ ক্ষতিপূরণের বিষয়টি নিশ্চিত করার আশ্বাস দিলে বিকেলে শ্রমিকরা রাস্তা ছেড়ে চলে যায়।
×