ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ব্রাহ্মণবাড়িয়া, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, ভালুকা, মোহনগঞ্জ, দৌলতপুর, কালকিনি

আজ হানাদারমুক্ত দিবস

প্রকাশিত: ০৬:২৪, ৮ ডিসেম্বর ২০১৫

আজ হানাদারমুক্ত দিবস

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ ১৯৭১ সালের ৮ ডিসেম্বর হানাদার মুক্ত হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, ভালুকা, মোহনগঞ্জ, দৌলতপুর ও কালকিনি। এ উপলক্ষে স্থানীয় প্রশাসন ও মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ করেছে। এছাড়া বিভিন্ন কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে সোমবার চুয়াডাঙ্গা ও গাইবান্ধা মুক্ত দিবস পালন করা হয়েছে। খবর নিজস্ব সংবাদদাতাদের- ব্রাহ্মণবাড়িয়া ॥ ৮ ডিসেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়া মুক্ত দিবস। তৎকালীন এমএনএ ও আওয়ামী লীগ নেতা প্রয়াত আলী আজম ভূঁইয়া ও মুক্তিযুদ্ধের ৩নং সেক্টরের গেরীলা উপদেষ্টা প্রয়াত এডভোকেট লুৎফুল হাই সাচ্চুসহ অন্যান্য মুক্তিযুদ্ধাদের নিয়ে শহরে প্রবেশ করে দেখতে পান পাকবাহিনীর নারকীয় হত্যাযজ্ঞের দৃশ্য। পাকবাহিনী শহর ছেড়ে যাবার সময় কলেজ হোস্টেল অন্নদা স্কুল বডিংসহ বিভিন্ন রেশন গুদামে অগ্নিসংযোগ করে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর মুক্ত হওয়ার পর তৎকালীন পূর্বাঞ্চলের লিবারেশন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান জহুর আহাম্মেদ চৌধুরী আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া মুক্ত দিবস উপলক্ষে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচী দিয়েছে। পটুয়াখালী ॥ ৮ ডিসেম্বর পটুয়াখালী মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে পটুয়াখালী শহরকে পাক হানাদারমুক্ত করে লাল সবুজের পতাকা উড়ান পটুয়াখালী স্বাধীনতার সূর্য সন্তানরা। ঝালকাঠি ॥ ৮ ডিসেম্বর ঝালকাঠি ও নলছিটি হানাদারমুক্ত দিবস। এ দিন শহরে অবস্থানকারী পাকা হানাদার বাহিনী গানবোর্ডযোগে পালিয়ে যায়। এই খবর মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে পৌঁছলে বিভিন্ন এলাকা থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের ছোট ছোট দল চারদিক থেকে ঝালকাঠি থানায় অবরুদ্ধ করে। সন্ধ্যায় মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সেলিম শাহানাজ ঝালকাঠি পৌঁছালে তৎকালীন থানার পুলিশ বাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে অস্ত্র হস্তান্তর করে। সংঘর্ষ ছাড়াই ঝালকাঠি ও নলছিটি হানাদারমুক্ত হয়। পিরোজপুর ॥ ৮ ডিসেম্বর পিরোজপুর হানাদারমুক্ত হয়। পিরোজপুরে মেজর জিয়াউদ্দিনের নেতৃত্বে গড়ে ওঠে বিশাল মুক্তিবাহিনী। এপ্রিলে মুক্তিযোদ্ধারা চলে যান সুন্দরবন। আর সেখান থেকেই পরিচালিত হয় গেরিলা যুদ্ধ। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল মুক্ত হওয়ার খবরে ততক্ষণে পাক হায়েনারা বরিশালের উদ্দেশে নদী পার হয়ে শহর ছেড়ে পালিয়ে যায়। ভালুকা ॥ আজ ভালুকা মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সনের এই দিনে পাক হানাদার মুক্ত হয় ভালুকা। দীর্ঘ ৯ মাসের বিভিন্ন যুদ্ধে আফছার উদ্দীনের পুত্র নাজিম উদ্দীনসহ ৪৭ জন মুক্তিযোদ্ধা শাহাদাত বরণ করেন। স্বাধীনতা যুদ্ধের মহান দলিল ৯ম খ-ে তার বীরত্বগাঁথা রচিত হয়েছে। দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর মেজর আফছার বাহিনীর কাছে ভালুকা ক্যাম্পের কয়েক হাজার রাজাকার আলবদর ও পাকসেনার আত্মসর্মপণের মধ্য দিয়ে ৮ ডিসেম্বর ভালুকা পাক হানাদার মুক্ত হয়। দিবসটি পালন উপলক্ষে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ দিনব্যাপী বিস্তারিত কর্মসূচী গ্রহণ করেছে। আলোচনা সভা, র‌্যালি, কবর জিয়ারত ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। মোহনগঞ্জ ॥ ৮ ডিসেম্বর মোহনগঞ্জ মুক্ত হয়। অগ্নিঝরা এই দিনে রণাঙ্গনের সম্মুখ যুদ্ধে প্রচ- প্রতিরোধের মুখে পাক হানাদার বাহিনী মোহনগঞ্জের পশ্চিম অভিমুখে বারহাট্টার দিকে পালিয়ে যায়। মুক্ত হয় মোহনগঞ্জ। এই দিনের সম্মুখ যুদ্ধের নেতৃত্বে ছিলেন গোলাম এরশাদুর রহমান, ইলিয়াস চৌধুরী, গোলাম মোওলা, কালা মিয়া প্রমুখ। দৌলতপুর ॥ মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাকসেনাদের সন্মুখ যুদ্ধসহ ছোট-বড় ১৬টি যুদ্ধ হয়। এ সকল যুদ্ধে ৩৫ মুক্তিযোদ্ধাসহ কয়েক’শ নারী-পুরুষ শহীদ হন। ৮ ডিসেম্বর সকালে উপজেলার আল্লার দর্গায় পাকসেনাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধ হয়। এ যুদ্ধে শহীদ হন বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিক। মুক্তিযোদ্ধাদের তীব্র প্রতিরোধের মুখে টিকতে না পেরে পিছু হটতে বাধ্য হয় পাকসেনারা। এরপর দৌলতপুরকে হানাদার মুক্ত ঘোষণা করেন তৎকালীন মুক্তিযোদ্ধা ৮নং সাব-সেক্টর কমান্ডার মেজর নুরুন্নবী। দিবসটি পালনের লক্ষে দৌলতপুর মুক্তিযোদ্ধাগণ আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছে। কালকিনি ॥ ৮ ডিসেম্বর কালকিনি মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এ দিনে কালকিনির মুক্তিযোদ্ধাদের তোপের মুখে পড়ে পাক হানাদারবাহিনী পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। উপজেলার পাকহানাদারদের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত করিমগঞ্জ বাজার, লালপুল, মাদ্রাবাজার ও হোগলপাতিয়াসহ বেশ কয়েকটি স্থানে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে দিনব্যাপী পাকবাহিনীর গোলাগুলি হয়। এতে মুক্তিযোদ্ধারা পাকহানাদারদের পরাজিত করে এবং তারা কালকিনি ছেড়ে পালিয়ে যায়। সাতক্ষীরা ॥ সোমবার সাতক্ষীরা মুক্ত দিবস উদযাপন হয়েছে নানা আয়োজনে। জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের আয়োজনে সকালে সাতক্ষীরা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের উদ্যোগে বের করা হয় শোভাযাত্রা। পরে জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কার্যালয়ে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট কমান্ডার মোশাররফ হোসেন মশু’র সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন জেলা আ’লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ প্রশাসক মুনসুর আহমেদ। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম, প্রেসক্লাব সভাপতি আবু আহমেদ, সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহ আব্দুল সাদী প্রমুখ। অন্যদিকে দিবসটি উপলক্ষে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে এ আলোনাসভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভায় সভাপত্বি করেন প্রেসক্লাব সভাপতি আবু আহমেদ। চুয়াডাঙ্গা ॥ সোমবার চুয়াডাঙ্গা মুক্ত দিবস। এ উপলক্ষে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করে। সকালে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের পক্ষ থেকে স্মৃতিসৌধে পুষ্পমাল্য অর্পণ করা হয়। পরে মুক্তিযোদ্ধারা শহরে এক র‌্যালি বের করে প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করেন। পরে চুয়াডাঙ্গা টাউন ফুটবল মাঠে আয়োজিত পক্ষ কালব্যাপী বিজয় মেলার উদ্ধোধন করা হয়। এ উপলক্ষে আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন সদর উপজেলা কমান্ডার আশু বাঙালী। বক্তব্য দেন জেলা প্রশাসক সায়মা ইউনুস, জেলা পরিষদ প্রশাসক মাহফুজুর রহমান মনজু, পৌরমেয়র রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার টোটন, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবু হোসেন প্রমুখ। গাইবান্ধা ॥ হানাদার মুক্ত দিবস উপলক্ষে সোমবার জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ করে। কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে শহরে র‌্যালি, দোয়া খায়ের, আলোচনা সভা। মাহবুব এলাহী রঞ্জু বীরপ্রতীকের নেতৃত্বে একটি বর্ণাঢ্য র‌্যালি শহর প্রদক্ষিণ করে পৌর বিজয় স্তম্ভে গিয়ে শেষ হয়।
×