ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

কক্সবাজারে বোমা তৈরির প্রশিক্ষণে আরএসও-জামায়াত মিশন!

আত্মঘাতী বোমা হামলায় প্রস্তুত করা হচ্ছে ৪০ রোহিঙ্গা পরিবারকে

প্রকাশিত: ০৬:০১, ৮ ডিসেম্বর ২০১৫

আত্মঘাতী বোমা হামলায় প্রস্তুত করা হচ্ছে ৪০ রোহিঙ্গা পরিবারকে

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ নিষিদ্ধ সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের পক্ষ হয়ে কক্সবাজার ও বান্দরবানের পাহাড়ী এলাকায় জামায়াতের সহযোগিতায় রোহিঙ্গা জঙ্গী আরএসও এবং শিবির ক্যাডাররা বোমা তৈরির প্রশিক্ষণ নিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আরএসও জঙ্গীরা কয়েকটি রোহিঙ্গা পরিবারকে আত্মঘাতী বোমা হামলায় উদ্বুদ্ধ করে তুলতে চালিয়ে যাচ্ছে এ কাজ। নিষিদ্ধ সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের পক্ষে কয়েকজন জামায়াত নেতা গোপনে এ কাজে সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে কক্সবাজার কলেজ ছাত্রলীগের নেতা রাজিবুল ইসলামের ওপর সশস্ত্র শিবির ক্যাডারদের হামলা ও রগ কর্তনের ঘটনায় আহমাদ নামে এক জঙ্গীপুত্রের অর্থদাতা হিসেবে ভূমিকা রয়েছে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। জানা যায়, সম্প্রতি কক্সবাজার শহরের তারাবনিয়ারছড়া এলাকা থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও বিস্ফোরকদ্রব্যসহ মিয়ানমারের দুই জঙ্গীকে গ্রেফতার করেছিল র‌্যাব। আটক দুই জঙ্গী মিয়ানমারের মংডু উকিলপাড়ার মোঃ ইউনুছ ও জামবইন্ন্যা এলাকার মোঃ রফিক ওই সময় স্বীকার করেছিল- এদের দলে আরও ১০ জন সক্রিয় কর্মী আছে। এরা বাঁশখালী ও বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িতে অবস্থান করে থাকে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের চোখ ফাঁকি দিয়ে ওই সব জঙ্গী সদস্য বর্তমানে কক্সবাজারে বিভিন্ন ভাড়া বাসায় ও জাতীয় পরিচয়পত্র হাতিয়ে নেয়া কতিপয় রোহিঙ্গা নেতার তত্ত্বাবধানে ঘাপটি মেরে রয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। ওই আরএসও ক্যাডাররা কথিত জিহাদের জন্য ব্রেন ওয়াশ করাচ্ছে অন্তত ৪০টি রোহিঙ্গা পরিবারকে। নাশকতা ও বেআইনী কাজে কিছুসংখ্যক মহিলাকে টার্গেট করে এ অপতৎপরতা চালাচ্ছে ওরা। এ অপকর্মের তদারকিতে কমপক্ষে দুই মাস পর পর ছদ্মবেশে বিদেশী জঙ্গীরা কক্সবাজারে আসে বলে জানা গেছে। তারা সৈকত এলাকায় তারকামানের একটি হোটেলে অবস্থান করে আরএসও ক্যাডারদের কর্মতৎপরতার খোঁজখবর ও আর্থিক সহযোগিতা দিয়ে ফিরে যায় বলে সূত্রটি দাবি করেছে। জামায়াতের এক নেতার সঙ্গে রোহিঙ্গা জঙ্গী আবু ছালেহ ওরফে ছালেহ আহমদের আত্মীয়তার বন্ধন থাকায় জামায়াতীদের সঙ্গে আরএসও ক্যাডারদের সখ্য গভীরতর হয়ে উঠেছে। জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, অপরাধীদের ধরতে থেমে নেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের অভিযান। নাশকতা সৃষ্টি পরিকল্পণাকারীদের গ্রেফতারকল্পে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। ওই বেআইনী কাজে জড়িত ১০ রোহিঙ্গা জঙ্গীর বিরুদ্ধে ইতোপূর্বে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্ট পাঠিয়েছেন বলে সূত্র জানিয়েছে। একাধিক সূত্রে জানা যায়, শহরের দক্ষিণ রোমালিয়ারছড়ায় বসবাসকারী রোহিঙ্গা নেতা হাফেজ এমদাদ, ভয়ঙ্কর আরএসও জঙ্গী মৌলভী আবু ছালেহ ও হাফেজ আহমদের নেতৃত্বে পিএমখালীর জুমেরছড়া, শহরের পাহাড়তলী, ছত্তারঘোনা ও হালিমাপাড়া এলাকায় উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মৌলভী নুরুল হক, মৌলভী মোহাম্মদ নুর, মোঃ সোয়েব, শাপলাপুরের মোঃ আমিন, পাহাড়তলী ওয়ামি একাডেমি মসজিদের ইমাম মোঃ রফিক, হাসেমিয়ার পাশে বসবাসকারী মৌলভী শফিক ও শামসুল আলম রোহিঙ্গা ও ছাত্রশিবির ক্যাডারদের বোমা তৈরির প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। দক্ষিণ রোমালিয়ারছড়া, পাহাড়তলী এবং বিসিক এলাকায়ও তাদের চিহ্নিত কিছু বাসা রয়েছে। ওই সব বাসার চতুর্দিকে পাহারা বসিয়ে রাতের বেলায় তারা গোপনে প্রতি মাসে মিটিং, আত্মঘাতী বোমা হামলায় উদ্বুদ্ধকরণ ও বোমা তৈরিসহ নানান রকমের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে বলে সূত্রটি আভাস দিয়েছে। এদিকে, সশস্ত্র শিবির ক্যাডারদের সঙ্গে গভীর সখ্য রয়েছে রোহিঙ্গা জঙ্গী এমদাদের প্রথম পুত্র আহমাদ লতিফের। মিটিং-মিছিল ও শিবিরের ডাকে তাৎক্ষণিক সাড়া মেলে বলে কক্সবাজার জেলা শিবির নেতাদের আস্থাভাজন হয়ে ওঠেন তিনি। সূত্র আরও জানায়, যে কোন নাশকতা ও অরাজকতা সৃষ্টির কাজে শিবির ক্যাডারদের মোটা অঙ্কের টাকা বিলি করে থাকে ওই জঙ্গীপুত্র আহমাদ লতিফ। জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইমরুল হাসান রাশেদ সোমবার জনকণ্ঠকে বলেন, জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে রোহিঙ্গা জঙ্গীদের সখ্য থাকার অভিযোগ দীর্ঘদিনের।
×