ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বরিশালকে হারিয়ে শেষ চারে কুমিল্লা

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ৮ ডিসেম্বর ২০১৫

বরিশালকে হারিয়ে শেষ চারে কুমিল্লা

মিথুন আশরাফ ॥ কথাতেই আছে, ‘যত গর্জে তত বর্ষে না’। টি২০ ক্রিকেটের দানবীয় ব্যাটসম্যান ক্রিস গেইলের বেলাতে এ কথার পুরোটাই মিলছে। ঢাকায় আসার আগে বলেছিলেন, ‘আরেকটা (শতক) ধরে রাখ।’ আর ঢাকায় পা রেখে বলেছিলেন, ‘পরিকল্পনা শুধু ছক্কা হাঁকানো।’ না শতক পাচ্ছেন, না ছক্কাও হাঁকাতে পারছেন গেইল। তাতে হঠাৎ ‘গেইল নির্ভর’ দল হয়ে ওঠা বরিশাল বুলসেরও বারোটা বাজছে। সোমবার কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের কাছে ৭ উইকেটে হেরেছে বরিশাল। তাতে টানা দুই ম্যাচে বাজেভাবে হার হলো বরিশালের। গেইল দুই ম্যাচেই ৮ রানের বেশি করতে পারলেন না! মাশরাফি বিন মর্তুজা বল না করে শুধু মাঠে থেকে নেতৃত্ব দিয়েই টানা দুই ম্যাচে দলকে জিতিয়ে দিলেন। বরিশালের বিপক্ষে যে ফিরতি লেগেও জিতল কুমিল্লা, তাতে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগের (বিপিএল টি২০) তৃতীয় আসরে সবার আগে শেষ চারে উঠে গেল মাশরাফির দল। প্রথমবার বিপিএলে অংশ নিয়েছে কুমিল্লা। প্রথমবারেই সবার আগে শেষ চারে খেলার যোগ্যতা করে নিল দলটি। বরিশালের বিপক্ষে ম্যাচটিতে তো হেসে খেলে জিতল। টস জিতে কুমিল্লা। বরিশালকে আগে ব্যাট করতে পাঠায়। আগেরদিন ৫৮ রানেই অলআউট হয় বরিশাল। বিপিএলের ইতিহাসের সবচেয়ে কম রানে গুটিয়ে যাওয়ার লজ্জার রেকর্ড গড়ে। এরপর বরিশালের অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ গেইলকে নিয়ে বলেছিলেন, ‘ক্রিস গেইল একটাই। দ্বিতীয় নেই। আজ (রবিবার) ক্লিক করেনি।’ আর দলের এমন অবস্থার জন্য বলেছিলেন, ‘আবার হতে পারে।’ গেইলও নৈপুণ্যে ফিরতে পারল না। বরিশাল আবারও অল্প রানেই বাঁধা পড়ল। ২০ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ১০৫ রান করল বরিশাল। সর্বোচ্চ ২৬ রান করলেন মাহমুদুল্লাহ। আসহার জাইদি ২ উইকেট নেন। বরিশাল যে আবারও হারতে যাচ্ছে তা বোঝাই গেছে। আহমেদ শেহজাদের অপরাজিত ৭৬ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ১৭.৩ ওভারে ১০৬ রান করে জিতে কুমিল্লা। কুমিল্লার ইনিংসও শুরুতেই ধসে যায়। প্রথম বলেই লিটন কুমার দাসকে আউট করে দেন সাজেদুল ইসলাম। দলের যখন ১৪ রান, তখন রানের খাতা খোলার আগেই ইমরুল কায়েসও সাজঘরে ফেরেন। বরিশালের ইনিংসের চিত্র যেন কুমিল্লার ইনিংসেও রচিত হতে যাচ্ছিল। এমন সময়ে দুই পাকিস্তানী ক্রিকেটার আহমেদ শেহজাদ ও শোয়েব মালিক মিলে দলকে একটু ভরসা দেন। তাও ৪৮ রানের বেশি করতে পারেননি দুইজন। এমন সময় গিয়ে ৮ রান করা মালিক আউট হয়ে গেলে বরিশাল যেন ক্ষীণ স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। মুহূর্তেই সেই স্বপ্ন অলৌকিক মনে হতে থাকে আবার। শেহজাদ ও আসহার জাইদি যে ছক্কা-চার হাঁকাতে থাকেন। এ দুইজনই ১৫ বল বাকি থাকতেই ম্যাচ জিতিয়ে দেন। জাইদির ব্যাট থেকে আসে অপরাজিত ২০ রান। চট্টগ্রামে ঢাকা ডায়নামাইটসের বিপক্ষে ম্যাচে বরিশালের ওপেনার ওয়েস্ট ইন্ডিজের এভিন লুইস ঝড়ো ইনিংস খেলেন। অপরাজিত ১০১ রান করে দলকে জেতান। বিপিএলের এবারের আসরের প্রথম সেঞ্চুরিয়ান হন। তখন থেকেই গেইল-লুইস ওপেনিং জুটি নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। দুই ম্যাচে দুইজন ওপেনিং করলেন, টানা ব্যর্থ হলেন। না গেইল, না লুইস; কিছুই করে দেখাতে পারলেন না। মাশরাফি জানেন, স্পিনে গেইল কতটা দুর্বল। আর তাই তো শুরু থেকেই শোয়েব মালিক ও শুভগত হোমকে বোলিংয়ে আনলেন। তাতে তড়িৎ গতিতে ফলও মিলে গেল। গেইল যেন জড়তায় ভুগছেন। ইনজুরি থেকে ফিরে বিপিএলে খেলতে নামলেও জড়তা কাটাতে পারছেন না। চতুর্থ ওভারের চতুর্থ বলে গিয়ে শুভগতর বলে একটি চার মারলেন গেইল। পরের ওভারেই মালিকের করা বলে এলবিডব্লিউ হয়ে গেলেন। যেন বরিশালের সব আশা ভরসাও শেষ হয়ে গেল। গেইল সমর্থকরা চরম হতাশ হলেন আবারও। ৮ রানের বৃত্তেই আটকা পড়ে রইলেন টি২০ ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন এ ব্যাটসম্যান। গেইল আউটের পর ৪৫ রানেই ৪ উইকেটের পতন ঘটে যায়। ১০ ওভারে মাত্র ৪২ রান হয় বরিশালের। গেইল, লুইস, মেহেদি মারুফ ও রনি তালুকদারের আউটের পর দলকে ১০০ রানের বেশিতে নিয়ে কাউকে হাল ধরা ছাড়া উপায় ছিল না। মাহমুদুল্লা-সাব্বির মিলে সেই হাল ধরলেন। পঞ্চম উইকেটে গিয়ে দুইজন মিলে ৪৩ রানের জুটি গড়েন। যেই দলের স্কোরবোর্ডে ৮৮ রান জমা হয়, মাহমুদুল্লাহ ও সাব্বির দুইজনই সাজঘরে ফেরেন। এরপর যে ১৩ বল থাকে, তা খেলে সেকুগে প্রসন্ন (১৫*) ও রায়াদ এমরিট (২*) দলকে ১০৫ রানে নিয়ে যান। এত কম রান করে কী আর জেতার আশা করা যায়? কুমিল্লা আরাম আয়েশে খেলেই জয় তুলে নেয়। সেই সঙ্গে শেষ চারে খেলাও নিশ্চিত করে নেয়।
×