ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

যুদ্ধাপরাধী বিচার;###;রফিকুজ্জামানের জবানবন্দী

আশরাফ, শরিফ, মান্নানসহ রাজাকাররা আমার বাবাকে হত্যা করে

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ৮ ডিসেম্বর ২০১৫

আশরাফ, শরিফ, মান্নানসহ রাজাকাররা আমার বাবাকে হত্যা করে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত জামালপুরের আলবদর বাহিনীর উদ্যোক্তা আশরাফ হোসেনসহ ৮ রাজাকারের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের ৪র্থ সাক্ষী রফিকুজ্জামান মল্লিক ও ৫ম সাক্ষী এ এফ এম হেদায়েতুল ইসলাম ওরফে ফারুক তার জবানবন্দী প্রদান করেছেন। জবানবন্দীতে ৪র্থ সাক্ষী রফিকুজ্জামান মল্লিক বলেন, একাত্তরের ৯ জুলাই মাঝ রাতে আসামি আশরাফ, শরিফ, মান্নানসহ রাজাকাররা আমার বাবাকে গুলি করে হত্যা করে। ৫ম সাক্ষী হেদায়েতুল ইসলাম বলেন, একাত্তরের ১১ জুলাই আমার ভাগিনা আতাউর রহমান আমাকে জানায়, তার মামা নুরুল আমিন মল্লিকের লাশ ব্রহ্মপুত্র নদে ভাসছে। তখন আমরা সেই ঘাটে গিয়ে ভাসমান লাশটিকে তুলে আনি। এবং নুরুল আমিন মল্লিকের লাশটি দাফন করি। সাক্ষীদের জবানবন্দী শেষে আসামিপক্ষের আইনজীবী তাদের জেরা করেন। পরবর্তী সাক্ষীর জন্য আজ মঙ্গলবার দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। বিচারপতি শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে দুই সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ আদেশ প্রদান করেছেন। চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হক ছুটিতে রয়েছেন। এ সময় সাক্ষীকে সাক্ষ্যদানে সহযোগিতা করেন প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ, ব্যারিস্টার তাপস কান্তি বল, রেজিয়া সুলতানা চমন। আসামিপক্ষে ছিলেন এ্যাডভোকেট আব্দুস সোবহান তরফদার ও এ্যাডভোকেট এস এম মিজানুর রহমান। সাক্ষী রফিকুজ্জামান মল্লিক বলেন, একাত্তরের ৯ জুলাই রাতে আমার দাদার কান্নাকাটি শুনে ঘুম ভাঙ্গে। আমাদের বাসাটি ছিল দু’তলা। ওই আসামিরা আমার বাবাকে আমাদের বর্তমান শহরের বাসা থেকে ধরে নিয়ে যায়। আমার বাবাকে ধরে নিয়ে যাওয়ার সময় আমি আমাদের বাড়ির নিচ তলায় আমার দাদা-দাদির সঙ্গে ছিলাম। ঘুম ভেঙ্গে দেখতে পাই, আমাদের কক্ষের দরজা খোলা এবং আমার দাদার বুকে রাইফেল তাক করা অবস্থায় আছে। আমার দাদা কান্নাকাটি করে বলছিল যে, আশরাফ, শরীফ ও মান্নান, তোরা আমার ছেলের সর্বনাশ করিস না। এরপর বদর বাহিনীর লোকজন আমার বাবা নুরুল আমিন মল্লিককে আমাদের বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যায়। ওই রাতে আমরা কেউ বাড়ির বাইরে যাইনি। পরদিন সকালে আমার দাদা, জেঠা ও অন্যান্য আত্মীয়স্বজন আমার বাবাকে খুঁজতে বাইরে যান। তারা আসামি শরীফ হোসেন, মক্তব কবিরাজ, ইউসুফ স্যারসহ আরও অনেকের কাছে আমার বাবার খোঁজে যায়। তারা আশ্বাস দিলেন আমার বাবাকে তারা ফেরত দিবেন। কিন্তু সারাদিন আমার বাবার কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি। পরের দিন অর্থাৎ একাত্তরের ১১ জুলাই আমার বাবার লাশ ব্রহ্মপুত্র নদের চাপাতলা ঘাটে পাওয়া য়ায়। বাবার লাশ যখন পাওয়া যায় তখন তার হাত-পা বাঁধা ছিল, মুখে কাপড় গোঁজা ছিল। শরীরে বেয়নটের খোঁচা ও গুলির আঘাতের চিহ্ন ছিল। আমার বাবা নিহত হওয়ার পর আমার দাদা-দাদি মারা যায়। অন্যদিকে এই মামলার ৫ম সাক্ষী হেদায়েতুল ইসলাম বলেন, একাত্তরের ১১ জুলাই আমার ভাগিনা আতাউর রহমান আমাকে জানায়, তার মামা নুরুল আমিন মল্লিকের লাশ ব্রহ্মপুত্র নদে ভাসছে। তখন আমরা সেই ঘাটে গিয়ে ভাসমান লাশটিকে তুলে আনি এবং নুরুল আমিন মল্লিকের লাশটি দাফন করি। এ সাক্ষী দু’জন আসামিদের বিরুদ্ধে ১, ২ ও ৩ নম্বর অভিযোগের ওপর সাক্ষ্য দেন। এর মধ্যে শুধু ৩ নম্বর অভিযোগের ওপর সাক্ষ্য দিয়েছেন চতুর্থ সাক্ষী। মামলার ৮ আসামির মধ্যে দু’জন এ্যাডভোকেট শামসুল হক ওরফে বদর ভাই এবং এস এম ইউসুফ আলী গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছেন। পলাতক বাকি ছয়জন হলেন- আলবদর বাহিনীর উদ্যোক্তা মোঃ আশরাফ হোসেন, অধ্যাপক শরীফ আহমেদ ওরফে শরীফ হোসেন, মোঃ আব্দুল হান্নান, মোঃ আব্দুল বারী, মোঃ হারুন ও মোঃ আবুল কাসেম। তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি ও আত্মসমর্পণের জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেয়া হলেও তারা আত্মসমর্পণ করেননি বা গ্রেফতার হননি। সাক্ষ্যগ্রহণের পর চতুর্থ সাক্ষীর জেরা সম্পন্ন করেছেন পলাতক মোঃ আশরাফ হোসেন, অধ্যাপক শরীফ আহমেদ ওরফে শরীফ হোসেন ও মোঃ আব্দুল হান্নানের আইনজীবী আব্দুস সোবহান তরফদার এবং এসএম ইউসুফ আলীর আইনজীবী এসএম মিজানুর রহমান। পঞ্চম সাক্ষীর জেরা অসমাপ্ত অবস্থায় মুলতবী ঘোষণা করা হয়।
×