ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

দ্রুত বদলাচ্ছে গ্রামীণ জীবন ;###;সৌর বিদ্যুতের কল্যাণে চরেও চলছে লাইট, ফ্যান, টিভি ;###;হাতে হাতে স্মার্টফোন, মেলে মোবাইল ফোন রিচার্জের সুবিধা, কম্পিউটারাইজড জন্মনিবন্ধন সনদপত্র

ডিজিটাল বাংলাদেশ ॥ আর স্বপ্ন নয়

প্রকাশিত: ০৫:২৪, ৮ ডিসেম্বর ২০১৫

ডিজিটাল বাংলাদেশ ॥ আর স্বপ্ন নয়

এম শাহজাহান ॥ পদ্মার চরে জেগে ওঠা এক গ্রাম চর সুলতানপুর। কয়েক দশক আগেই ফরিদপুরের এই গ্রামটিতে বসতি স্থাপন শুরু হয়েছে। তবে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও চিকিৎসার মতো মৌলিক অধিকার থেকে অনেকটাই বঞ্চিত ছিল চর সুলতানপুরবাসী। নদীভাঙ্গা মানুষ হিসেবে ছোট করে দেখা হতো বাসিন্দাদের। চরের মানুষ হিসেবেই যেন ওরা ছিল নিন্দনীয়। তবে সময়ের বিবর্তনে এখন সবকিছুতেই পরিবর্তনের ছোঁয়া। বদলে গেছে চর সুলতানপুরবাসীর জীবনও। গ্রামের ছেলেমেয়েরা স্কুল-কলেজে পড়াশোনা করে। তাদের হাতে হাতে এখন দেখা মেলে স্মার্ট ফোনের। সৌরবিদ্যুতের কল্যাণে গ্রামে চলছে লাইট, ফ্যান ও টেলিভিশন। হাত বাড়ালেই মিলছে বিকাশ, আছে মোবাইল ফোন রিচার্জের সুবিধা। টেলিভিশনে ডিশ এন্টেনার সংযোগ থাকায় হলিউডের এঞ্জেলিনা জোলি ও পপ তারকা ব্রিটনিকে চেনে গ্রামের মানুষ। ইউনিয়ন অফিসের অনলাইন সুবিধায় পাচ্ছে কম্পিউটারাইজড জন্ম নিবন্ধন সনদপত্র। আর এসব সম্ভব হচ্ছে আইসিটি খাতে সরকারের বিশেষ সাফল্যের কারণে। ডিজিটাইজেশনের জোয়ারে ভাসছে দেশ। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের প্রক্রিয়া দ্রুতগতিতে এগোচ্ছে। তবে এতসবের পরও মানসম্মত শিক্ষার অভাব, অপ্রতুল মানবসম্পদ সরবরাহ, পেশাদারিত্ব, ব্যবস্থাপনা ও তহবিল সঙ্কট এবং অবকাঠামো উন্নয়নের মতো চ্যালেঞ্জ রয়েছে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে। তবে এসব চ্যালেঞ্জ দূর করতে শিক্ষার মানোন্নয়নে প্রণোদনা দেয়া, আইটি শিল্পে অর্থায়ন, অবকাঠামো উন্নয়নে গুরুত্ব দেয়া এবং নীতি ও বাজেট সহায়তার কথা বলছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন চ্যালেঞ্জসমূহ মোকাবেলা করা গেলে সরকার ঘোষিত ২০২১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন পূরণ হবে। জানা গেছে, গত ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী অঙ্গীকার ছিল তথ্যপ্রযুক্তি-ভিত্তিক ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার। ওই সময় আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, এটা শুধু শহরভিত্তিক নয়, প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চলের মানুষও যাতে সমান সুযোগ, সমান সেবা এবং তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারে পারদর্শিতা অর্জন করতে পারে সেই লক্ষ্য নিয়েই ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নের কথা বলা হয়েছে। এই স্বপ্ন এখন অনেকটা পূরণ হওয়ার পথে। রূপকল্প-২১ সামনে রেখে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশে বিনির্মাণের স্বপ্ন শতভাগ পূরণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে মানবসম্পদ উন্নয়নের জন্য সরকার ই-শিক্ষায় জোর দেয়া হয়েছে। শিক্ষাক্ষেত্রে আইসিটি মাস্টার প্ল্যান (২০১২-২০২১) বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে। আগামী ’২১ সালের মধ্যে আইটি শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। ই-গবর্নেন্স এবং ই-বাণিজ্যকে গুরুত্ব দিয়ে এই দুই খাতে সর্বোচ্চ বিনিয়োগের পরিকল্পনা করেছে সরকার। গত ছয় বছরে জাতীয় বাজেটে আইটি খাতে প্রায় তিনগুণ বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর গত ২০০৯-১০ অর্থবছরের ২ হাজার ৩৫৭ কোটি টাকা থেকে বরাদ্দ বাড়িয়ে চলতি বাজেটে ৬ হাজার ১০৭ কোটি টাকা করা হয়েছে। বরাদ্দ বৃদ্ধির হার ১৬০ শতাংশ। আগামী বাজেটেও এই বরাদ্দ বাড়ানোর ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এছাড়া আইসিটি খাতকে প্রথম সারির রফতানিমুখী শিল্প খাত হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে এ শিল্পে ৩০০ মিলিয়ন ইউএস ডলারের বাজার সৃষ্টি হয়েছে এবং এতে ৫০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে আইটি ও আইটিইএস শিল্পের প্রবৃদ্ধির হার ৫০ থেকে ১০০ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে বাংলাদেশকে একটি আইটি আউটসোর্সিং হাবে পরিণত করা। এজন্য সাতটি বিভাগে আইসিটি পার্ক স্থাপন করা হচ্ছে। পাশাপাশি ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে চারটি স্তম্ভ-ই গবর্নেন্স, ই-শিক্ষা, ই-সেবা এবং ই-বাণিজ্যে সর্বোচ্চ বিনিয়োগ করা হবে। এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জনকণ্ঠকে বলেন, বর্তমান সরকার ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহার দিনবদলের সনদে প্রথমবারের মতো ডিজিটাল বাংলাদেশ ধারণাটি জাতির সামনে উপস্থাপন করে। এ ধারণার কেন্দ্রে রয়েছে বিজ্ঞান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির লাগসই ব্যবহার নিশ্চিত করে উন্নয়নকে আরও এগিয়ে নেয়া। তিনি বলেন, প্রকৃত অর্থে ডিজিটাল বাংলাদেশ হচ্ছে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান, দারিদ্র্য বিমোচনসহ সকল প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে প্রযুক্তির লাগসই প্রয়োগের একটি আধুনিক উন্নয়ন দর্শন। অর্থমন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশের নেতৃত্ব সৃষ্টিতে সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। মন্ত্রিপরিষদের সদস্যসহ সকল উপজেলা চেয়ারম্যানদের ডিজিটাল বাংলাদেশ বিষয়ক সুস্পষ্ট ধারণা প্রদান করা হয়েছে। তিনি বলেন, সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে ২০২১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়া। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষার তথ্যমতে, ডিজিটাইজেশনের কারণে দেশে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১২ কোটি ৪৭ লাখ। গত ৬ বছরে এই সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ৩ গুণ। ডিজিটাল প্রযুক্তির ছোঁয়া সর্বদিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ায় বর্তমানে ৪ কোটি ৫৭ লাখের অধিক মানুষ ইন্টারনেট প্রযুক্তির সঙ্গে যুক্ত। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) ডিসেম্বর ২০১৪ এর তথ্যমতে, ৪ কোটি ৩৬ লাখ ৪১ হাজার ব্যবহারকারী ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। মোবাইলে এই ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৪ কোটি ২১ লাখ ৭৪ হাজার, ওয়াইম্যাক্স প্রযুক্তি ব্যবহারকারীর সংখ্যা ২ লাখ ৩৩ হাজার, আইএসপি ও পিএসটিএন ব্যবহার করে বাকি ১২ লাখ ৩৫ হাজার ব্যবহারকারী ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন। বাংলাদেশ ডিজিটাল বিভাজন পরিহারের জন্য ৪ হাজার ৫৪৭ ইউনিয়ন তথ্যকেন্দ্র স্থাপন করেছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এ টু আই (এক্সেস টু ইনফরমেশন) প্রোগ্রামের আওতায় বিভিন্ন পৌরসভায় পৌর-ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। সকল ইউনিয়ন পরিষদে অন-লাইন জন্ম নিবন্ধন চালু করা হয়েছে। কৃষিক্ষেত্রেও লেগেছে তথ্যপ্রযুক্তির ছোঁয়া। সারাদেশে স্থাপিত প্রায় ২৪৫ কৃষি তথ্য যোগাযোগ কেন্দ্রে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের কৃষি সেবা প্রদান করা হচ্ছে। ২০ হাজারের অধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম নির্মাণ ও ল্যাপটপসহ ইন্টারনেট সংযোগ প্রদান করা হয়েছে। ডিজিটাল কন্টেন্ট শেয়ার করার জন্য ‘শিক্ষক বাতায়ন’ নামে একটি ওয়েবপোর্টাল চালু করেছে সরকার। ২০২১ সালের মধ্যে টেলিডেনসিটি ৯০ শতাংশে উন্নীত করা। তবে ২০২০ সালের মধ্যে দেশের সকল ইউনিয়নে ইন্টারনেট সংযোগ প্রদান করা হবে। এছাড়া ২০১৮ সালের মধ্যে ব্রডব্যান্ডের সম্প্রসারণ ৪০ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সূত্র মতে আরও জানা যায়, ২০১০ সালে সরকারীভাবে ৪ হাজার ৫০১ ইউনিয়ন তথ্য ও সেবা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়। এর মাঝে ২০০ ইউনিয়ন ছিল একেবারেই দুর্গম এলাকা ও বিদুু্যুতবিহীন। সরকারী সকল সেবা জনগণের হাতের নাগালে পৌঁছে দিতে ওই ২০০ ইউনিয়নের জন্য আলাদা প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। সার্ক ডেভলপমেন্ট ফান্ডের (এসডিএফ) আওতায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি)। তবে অভিযোগ রয়েছে সরকারীভাবে সফল এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলেও এর সুফল অনেক ক্ষেত্রেই ব্যক্তিকেন্দ্রিক হয়ে গেছে। কোন কোন ইউনিয়নে ডিজিটাল সেবাগুলো বন্ধ রয়েছে। গ্রামের জনগণের একটি অংশ অর্ধ শিক্ষিত কিংবা অশিক্ষিত হওয়ায় সেবাগুলো গ্রহণ থেকে অনেকেই বঞ্চিত হন, কিংবা প্রদত্ত সেবার জন্য অধিক অর্থ প্রদান করেন। আইসিটি খাতে উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গেই ঘরে বসে অর্থ উপার্জনের ধারণা বাংলাদেশের মানুষের কাছে পৌঁছাতে শুরু করে। বর্তমানে দেশে তরুণ ফ্রিল্যান্সার একটি গোষ্ঠী তৈরি হয়েছে। তথ্যমতে, বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় সাড়ে ৪ লাখ ফ্রিল্যান্সার রয়েছে। লাখো তরুণ বিভিন্ন পর্যায়ে আউটসোর্সিংয়ের কাজ করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে নিজে সাবলম্বী হয়ে দেশের উন্নয়নে অবদান রেখে চলছেন। ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে কর্মকৌশল ॥ ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় ২২ কর্মপস্থা নির্ধারণ করে তা বাস্তবায়নে জোর দেয়া হচ্ছে। এগুলো হচ্ছে- সরকারী অফিস আদালতে ই-সেবা চালু করা, ই-গবর্নেন্স চালুর মাধ্যমে সরকারী কর্মকা-ের গতি বাড়ানো, ভূমি রেকর্ড ডিজিটাইজেশন, সরকারী সেবাসমূহ ইউনিয়ন অফিস থেকেই প্রদানের ব্যবস্থা, তথ্য অধিকার আইন বাস্তবায়ন, মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপনের মাধ্যমে শিক্ষার গুণগতমান বৃদ্ধি। আগামী ২০২১ সালের মধ্যে আইটি শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষাকে বিশেষভাবে উৎসাহ প্রদান, মানবসম্পদ উন্নয়নে সর্বোচ্চ বরাদ্দ, ইলেক্ট্রনিক্স পদ্ধতিতে সেবা প্রদানের জন্য কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনি, বেতন-ভাতা, চালান এবং সকল প্রকার প্রদেয় ফিসহ জনগণের সঙ্গে সরকারী পর্যায়ে দফতরসমূহে আর্থিক লেনদেনে ইলেক্ট্রনিক পদ্ধতি চালু, আর্থিক লেনদেনে ই-কমার্সের ব্যবহার, আইসিটি শিল্পের উন্নয়নে অগ্রাধিকার, আইটি ইন্ডাস্ট্রি ডেভেলপমেন্ট অথরিটি গঠন, রফতানি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সফটওয়্যার শিল্প ও আইটি এনাবল্ড সার্ভিসের বিকাশ সাধন, বাংলাদেশী আইসিটি পণ্য ও সেবা বিশ্ববাজারে বাজারজাতকরণে ব্র্যান্ডিং করা, দেশের সাতটি বিভাগে আইসিটি পার্ক স্থাপন, সকল সরকারী প্রতিষ্ঠান ও ইউনিয়ন পরিষদে স্বল্পমূল্যে দ্রুত গতি সম্পন্ন ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সুবিধা চালু, আইটি শিল্পে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণ করা, বিদ্যমান সকল সরকারী ডাটাবেজের মাধ্যমে সমন্বয় সাধন এবং তথ্যের আদান-প্রদান, সকল নাগরিকদের জন্য সমন্বিত ডাটাবেজ তৈরি এবং সরকারী-বেসরকারী অংশীদারিত্বের (পিপিপি) মাধ্যমে ই-সেবা কার্যক্রম বাস্তবায়ন এবং নিশ্চিত করা। জানা গেছে, আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এ খাত থেকে পর্যাপ্ত অর্থ উপার্জন করলেও বাংলাদেশে রয়ে গেছে নানা সমস্যা। ফিলিপিন্স, ভারত, পাকিস্তান, অফ্রিকা আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে প্রচুর আয় করে এলেও সম্ভাবনাময় এ খাতে তুলনামূলকভাবে বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে। পরিসংখ্যানগত বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে সরকার তরুণ প্রজন্মের বেকারত্ব লাঘবে এখাত থেকে আরও বেশি করে আয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করে। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের গতিকে আরও বেশি ত্বরান্বিত করতে সরকার ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে জেলা পর্যায়ে ‘লার্নিং এ্যান্ড আর্নিং’ কর্মসূচী গ্রহণ করে। এছাড়াও এ ধরনের একাধিক প্রকল্প চলমান রয়েছে। সূত্র জানায়, ২০১৩ সালে প্রথম পর্বের লার্নিং এ্যান্ড আর্নিং কর্মসূচীতে ১৫ হাজার তরুণ-তরুণীকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে আরও ৫৫ হাজার ফ্রিল্যান্সারকে প্রশিক্ষণ দেয়ার কথা রয়েছে। চলমান এই প্রশিক্ষণ কর্মসূচী চলতি বছর শেষ হওয়ার কথা। ফ্রিল্যান্সার টু এন্ট্রিপ্রেনিউর উন্নয়ন কর্মসূচী নামে এই প্রকল্পটি ৬ কোটি ২৭ লাখ টাকা ব্যয়ে পরিচালিত হচ্ছে। তবে বাংলাদেশে এখনও চালু হয়নি অনলাইন থেকে আয়ের টাকা উঠানোর মাধ্যম পেপল সেবা। টিপু সুলতান রোডের বাসিন্দা ফ্রিল্যান্সার মিজানুর রহমান শাহিন বলেন, অনলাইনে বাংলাদেশ ক্রমাগত উন্নয়ন করে চলছে। তবু পার্শ্ববর্তী কয়েকটি দেশের তুলনায় এখানে ইন্টারনেটের মূল্য অনেক বেশি। টাকা উঠানোর মাধ্যম পেপল চালুর দাবি বহুদিনের, তবে তা এখনও চালু হয়নি। পেপল চালু হলে ফ্রিল্যান্সার খুব উপকৃত হবে। পেপল প্রসঙ্গে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইয়েদ আহমেদ পলক জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা এই সমস্যাটি সমাধানে কাজ করছি। কিছু আইনগত জটিলতার কারণে এটি চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। আশা করা যায় খুব দ্রুত সময়েই মধ্যে এই সমস্যাটি কাটিয়ে উঠতে পারব। এদিকে, দেশে বর্তমানে নানা ধরনের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম রয়েছে। স্বল্প খরচে এসব মাধ্যম ব্যবহার করে অনায়াসেই এক স্থান থেকে আরেক স্থানে তথ্য আদান প্রদান ও ভাবের বিনিময় হচ্ছে। ভিডিওতে কথা বলার জন্য রয়েছে একাধিক সফটওয়্যার। স্কাইপ, ইমো, ফেসবুক, গুগুল ছাড়াও যে কোন মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করে থ্রি জি প্রযুক্তির সংযোজনের ফলে ভিডিও বার্তার মাধ্যমে সকল ধরনের তথ্য ও ভাবের আদান প্রদান করা যায়। ফেসবুক ও স্কাইপ ব্যবহারকারী মাহমুদ হাসান বলেন, দেশ ডিজিটাল হওয়ার ফলেই বর্তমানে প্রায় সবাই ফেসবুকসহ নানা যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। স্কাইপ ব্যবহার করে শুধু বন্ধুদের সঙ্গে নয়, অনেক সময় পরিবার ও আত্মীয়স্বজনের সঙ্গেও কথা বলি। এর সব কিছুই ডিজিটাল প্রযুক্তির ফলে সম্ভব হচ্ছে। আইসিটি উন্নয়নে ১৩ আইন ও নীতিমালা ॥ ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে আইসিটি নীতিমালা ২০০৯ প্রণয়ন করা হয়েছে। এ নীতিমালায় ১টি রূপকল্প, ১০টি উদ্দেশ্য, ৫৬টি কৌশলগত বিষয়বস্তু ও ৩০৬টি করণীয় বিষয় নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে চাহিদার পরিবর্তে নীতিমালাটি আরও যুগোপযোগী করতে আইসিটি নীতিমালা ২০১৫ প্রণয়ন করা হয়েছে। এই নীতিমালায় সামাজিক ন্যায় পরায়ণতা, নীতির প্রতি আস্থা ও দায়বদ্ধতা, সর্বজনীন প্রবেশাধিকার, শিক্ষা ও গবেষণা, কর্মসংস্থানের সুযোগ রফতানি উন্নয়ন আইসিটি সহায়ক বিষয়সমূহ, স্বাস্থ্যসেবা, পরিবেশ জলবায়ু এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, উৎপাদনশীলতার প্রতি জোর দেয়া হয়েছে। এছাড়া আইসিটি উন্নয়নে আরও ১৩টি আইন করেছে সরকার। এগুলো হচ্ছে- সাইবার নিরাপত্তা আইন-২০১৫, আইসিটি সংশোধিত আইন-২০১৩, আইসিটি সংশোধিত আইন-২০০৯, আইসিটি আইন-২০০৬, জাতীয় ই-সেবা আইন-২০১৫, ওআইডি ব্যবস্থাপনা আইন-২০১৩, তথ্যনিরাপত্তা পলিসি গাইডলাইন আইন-২০১৪, আইসিটি ফেলোশিপ এ্যান্ড ডোনেশন পলিসি-২০১৪, সাইবার সিকিউরিটি স্ট্র্যাটেজি আইন-২০১৪, টেলিযোগাযোগ আইন-২০০১, টেলিযোগ নীতিমালা আইন-১৯৯৮, ব্রডব্যান্ড নীতিমালা-২০০৯ এবং দূরপাল্লার টেলিযোগাযোগ সার্ভিস নীতিমালা-২০১০। আন্তর্জাতিক সংযোগ ॥ বাংলাদেশ এসইএ-এমই-ডব্লিউই-৪ সাবমেরিন কেবলের সঙ্গে সংযুক্ত রয়েছে। এর ব্যান্ডউইথ ক্যাপাসিটি ৪৪ দশমিক ৬ হতে ২০০ জিবিপিএস-এ উন্নীত হয়েছে। ইতোমধ্যে সরকার এমএমডব্লিউ-৫ নামে একটি নতুন সাবমেরিন কেবল সংযোগ স্থাপনের জন্য চুক্তি করছে। কুয়াকাটায় ১০ একর জমি ক্রয়ের মাধ্যমে দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবলের ল্যান্ডিং স্থাপনের কাজ হাতে নেয়া হয়েছে। মহাকাশে বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইট ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট’ উৎক্ষেপণ করার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। আগামী বছর স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা সম্ভব হবে। এছাড়া আঞ্চলিক সংযোগ ও অভ্যন্তরীণ সংযোগও ডিজিটাল নেটওয়ার্কের আওতায় আনতে ব্যাপক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
×