ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

রফতানি আয় বেড়েছে ৬ দশমিক ৭১ ভাগ;###;আমদানি বেড়েছে ১৫ ভাগ গত ৪ মাসে ;###;অর্থনীতির সব সূচকেই উল্লম্ফন ;###;সরকারের ঋণ কমেছে;###;সিঙ্গেল ডিজিটের পথে ব্যাংক ঋণের সুদহার

ব্যবসায়ে উর্ধগতি

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ৭ ডিসেম্বর ২০১৫

ব্যবসায়ে উর্ধগতি

রহিম শেখ ॥ আমদানি ও রফতানির উল্লম্ফনে চাঙ্গা হচ্ছে দেশের অর্থনীতি। বিজয়ের ৪৪ বছরে রফতানি আয়ে বাংলাদেশের অর্জনকে বিস্ময়কর বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরের মাত্র ৩৪ কোটি মার্কিন ডলারের রফতানি আয় গেল অর্থবছরে পৌঁছেছে প্রায় ৩ হাজার ২শ’ কোটি ডলারে। এর মধ্যে গেল পাঁচ মাসেই পণ্য রফতানি করে এক হাজার ২৮৮ কোটি ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ। যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৬ দশমিক ৭১ শতাংশ বেশি। আগের বছরের চেয়ে ১৫ শতাংশ বেশি পণ্য আমদানি হয়েছে গেল ৪ মাসে। আমদানি পণ্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আসছে মূলধনী যন্ত্রপাতি। মেশিনারিজ আমদানির তথ্যই বলছে, দেশে এখন বিনিয়োগ উপযোগী পরিবেশ বিরাজ করছে। একই সঙ্গে মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার, রেমিটেন্স প্রবাহ, বৈদেশিক লেনদেনে ভারসাম্যসহ সব সূচকেই উর্ধমুখী। সঞ্চয়পত্র বিক্রি বাড়ায় ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ নেয়ার প্রবণতাও কমে আসছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকারের গৃহীত নানা পদক্ষেপের কারণেই অর্থনীতির সূচকগুলো ইতিবাচক ধারায় ফিরছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। জানা গেছে, ১৯৭১ সালে অর্থনৈতিক মুক্তির স্বপ্ন নিয়ে পাকিস্তানী শোষণ-শাসনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল বাঙালী জাতি। স্বাধীনতার চার দশক পর সে স্বপ্ন অর্জনের পথে অনেকটাই এগিয়েছে দেশ। আর এ স্বপ্ন পূরণে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে রফতানি খাত। যুদ্ধপরবর্তী সময়ের রফতানি খাত কাঁচা চামড়া ও পাট নির্ভর হলেও সময়ের আবর্তনে সে তালিকায় যুক্ত হয়েছে তৈরি পোশাক, হিমায়িত খাদ্য, চামড়াজাত পণ্য, জাহাজ নির্মাণসহ হাল্কা ও মাঝারি শিল্পের নানা পণ্য। ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরের মাত্র ৩৪ কোটি মার্কিন ডলারের রফতানি আয় গেল অর্থবছরে পৌঁছেছে প্রায় ৩ হাজার ২শ’ কোটি ডলারে। অর্থনীতিবিদ ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ মনে করেন, মাাথাপিছু কম জমি নিয়ে আর কোন দেশ অর্থনৈতিক উন্নয়নে এমন ইতিহাস করেনি। আমাদের বিশ্ব অর্থনীতির সঙ্গে ক্রমাগতভাবে বেশি করে সংযুক্ত হতে হবে। যে শিল্প পণ্যগুলো বহুমুখী করে রফতানি করব, সেগুলোর কাঁচামাল এবং মধ্যবর্তী পণ্য আমাদের আমদানি করতে হবে, এটাই এখন চ্যালেঞ্জ। অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রার দৌড়ে নতুন বাজার বাড়ানোর পাশাপাশি আগামী দিনের রফতানি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাংলাদেশকে এখনই প্রস্তুতি নিতে হবে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। জানা যায়, বছরের শুরুতে বিএনপি-জামায়াতের তিন মাসের হরতাল-অবরোধের মধ্যে ব্যাপক সহিংসতায় দেশের অর্থনীতি ও ভাবমূর্তি ক্ষতির মুখে পড়ে। শত প্রতিকূলতা ও বাধা পেরিয়ে ব্যাংকিং খাত তথা গোটা অর্থনীতি আবার চাঙ্গা হতে শুরু করে। পর্যায়ক্রমে আমদানি, রফতানি, রেমিটেন্সসহ অর্থনীতির সব সূচকগুলো শক্ত অবস্থানে উঠে আসে। সাম্প্রতিকালে পোশাক শিল্পে বড় বড় দুর্ঘটনার পরও এ খাতে প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা সম্ভব হয়েছে। মুখ ফিরিয়ে নেয়া বিদেশী ক্রেতারা আবারও ফিরছেন বাংলাদেশে। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি)-এর প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরের জুলাই-নবেম্বর সময়ে এক হাজার ২৮৭ কোটি ৯০ লাখ ডলার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে বাংলাদেশ এক হাজার ২৮৭ কোটি ৯৮ লাখ ৩০ হাজার ডলারের পণ্য রফতানি করেছে। গত অর্থবছরের এই পাঁচ মাসে রফতানি থেকে আয় হয়েছিল এক হাজার ২০৭ কোটি ডলার। এই হিসেবে পাঁচ মাসের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে শূন্য দশমিক ০১ শতাংশ বেশি আয় দেশে এসেছে। এই সময়ে সবচেয়ে বেশি আয় হয়েছে নিট পোশাক রফতানি থেকে, ৫২৩ কোটি ৬৭ লাখ ৩০ হাজার ডলার। উভেন পোশাক থেকে এসেছে ৫২২ কোটি ৬০ লাখ ৩০ হাজার ডলার। তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, এই সময়ে নিট পোশাক রফতানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪ দশমিক ৭৮ শতাংশ। উভেনে প্রবৃদ্ধি আরও বেশি, ১১ দশমিক ৩৫ শতাংশ। নিট পোশাক রফতানিতে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২ দশমিক ৬৮ শতাংশ বেশি আয় হয়েছে। তবে উভেনের আয় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩ দশমিক ৬৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে অর্থাৎ জুলাই- সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রফতানি আয় গত বছরের প্রায় সমান ছিল। কিন্তু পাঁচ মাস পরে এসে প্রবৃদ্ধি হয়েছে মূলত অক্টোবর ও নবেম্বরের রফতানির ওপর ভর করে। অক্টোবর মাসে রফতানি আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ২১ দশমিক ১৫ শতাংশ। ইপিবির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, জুলাই-নবেম্বর সময়ে পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানি বেড়েছে ২ দশমিক ৮৬ শতাংশ। ওষুধ রফতানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৩ দশমিক ১৮ শতাংশ। তবে হিমায়িত চিংড়ি রফতানি ২৫ দশমিক ২৪ শতাংশ কমেছে। চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রফতানি কমেছে ১ দশমিক ১৪ শতাংশ। কৃষি পণ্য রফতানি কমেছে ২৩ দশমিক ৬২ শতাংশ। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে রফতানি আয়ের পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ১২০ কোটি ডলার। এবার তা ৩ হাজার ৩৫০ কোটি ডলারে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছে সরকার। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ভাইস চেয়ারম্যান শুভাশিষ বসু বলেন, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বেশ কিছুদিন ধরে স্থিতিশীল থাকায় রফতানি বাণিজ্যে তার ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। অর্থবছরের বাকি মাসগুলোতেও এই ধারা অব্যাহত থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। তবে বছরের শুরুতে বিএনপি-জামায়াতের তিন মাসের হরতাল-অবরোধের মধ্যে ব্যাপক সহিংসতায় দেশের অর্থনীতি ও ভাবমূর্তির ক্ষতির বিষয়টি মনে করিয়ে দিয়ে ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান শুভাশিষ বসু জনকণ্ঠকে বলেন, অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে এক সময় যেসব ক্রেতা বাংলাদেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবেন বলে চিন্তা করছিলেন, তারা সবাই এখন আমারে এখান থেকে পণ্য কিনছেন। পাশাপাশি বাংলাদেশের গার্মেন্টস মালিকরা ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী ‘কমপ্লায়েন্স’ বাস্তবায়ন করায় রফতানি আয়ে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে বলে ইপিবি প্রধান মনে করেন। অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, পদ্মা সেতুসহ সরকারের বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়নকে ঘিরে দেশে বিনিয়োগের ধারা আবারও শুরু হয়েছে। উদ্যোক্তারা এ সুযোগ কাজে লাগাতে চাইছেন বলেই শিল্প স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় মূলধনী যন্ত্রপাতির (ক্যাপিটাল মেশিনারিজ) আমদানি বাড়ছে বলে তারা মনে করেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) মোট এক হাজার ৩১৯ কোটি ৪৫ লাখ (১৩ দশমিক ১৯ বিলিয়ন) ডলারের এলসি খোলা হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৭ শতাংশ কম। জুলাই-অক্টোবর সময়ে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির জন্য মোট ১২০ কোটি ১৩ লাখ ডলারের এলসি খোলা হয়েছে। নিষ্পত্তি হয়েছে ১১৪ কোটি ৫৭ লাখ ডলারের। এই সময়ে শিল্পের মধ্যবর্তী কাঁচামাল, মূলধনী যন্ত্রপাতি, কয়লা, পেপার এ্যান্ড পেপার বোর্ড আমদানি গত বছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। গত বছরের জুলাই-অক্টোবর সময়ে এলসি খোলার পরিমাণ ছিল ১০৪ কোটি ৪৪ লাখ ডলার। নিষ্পত্তি হয়েছিল ৯১ কোটি ৭৩ লাখ ডলারের। তথ্য অনুযায়ী, গত ২০১৪-১৫ অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর সময়ে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির এলসি খোলার পরিমাণ বেড়েছিল ৭ দশমিক ৪৯ শতাংশ। এলসি নিষ্পত্তি বেড়েছিল ২৮ দশমিক ২০ শতাংশ। চলতি বছরের জুলাই-অক্টোবর সময়ে মূলধনী যন্ত্রপাতির মধ্যে বাংলাদেশের রফতানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্প খাতের মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি বেড়েছে ৩০ শতাংশ। ট্যানারি শিল্পে বেড়েছে ৫০ শতাংশের বেশি। ওষুধ শিল্পে বেড়েছে ২৫ শতাংশ। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষক জায়েদ বখত রবিবার বলেন, পদ্মা সেতু, মগবাজার-মালিবাগ- মৌচাক ফ্লাইওভার, মেট্রোরেল এবং কয়েকটি বড় বিদ্যুৎ কেন্দ্রর কাজ শুরু হয়েছে। এসব ‘মেগা প্রকল্পের’ কাজ শেষ হলে দেশে শিল্প খাতের ব্যাপক প্রসার ঘটবে। এ সব বিবেচনায় নিয়েই আমাদের ব্যবসায়ী-শিল্পপতিরা বিদ্যমান শিল্প প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি নতুন নতুন শিল্পের জন্য ক্যাপিটাল মেশিনারিজ আমদানি করছেন। ভবিষ্যত ব্যবসা মাথায় রেখেই তারা এটা করছেন। আর দেশে ‘স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশে’ বিরাজ করায় ব্যবসায়ীদের মধ্যে সেই আস্থা ফিরতে শুরু করেছে বলে মনে করেন অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান জায়েদ বখত। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ॥ বছরের শুরু থেকেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে নতুন নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করে। বর্তমানে এই রিজার্ভ ২৭ বিলিয়ন (২ হাজার ৭০০ কোটি মার্কিন ডলার) ছাড়িয়েছে। রফতানি আয় বৃদ্ধি ও রেমিটেন্স প্রবাহের ইতিবাচক ধারা, বিদেশ থেকে কর্পোরেট ঋণ গ্রহণ এবং কাক্সিক্ষত হারে আমদানি ব্যয় না হওয়া রিজার্ভ বৃদ্ধিতে অবদান রেখেছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। রেমিটেন্স ॥ চলতি অর্থবছরের জুলাই-নবেম্বর এই পাঁচ মাসে প্রবাসীরা দেশে রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন ৬১৬ কোটি ৯৬ লাখ ডলার। একক মাস হিসেবে নবেম্বর মাসে প্রবাসীরা রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন ১১৩ কোটি ৭৫ লাখ ডলার, আগের মাসের তুলনায় বেড়েছে ৩ কোটি ৯০ লাখ ডলার বা ৩ দশমিক ৫৫ শতাংশ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গেল অর্থবছরের পুরো সময়ে দেশে রেমিটেন্স আসে ১ হাজার ৫৩১ কোটি ৬৯ লাখ ডলার। যা ২০১৩-১৪ অর্থবছরের চেয়ে ১০৮ কোটি ৮৬ লাখ ডলার বা ৭ দশমিক ৬৫ শতাংশ বেশি। জাতীয় সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ ॥ জাতীয় সঞ্চয়পত্র অধিদফতরের মঙ্গলবার প্রকাশিত সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরের চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) এ খাতে নিট বিক্রি হয়েছে ৯ হাজার ৩৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা। যা গত অর্থবছরের তুলনায় ৪৪ কোটি টাকা কম। গত অর্থবছরের চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) মাসে সঞ্চয়পত্রে নিট বিক্রি আসে ৯ হাজার ৭৭ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। ব্যাংকগুলোতে আমানতের সুদের হার হ্রাস এবং পুঁজিবাজারে দীর্ঘ মন্দার কারণে একটু বেশি লাভের আশায় সবাই ‘নিরাপদ’ বিনিয়োগ সঞ্চয়পত্রের দিকে ঝুঁকছে বলে মনে করেন অর্থনীতি গবেষক জায়েদ বখত। তিনি বলেন, সুদের হার কমানোর পরও সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করলে এখনও অন্য যে কোন স্কিম থেকে বেশি মুনাফা পাওয়া যায়, সে কারণেই বিক্রি বাড়ছে। সরকারের ব্যাংক ঋণ কমছে ॥ আশার তুলনায় সঞ্চয়পত্র বিক্রি বেশি হওয়ায় গত অর্থবছর জুড়েই ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ নেয়ার চাহিদা ছিল কম। গত অর্থবছর ব্যাংক থেকে সরকার নিট ৩১ হাজার ২২১ কোটি টাকা ঋণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করলেও তা নিতে হয়নি। অর্থবছর শেষে ঋণ না বেড়ে ৬ হাজার ৮৭০ কোটি টাকা কমে সরকারের পুঞ্জীভূত ব্যাংক ঋণ নেমে আসে এক লাখ ৭ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে সরকারের নিট ঋণ দাঁড়িয়েছে আট হাজার ৭৪৮ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। এতে মোট পুঞ্জীভূত ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক লাখ ১৪ হাজার ২৩৯ কোটি টাকা। এ সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে আগে নেয়া তিন হাজার ২৩৪ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে সরকার। এতে বাংলাদেশ ব্যাংকে সরকারের ঋণ কমে আট হাজার ৬৮১ কোটি টাকায় নেমে এসেছে। বিদেশী বিনিয়োগ ॥ বর্তমানে দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরে আসায় আবারও আস্থা বাড়ছে বিনিয়োগকারীদের মনে। একই সঙ্গে বিনিয়োগের পরিবেশে আশার আলো দেখছেন দেশীয় উদ্যোক্তারা। পরিসংখ্যান বলছে, গত ছয় মাসে বস্ত্র, সেবা, শিল্প ও কৃষি খাতে বিনিয়োগ নিবন্ধিত হয়েছে ৬৩টি শিল্প ইউনিট। গত বছরের তুলনায় চলতি বছরের ছয় মাসে (জানুয়ারি-জুন) বিদেশী বিনিয়োগের নিবন্ধনের হার ৮ শতাংশ বেড়েছে। সামনের দিনগুলোতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকলে বিনিয়োগ কয়েকগুণ বাড়বে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। সিঙ্গেল ডিজিটের পথে ব্যাংক ঋণের সুদহার ॥ দীর্ঘদিন ধরে ঋণের সুদহার ‘সিঙ্গেল ডিজিটে’ নামিয়ে আনার দাবি জানিয়ে আসছেন ব্যবসায়ীরা। বিনিয়োগ বৃদ্ধির ক্ষেত্রেও প্রধান প্রতিবন্ধকতা এই ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদহার। তবে সেই বাধা ক্রমেই শিথিল হচ্ছে। সর্বশেষ অক্টোবর মাসে ঋণের ক্ষেত্রে সুদহার কমে দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ৩৫ শতাংশ। আগের মাসেও যা ছিল ১১ দশমিক ৪৮ শতাংশ। সুদহারে এই নিম্নমুখী প্রবণতায় ঋণ আমানত ও সুদহারের ব্যবধান (স্প্রেড) আরও কমেছে। অক্টোবর মাস শেষে ঋণ ও আমানতের গড় সুদহার ৪ দশমিক ৭৭ শতাংশ দাঁড়িয়েছে।
×