ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ইরাকে গণবিধ্বংসী অস্ত্র না থাকা সত্ত্বেও আগ্রাসন

প্রকাশিত: ০৩:৫৩, ৬ ডিসেম্বর ২০১৫

ইরাকে গণবিধ্বংসী অস্ত্র না থাকা সত্ত্বেও আগ্রাসন

ইরাকে গণবিধ্বংসী অস্ত্র (ডব্লিউএমডি) নেই- দক্ষিণ আফ্রিকার বিশেষজ্ঞরা এমন প্রতিবেদন দেয়ার পরও ব্রিটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার ইরাকে হামলা চালিয়েছেন। দক্ষিণ আফ্রিকার সাংবাদিক জন ম্যাটিসনের সম্প্রতি প্রকাশিত ‘গড, স্পাইস এ্যান্ড লাইস’ বইয়ে এ দাবি করা হয়েছে। খবর গার্ডিয়ানের। বইতে বলা হয়েছে, দক্ষিণ আফ্রিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট থাবো এমবেকি ব্লেয়ার ও সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাব্লিউ বুশকে বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছিলেন যে, ইরাকের সাবেক প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনকে ২০০৩ সালে উৎখাত করা মারাত্মক ভুল হবে। এমনকি এমবেকির পূর্বসূরী নেলসন ম্যান্ডেলাও এ বিষয়ে বুশকে বোঝাতে ব্যর্থ হয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ায় বলেছিলেন, মার্কিন এ নেতা চিন্তাশক্তি হারিয়ে ফেলেছেন। ম্যাটিসনের এ দাবির প্রতি চলতি সপ্তাহে সমর্থন জানিয়ে এমবেকির কার্যালয় নিশ্চিত করেছে যে, এমবেকি শান্তি বজার রাখতে তাদের হয়ে সাদ্দামের সঙ্গে মধ্যস্থতা করারও প্রস্তাব দিয়েছিলেন। ইরাকের ডব্লিউএমডি থাকার সম্ভাবনার বিষয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা বিশেষভাবে জানতো। কারণ ১৯৮০’র দশকে দক্ষিণ আফ্রিকার তৎকালীন বর্ণবিদ্বেষী সরকার তার নিজস্ব জীবাণু, রাসায়নিক ও পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচী বিষয়ে ইরাকের সঙ্গে সহযোগিতা করতে চেয়েছিল। কিন্তু ১৯৯৪ সালে দেশটিতে সংখ্যালঘু শ্বেতাঙ্গ শাসনের অবসান হলে ‘প্রজেক্ট কোস্ট’ নামে ওই কর্মসূচীও পরিত্যক্ত হয়ে যায়। তবে সাদ্দামের ডব্লিউএমডি আছে, বুশ ও ব্লেয়ারের এমন দাবির তদন্ত করতে এমবেকি ওই কর্মসূচীর বিশেষজ্ঞ দলকে ইরাকে পাঠায়। ব্লেয়ার ও সাদ্দাম উভয়ের সঙ্গে এমবেকির সুসম্পর্ক ছিল। ওই তদন্ত দলকে ইরাকে যাওয়ার জন্য সাদ্দামের কাছে অনুমতি চান। ম্যাটিসন তার বইতে লিখেছেন, সাদ্দাম সম্মত হন এবং দক্ষিণ আফ্রিকার এ দলটিকে তিনি পুরো ইরাকে ঘুরে বেড়ানোর স্বাধীনতা দেন। ডব্লিউএমডির সম্ভাব্য সাইটগুলো সম্পর্কে পাওয়া তথ্য জাতিসংঘ গোয়েন্দাদের জানানোর অধিকার ছিল তাদের। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও জাতিসংঘকে তাদের মিশন এবং এর অগ্রগতি সম্পর্কে নিয়মিত অবহিত করা হয়। ম্যাটিসন এ তথ্য হোয়াইট হল ও দক্ষিণ আফ্রিকার মন্ত্রিসভা থেকে পেয়েছেন বলে উল্লেখ করেছেন। ইরাক থেকে ফেরার পর তদন্ত দলটি জানায়, দেশটিতে কোনও গণবিধ্বংসী অস্ত্র নেই। ২০০৩ সালের জানুয়ারিতে এমবেকি তাদের তদন্ত সম্পর্কে ব্যাখ্যা দিতে একটি দলকে ওয়াশিংটনে পাঠান। তবে সাফল্য মেলে খুব সামান্যই। বইতে বলা হয়েছে, এমবেকি নিজে ব্রিটেনে গিয়ে ব্লেয়ারের সঙ্গে এ বিষয়ে তিন ঘণ্টা কথা বলেছিলেন। তিনি হুঁশিয়ার করে বলেছিলেন, সাদ্দামের বাথ পার্টি গণহারে নির্মূল করতে গেলে দখলদার জোট বাহিনী জাতীয় প্রতিরোধের মুখে পড়তে পারে। কিন্তু ইতোমধ্যে ইরাকে ব্যাপকসংখ্যক সেনা মোতায়েন শুরু হয়ে গেছে এবং ব্লেয়ার ইরাকে হামলা চালাতে মনস্থির করে ফেলেছিলেন। ২০০৩ সালের ১৯ মার্চ থেকে বাগদাদে বোমা হামলা শুরু হয় এবং এ যুদ্ধ এক দশকের বেশি সময় ধরে চলে, যুদ্ধে হাজার হাজার লোক নিহত হয় এবং পরিণামে জঙ্গী সংগঠন ইসলামিক স্টেটের উত্থান ঘটে। -গার্ডিয়ান
×