ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

একে মোহাম্মাদ আলী শিকদার

পাকিস্তানের ধৃষ্টতা ও মিথ্যাচারের সমুচিত জবাব দিতে হবে

প্রকাশিত: ০৩:৪৮, ৬ ডিসেম্বর ২০১৫

পাকিস্তানের ধৃষ্টতা ও মিথ্যাচারের সমুচিত জবাব দিতে হবে

বাংলাদেশের একান্ত অভ্যন্তরীণ বিষয়, একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গে পাকিস্তান অনবরত সীমাহীন ধৃষ্টতা এবং মিথ্যাচার করে চলেছে। এটা কূটনৈতিক শিষ্টাচারবহির্ভূত আচরণ তো বটেই, আন্তঃরাষ্ট্রীয় সম্পর্কের জন্য চরম বৈরিতার বহির্প্রকাশ। একাত্তরের গণহত্যার জন্য নির্লজ্জের মতো পাকিস্তান শুধু নিজেদের দায়কে অস্বীকার করছে না, বাংলাদেশের নাগরিক, যারা একাত্তরে পাকিস্তানের গণহত্যার সহযোগী ছিল তাদের বিচারেরও বিরোধিতা করছে। এতে প্রমাণিত হয় একাত্তরে বাংলাদেশের যেসব বিশ্বাসঘাতক, দেশদ্রোহী মীরজাফর পাকিস্তানকে সহযোগিতা করেছিল, তারা এখনও বাংলাদেশী ছদ্মবেশে পাকিস্তানের স্বার্থে কাজ করছে। তা না হলে পাকিস্তানের মতো নিমকহারাম জাতি ৪৪ বছর পরে এই বাংলাদেশী যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাবার জন্য এমন নির্লজ্জ আচরণ কখনও করত না। স্বজাতিবিরোধী এসব যুদ্ধাপরাধীর জন্য পাকিস্তানের যদি এতই দরদ থাকবে তাহলে তারা একাত্তরে পরাজয়ের পর এদেরকে সঙ্গে করে পাকিস্তানে নিয়ে গেল না কেন? জামায়াত, মুসলিম লীগ ও রাজাকারগণ ঠিকই পাকিস্তানে যাওয়ার জন্য ওই সময়ে লাইন ধরেছিল। কিন্তু তখন পাকিস্তানী সেনা সেপাইরা এদের গাদ্দার আখ্যায়িত করে ধাক্কা দিয়ে গাড়ি থেকে ফেলে দিয়েছিল। কিন্তু এরপরেও এই নির্লজ্জ জামায়াত-মুসলিম লীগারদের শিক্ষা হয়নি। বাংলাদেশের মানুষের জন্য লজ্জা ও বেদনার বিষয় হলো- একাত্তরের এসব যুদ্ধাপরাধী এক সময়ে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী হয়ে গাড়িতে বাংলাদেশের লাল-সবুজের পতাকা উড়িয়েছে। দম্ভভরে আবার জাতীয় পতাকার অবমাননাও করেছে। এই নির্লজ্জ কাজের পৃষ্ঠপোষক ও সহযোগীরা এখনও বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বড় গলায় কথা বলে। লজ্জার সব আবরণ খুলে ফেলে প্রকাশ্যে ঘোষণা দেয়- বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বে না-কি সাকা চৌধুরীর অবদান আছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল হয়ে যদি এমন নির্লজ্জের মতো আচরণ করতে পারে, তাহলে পাকিস্তান তো গলার স্বর কয়েক ডিগ্রী বাড়িয়ে একই রা করবে সেটাই স্বাভাবিক। পাকিস্তান যে ডাহা মিথ্যাচার করছে তার অকাট্য প্রমাণ আমাদের হাতে রয়েছে। ১৯৭৪ সালে স্বাক্ষরিত ত্রিপক্ষীয় চুক্তির ১৩ নম্বর ধারায় যা বলা হয়েছে তার বাংলা করলে যা হয় তা হলো- ‘জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের রেজুলেশন এবং আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে পাকিস্তানের যুদ্ধবন্দীরা সীমা লঙ্ঘন করে অপরাধ সংঘটিত করেছে, যেগুলো যুদ্ধাপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যা হিসেবে বিশ্ব সভায় স্বীকৃত। সুতরাং সকল পক্ষ একমত পোষণ করে যে, ১৯৫ জন পাকিস্তানী যুদ্ধবন্দী, যাদের বিরুদ্ধে উপরোক্ত অপরাধের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আনা হয়েছে তাদের আইনী প্রক্রিয়ায় জবাবদিহিতার মধ্যে এনে বিচার সম্পন্ন করতে হবে। সুতরাং ১৯৫ জন পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধীকে ক্ষমা করে দেয়ার কথা কখনও বলা হয়নি। বরং এই ১৯৫ জনের বিচার এ পর্যন্ত না করে পাকিস্তান ওয়াদা ভঙ্গ করেছে। বাংলাদেশের নাগরিক, যারা পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর সঙ্গে এক হয়ে হত্যা, গণহত্যা চালিয়েছে, তাদের ব্যাপারে চুক্তির কোথাও কিছু বলা হয়নি। সুতরাং সাকা, মুজাহিদ, নিজামী, কাদের মোল্লার বিচার ও দ-াদেশ নিয়ে কথা বলার কোন অধিকার পাকিস্তানের নেই। তাছাড়া আন্তর্জাতিক আইন ও রীতি অনুযায়ী গণহত্যার কোন ক্ষমা হয় না। ১৯৬৯ সালে গৃহীত ভিয়েনা কনভেনশনের ৫৩ নম্বর ধারায় স্পষ্ট উল্লেখ আছে, গণহত্যাকারীকে কেউ যদি ক্ষমা করেও থাকে, তবে তা বাতিল বলে গণ্য হবে। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের পর যুদ্ধের প্রথমভাগে বাংলাদেশে গণহত্যার অন্যতম সেনানায়ক, তখনকার ১৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল খাদিম হোসেন রাজা কর্তৃক লিখিত- ‘অ ংঃৎধহমবৎ রহ সু ড়হি পড়ঁহঃৎু’ গ্রন্থের ভূমিকার দ্বিতীয় পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে- We exploited East Pakistan and when the people rose demanding their right of self determination, the pakistan military, then in power, retaliated with genocide. সুতরাং একদিন না একদিন পাকিস্তানকে গণহত্যার বিচারের সম্মুখীন হতে হবে। তাছাড়া পরাজয়ের পর পরিচালিত পাকিস্তানের নিজস্ব তদন্তের মধ্যে একাধিক প্রমাণ রয়েছে একাত্তরে বাংলাদেশে তারা গণহত্যা চালিয়েছে। তৎকালীন পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি হামুদুর রহমানের নেতৃত্বে গঠিত তদন্তে পাকিস্তান সেনাবাহিনী অনেক চেষ্টা করেও গণহত্যার বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে ধামাচাপা দিতে পারেনি। গণহত্যার অন্যতম ঠা-া মাথার পরিকল্পনাকারী মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী নিজের গা বাঁচাবার জন্য উল্লিখিত তদন্ত কমিটির কাছে বলেছেন, ‘লেঃ কর্নেল ইয়াকুব মালিকের নির্দেশে ১৯৭১ সালের ২৭-২৮ মার্চ কুমিল্লা সেনানিবাসে একজন অফিসারসহ ৯১৫ জন বাঙালীকে স্রেফ জবাই করা হয়। সালদা নদী এলাকায় ৫০০ জন মানুষকে হত্যা করা হয় এবং সেনাবাহিনী গ্রামাঞ্চল ও ছোট শহরগুলোকে শত্রুমুক্ত করার নামে নির্দয়ভাবে ধ্বংস, অগ্নিসংযোগ এবং হত্যাযজ্ঞ চালায়।’ একজন ব্রিগেড কমান্ডার, ব্রিগেডিয়ার ইকবালুর রহমান তার জবানবন্দীতে বলেছেন, ‘পাকিস্তান সেনাবাহিনীর চীফ অব জেনারেল স্টাফ, জেনারেল গুল হাসান পূর্বপাকিস্তানের বিভিন্ন সেনা ইউনিট পরিদর্শনের সময় সেনাদের জিজ্ঞাসা করতেন, তুমি কতজন বাঙালী মেরেছ?’ আরেকজন অফিসার, লেঃ কর্নেল আজিজ আহমদ খান সাক্ষ্যে বলেন, ‘ঠাকুরগাঁওয়ে তার ইউনিট পরিদর্শনে গিয়ে জেনারেল নিয়াজী জিজ্ঞাসা করেছিলেন, তোমরা কত হিন্দু মেরেছ?’ সুতরাং পাকিস্তান সেনাবাহিনী একাত্তরে গণহত্যা চালিয়েছে সেটি এখন সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত। একাত্তরে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা আজকের থেকে ভয়ানক খারাপ অবস্থায় ছিল, এখনকার জেলা, তখনকার মহকুমা শহরের সঙ্গেও সব জায়গায় সড়ক যোগাযোগ ছিল না। ওই রকম যোগাযোগ ব্যবস্থায় পাকিস্তান আর্মি গ্রামে-গঞ্জে গিয়ে কিছুতেই হত্যাযজ্ঞ চালাতে পারত না যদি রাজাকার, শান্তি কমিটির সদস্য, জামায়াত, মুসলিম লীগারগণ পাকিস্তানী সেনাদের সঙ্গে না থাকত। সুতরাং সাকা, মুজাহিদ, নিজামী, সাঈদী, কাদের মোল্লা গংয়ের অপরাধ ক্ষমার অযোগ্য এবং এক বিবেচনায় এরা পাকিস্তানী আর্মির চাইতেও বেশি অপরাধী। এসব মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের দ- দেয়ায় পাকিস্তান ২০১৩ সালের নবেম্বর থেকে এ পর্যন্ত অন্তত পাঁচবার বক্তৃতা বিবৃতি দিয়ে এবং জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদে নিন্দা প্রস্তাব এনে সরাসরি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলিয়েছে। তারা যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লাকে শহীদ ঘোষণা করেছে। এগুলো দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের জন্য যে সহায়ক নয়, সেটি বাংলাদেশ স্পষ্ট করেই বলেছে। কিন্তু আমলে নেয়নি পাকিস্তান। এখন সাকা, মুজাহিদের শোকে পাকিস্তান যেন কাতর হয়ে পড়েছে। সাকা চৌধুরীর ফাঁসির পর পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তারা পুনরায় কটাক্ষ করেছে। একাত্তরে তাদের যুদ্ধ ছিল নাকি কেবল ভারতের বিরুদ্ধে, বাংলাদেশের কোন অস্তিত্ব ছিল না। এ কথার মাধ্যমে পাকিস্তান ধৃষ্টতার সব সীমা লঙ্ঘন করেছে। ঐতিহাসিক সত্য নিয়ে মিথ্যাচার ও বিষোদগার অব্যাহত রেখেছে। ৩০ নবেম্বর ইসলামাবাদে বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনারকে তলব করে পাকিস্তান একাত্তরের গণহত্যার দায় অস্বীকার করেছে। এভাবে দু’দেশের সম্পর্ককে পাকিস্তানই তিক্ত করে তুলেছে। তবে এটা ঠিক যে, একাত্তরের পরাজয়ের প্রতিশোধ নেয়ার দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এমন গর্হিত কাজ ভেবেচিন্তে ও বুঝেই পাকিস্তান করে যাচ্ছে একের পর এক। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর শোচনীয় এবং অমর্যাদাকর পরাজয়, একাত্তরের অব্যবহিত পর জামায়াতের প্রয়াত আমির গোলাম আযম কর্তৃক পাকিস্তান ও লন্ডনে বসে পূর্ব পাকিস্তান পুনরুদ্ধার আন্দোলন, এই আন্দোলন বাতিল না করে জিয়াউর রহমানের সময় ১৯৭৮ সালে গোলাম আযমের বাংলাদেশে আগমন এবং স্থায়ীভাবে থেকে যাওয়া, জামায়াত, মুসলিম লীগসহ রাজাকার আলবদরদের বাংলাদেশের রাজনীতিতে জিয়াউর রহমান কর্তৃক পুনর্বাসন, পঁচাত্তরের পর সামরিক আদেশবলে জিয়াউর রহমান কর্তৃক বাহাত্তরের মূল সংবিধানের পাকিস্তানীকরণ, বাংলাদেশকে ঘিরে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের তৎপরতা এবং জিয়া, এরশাদ, জামায়াত-বিএনপি সরকারের সময়ে বাংলাদেশের ভূমি ব্যবহার করে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর সশস্ত্র সংগঠনগুলোকে পাকিস্তান কর্তৃক অস্ত্র, প্রশিক্ষণ ও আর্থিক সহযোগিতা প্রদান ইত্যাদি ঘটনাপ্রবাহ বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে পাকিস্তান কর্তৃক যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে বিবৃতি দেয়া কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, এর প্রতিটি ঘটনা একটির সঙ্গে অন্যটির যোগসূত্র রয়েছে। পাকিস্তান তার অবস্থান থেকে এমন বিবৃতি দেবে তাতে বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই এবং এটা অপ্রত্যাশিতও নয়। পাকিস্তানের কাজ পাকিস্তান করেছে এবং করবে সেটাই স্বাভাবিক। উপমহাদেশকেন্দ্রিক পাকিস্তানের পররাষ্ট্রনীতির মৌলিক কথা হলো- একাত্তরের পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে হবে। ১৯৭২ সালে জুলফিকার আলী ভুট্টো কর্তৃক ঘোষিত এই নীতি থেকে পাকিস্তান আজ পর্যন্ত এক ইঞ্চিও সরে আসেনি। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে পরাজয়ের প্রতিশোধের প্রতিফলন হিসেবে পাকিস্তান কামনা করে বাংলাদেশের রাষ্ট্র ও সমাজের সর্বক্ষেত্রে পাকিস্তানপন্থী মনোভাব যেন বিরাজমান থাকে। তাহলে মুক্তিযুদ্ধের দর্শন ও আদর্শ বলতে কিছু থাকবে না। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বাঙালীর ২৩ বছরের সংগ্রামের ঔজ্জ্বল্য ও স্মারক চিহ্ন বিলুপ্ত হয়ে যাবে। পাকিস্তানের গণহত্যা ও নির্যাতনের কথা কেউ বলবে না। ৩০ লাখ শহীদের কথা কোথাও থাকবে না। বুদ্ধিজীবী হত্যার কথা কেউ উচ্চারণ করবে না। অর্থাৎ পাকিস্তানের সব পাপ ঢাকা পড়ে যাবে। একাত্তরের শত্রু দেশের নামের পরিবর্তে ব্যবহার করা হবে হানাদার বাহিনী নামক এক অদ্ভুত শব্দ। পঁচাত্তরের পর দুই সামরিক শাসকের আমলে এবং ২০০১-২০০৬ মেয়াদে যখন জামায়াতের দু’জন মশহুর যুদ্ধাপরাধী মন্ত্রী হয়েছিল, তখন বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনার অঙ্গনে সর্বত্র প্রায় উপরোক্ত পরিস্থিতির মতো একটা পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল। যে সাকা চৌধুরী শুধু ভয়ঙ্কর যুদ্ধাপরাধী নয় গত ৪৪ বছর ধরে সে দম্ভ ও ঔদ্ধত্যের সঙ্গে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে অস্বীকার করেছে, জাতীয় সঙ্গীত ও পতাকাকে অবমাননা করেছে, সেই সাকা চৌধুরীর পক্ষে সাফাই গাইতে গিয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয় দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় নাকি সাকার অবদান আছে। এমন বিস্ময়কর কথা শোনার পর বাংলাদেশের চাদর গায়ে ছদ্মবেশী পাকিস্তানীদের চিনতে কারও অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। বাংলাদেশ এখন একটি টার্নিং পয়েন্টে দাঁড়িয়ে আছে। এই টার্ন সফলভাবে সম্পন্ন হলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ভিত্তি টেকসই হবে এবং সকল পক্ষকে শুধু মুখে নয়, প্রকৃতপক্ষেই মুক্তিযুুদ্ধের আদর্শের রাজনীতি করতে হবে। সেটি হলে ভারত ও বাংলাদেশের বিরুদ্ধে একাত্তরের পরাজয়ের প্রতিশোধ গ্রহণের লক্ষ্য পাকিস্তানের আর কোনদিন পূরণ হবে না। পাকিস্তানের ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ দেখার কোন পক্ষ বাংলাদেশে থাকবে না। সুতরাং পাকিস্তানের গাত্রদাহ এখানে। তাদের হয়ে যারা এতদিন বাংলাদেশে কাজ করেছে তাদের ফাঁসি হয়ে যাচ্ছে, আর পাকিস্তান একেবারে চুপচাপ থাকবে, এটা ভাবা বাস্তবসম্মত নয়। পাকিস্তানের কাজ পাকিস্তান করেছে। এখন আমাদের করণীয় আমাদের করতে হবে। প্রথমত. বাংলাদেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী রাজনীতিকে বাংলাদেশ থেকে বিদায় করতে হবে। পরিপূর্ণভাবে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত করতে হবে, যার প্রতিফলন পাওয়া যায় বাহাত্তরের মূল সংবিধানে। দ্বিতীয়ত. পাকিস্তানের সঙ্গে সকল সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে এবং তা পুনর্প্রতিষ্ঠা করা চলবে না। যতদিন পর্যন্ত পাকিস্তান একাত্তরের গণহত্যার জন্য নিঃশর্তভাবে ক্ষমা না চাইবে। ১৯৫ জন চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী, যারা এখনও বেঁচে আছে তাদের বিচার করতে হবে। ২৩ বছরের সঞ্চিত সম্পদের ন্যায্য ভাগ দিতে হবে এবং তাদের বিহারী নাগরিকদের ফেরত নিতে হবে। পাকিস্তান আজ মোল্লা মিলিটারি কবল বেষ্টিত সন্ত্রাসী রাষ্ট্র। সন্ত্রাসী রাষ্ট্র হিসেবে সার্ক থেকে পাকিস্তানকে বহিষ্কার করার জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে দাবি তুলতে হবে। এটাই হবে পাকিস্তানের জন্য সমুচিত জবাব। লেখক : ভূ-রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক
×