ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সোহ্ রাওয়ার্দী উদ্যানের মহাসমাবেশে;###;হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদ নেতৃবৃন্দ

সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে সংখ্যালঘুদের ক্ষমতায়ন চাই

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ৫ ডিসেম্বর ২০১৫

সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে সংখ্যালঘুদের ক্ষমতায়ন চাই

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত মহাসমাবেশ থেকে জাতীয় সংসদে ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু ও আদিবাসী জনগোষ্ঠীর যথাযথ অংশীদারিত্ব ও প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করাসহ ৭ দফা দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদ। সেই সঙ্গে সংখ্যালঘু ও আদিবাসীদের কল্যাণে সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠার দাবি জানান পরিষদের নেতারা। বিকেলে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও আদিবাসী মহাসমাবেশ থেকে এ দাবি জানানো হয়। হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার মেজর জেনারেল (অব) সি আর দত্ত বীরোত্তমের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এমপি, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান, সংগঠনের সভাপতি ঊষাতন তালুকদার এমপি, সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. নিম চন্দ্র ভৌমিক, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং, বাংলাদেশ খ্রীস্টান এসোসিয়েশনের মহাসচিব নির্মল রোজারিও, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক মনিন্দ্র কুমার নাথ প্রমুখ। মহাসমাবেশে ৭ দফা দাবি নামা পেশ করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত। মহাসমাবেশে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, স্বাধীনতার ৪৪ বছর পার হলেও সংখ্যালঘুদের আকাক্সক্ষা পূরণ হয়নি। এখনও তারা প্রতিনিয়ত নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন। এই বিষয়টি সরকার ও রাজনীতিদরা জানেন না- এমন নয়। তিনি বলেন, আইয়ুব সরকার, জিয়া সরকার, এরশাদ সরকারসহ প্রতিটি সামরিক সরকারের আমলে মন্ত্রিসভায় সংখ্যালঘু মন্ত্রী থাকলেও বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বর্তমান সরকারে পূর্ণমন্ত্রী কেউ নেই। সরকারের উদ্দেশে সুরঞ্জিত বলেন, সংখ্যালঘুদের ভোটব্যাংক বানাবেন না। পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। সংগ্রাম ছাড়া অধিকার আদায়ের আর কোন পথ খোলা নেই। উপস্থিত জনতার উদ্দেশে তিনি বলেন, আমি আপনাদের কথা দিচ্ছি, দাবি আদায়ে আমরা আগামী ৬ মাস অপেক্ষা করব। আপনারা রাজি আছেনÑ এমন বক্তব্য সবাই সমর্থন জানালে তিনি বলেন, আপনাদের কথা দিচ্ছি, এর মধ্যে যদি আমি মারা না যাই, আপনাদের সঙ্গে আবার দেখা হবে। দাবি কিভাবে আদায় করতে হয়, তা জানা আছে। এর মধ্যে আমাদের দাবি বাস্তবায়ন না হলে সবাইকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে সংগ্রাম গড়ে তোলা হবে। সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মৃত্যুর কারণে সংখ্যালঘুদের নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাত বছর ক্ষমতায় থাকার পরও সংখ্যালঘুদের ক্ষমতায়ন করা হয়নি। সমাজের সর্বক্ষেত্রে সংখ্যালঘু ও আদিবাসীদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে প্রচেষ্টা করা হয়নি। আমরা সমান অধিকার চাই। সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে সংখ্যালঘুদের ক্ষমতায়ন ও সমাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। তিনি বলেন, সংখ্যালঘুদের ক্ষমতায়ন না হওয়ায় তাদের সংখ্যা দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান বলেন, আজকে এই অনুষ্ঠানে আসার আগে মনে করেছিলাম এখানে এসে বিজয়ের গান শুনব। কিন্তু দুঃখের বিষয় আমাকে অবাক বিস্ময়ে শুনতে হয়েছে সংখ্যালঘুদের নির্যাতনের নির্মম কথা। কয়েক বছর আগে সরকারকে হুঁশিয়ার করেছিলাম, এভাবে নির্যাতন চলতে থাকলে আগামী ২০ বছরে দেশে কোন সংখ্যালঘু থাকবে না। কিন্তু এর পরেও রাষ্ট্রের আচরণে মৌলিক পরিবর্তন দেখি না। সংখ্যালঘুদের সঙ্গে কোন ধরনের বৈষম্যমূলক আচরণ করা যাবে না। এ নিশ্চয়তা রাষ্ট্রকে কর্মকা-ের মাধ্যমে প্রমাণ দিতে হবে। রাজনীতিবিদদের উদ্দেশে ড. মিজানুর রহমান বলেন, আমরা সংখ্যালঘুদের ভোটব্যাংক হিসেবে ব্যবহার করব, যখন ইচ্ছা হবে, মালিকের মতো আচরণ করে এ ধরনের সুখের অনুভূতি দেখাবÑএ ধরনের আচরণ বন্ধ করতে হবে। কোন সভ্য রাষ্ট্র এই ধরনের আচরণ করতে পারে না। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ থাকলেও অর্পিত সম্পত্তি আইনের (খ) তফসিল বাতিল সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত এখনও বাস্তবায়ন হয়নি। কোন সে আমলাতন্ত্র যেটা, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশকে অমান্য করার মতো ধৃষ্টতা দেখায়? এই আমলাদের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে হবে।
×