ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

গণতন্ত্রের মানসপুত্র সোহ্ রাওয়ার্দীর মৃত্যুবার্ষিকী আজ

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ৫ ডিসেম্বর ২০১৫

গণতন্ত্রের মানসপুত্র সোহ্ রাওয়ার্দীর  মৃত্যুবার্ষিকী আজ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ গণতন্ত্রের মানসপুত্র, উপমহাদেশের প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দীর ৫২তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। বরেণ্য এ নেতা ১৯৬৩ সালের ৫ ডিসেম্বর লেবাননের বৈরুতে একটি হোটেল কক্ষে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ঢাকায় হাইকোর্টের পাশে তিন নেতার মাজারে হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দীর সমাধি। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের পর বাঙালীর যে জাতীয়তাবাদী চেতনার উšে§ষ ঘটেছিল, তাঁর নেতৃত্ব দিয়েছিলেন হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী। তাঁর রাজনৈতিক দূরদর্শিতার ফল ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট এবং অবিস্মরণীয় বিজয়। শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী ছিলেন যুক্তফ্রন্ট গঠনের মূল নেতাদের অন্যতম। গণতান্ত্রিক রীতি ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন তিনি তাই তিনি সুধী সমাজ কর্তৃক ‘গণতন্ত্রের মানসপুত্র’ বলে আখ্যায়িত হন। মহান এ নেতার ৫২তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচী নিয়েছে। হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দীর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, বিকাশ ও এ অঞ্চলের জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দীর অবদান জাতি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে। আমৃত্যু গণতন্ত্রের জন্য লড়াই চালিয়ে যাওয়া হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী উপমহাদেশে গণতন্ত্রের ইতিহাসে এক অনন্য নাম। তিনি ছিলেন প্রতিভাবান রাজনৈতিক সংগঠক, আইনজ্ঞ, বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক সভা ও গণপরিষদের সদস্য এবং অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রীসহ তৎকালীন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। রাষ্ট্রপতি বলেন, সোহ্রাওয়ার্দী তাঁর বর্ণাঢ্য কর্মজীবনে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালনকালে শ্রমজীবীসহ এতদঞ্চলের অবহেলিত মুসলিম সম্প্রদায়ের স্বার্থরক্ষায় তৎপর ছিলেন। কলকাতায় মেহনতি ও শ্রমজীবী মানুষের স্বার্থে সোহ্রাওয়ার্দী স্বল্পসময়ের মধ্যে নাবিক, রেলকর্মচারী, পাটকল ও সুতাকল কর্মচারী, রিক্সাচালক, গাড়িচালকসহ নানা শ্রেণী-পেশার মেহনতি মানুষের প্রায় ৩৬টি ট্রেড ইউনিয়ন গড়ে তোলেন বলেও তিনি উল্লেখ করেন। আবদুল হামিদ বলেন, হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী ছিলেন বিচক্ষণ ও প্রজ্ঞাবান রাজনৈতিক সংগঠক। ব্রিটিশ ভারতে মুসলমানদের সংগঠিত করতে তিনি ১৯২৬ সালে ইন্ডিপেন্ডেন্ট মুসলিম পার্টি, ১৯৩৭ সালে ইউনাইটেড মুসলিম পার্টি গঠন করেন। তিনি বলেন, সোহ্রাওয়ার্দী ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন তৎকালীন আওয়ামী মুসলিম লীগ (পরবর্তীকালে আওয়ামী লীগ) প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৫৪ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের কাছে মুসলিম লীগের শোচনীয় পরাজয়ের পেছনেও তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দীর ৫২তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে দেয়া বাণীতে তাঁর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা ও রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনে হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দীর জীবন ও আদর্শ আমাদেরকে প্রেরণা জোগাবে। তিনি (সোহ্রাওয়ার্দী) মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি বিকাশে আজীবন কাজ করেছেন। উপমহাদেশের মুসলমান সমাজের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও রাজনৈতিক স্বার্থরক্ষার সংগ্রামে হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী ছিলেন উচ্চকণ্ঠ। সোহ্রাওয়ার্দীর দক্ষ পরিচালনায় গণমানুষের সংগঠন আওয়ামী লীগ আরও বিকশিত হয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সুযোগ্য উত্তরসূরী সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে অর্জিত হয় বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা। এদিকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আজ সকাল আটটায় সোহ্রাওয়ার্দীর মাজারে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন, ফাতেহা পাঠ ও মোনাজাতের কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে। দলটির সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এক বিবৃতিতে তাঁর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেছেন, শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী গণতন্ত্রের জন্য আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। তাঁর নেতৃত্বের অসাধারণ বলিষ্ঠতা, দৃঢ়তা ও গুণাবলী জাতিকে সঠিক পথের দিক নির্দেশনা দিয়েছে। গণতন্ত্র, ন্যায় বিচার ও আইন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে তিনি অসাধারণ অবদান রেখেছেন। মহান এ নেতার মৃত্যুবার্ষিকী যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করার জন্য সৈয়দ আশরাফ আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী ও ভাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর সকল স্তরের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
×