ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পাঁচ দিনের রিমান্ডে

গোপীবাগ ও বাড্ডায় ৭ খুনে জড়িত জেএমবি জঙ্গী গাফফার গ্রেফতার

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ৫ ডিসেম্বর ২০১৫

গোপীবাগ ও বাড্ডায় ৭ খুনে জড়িত জেএমবি জঙ্গী গাফফার গ্রেফতার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শেষ পর্যন্ত রাজধানীর গোপীবাগের সিক্স মার্ডার ও বাড্ডায় পিডিবির সাবেক চেয়ারম্যান খিজির খান হত্যা মামলার অন্যতম পলাতক আসামি জেএমবি সদস্য আব্দুল গাফফার ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছেন। তাকে ৫ দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছে আদালত। ইতোপূর্বে খিজির খান হত্যা মামলায় গ্রেফতারকৃত তারেক গোপীবাগে সিক্স মার্ডারের ঘটনায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেন। সেই জবানবন্দীর সূত্রধরে গ্রেফতার করা হয় আব্দুল গাফফারকে। বহুদিন ধরেই তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা করছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানাধীন শহীদ ফারুক রোড থেকে গ্রেফতার করা হয় আব্দুল গাফফারকে (৩৮)। তিনি জেএমবির সক্রিয় সদস্য। এক সময় জামায়াত-শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। গ্রেফতারকৃত আব্দুল গাফফার গোপীবাগে সিক্সমার্ডার ও পিডিবির সাবেক চেয়ারম্যান খিজির খান হত্যায় সরাসরি অংশ নিয়েছিলেন বলে জানা গেছে। শুক্রবার বিকেলে তাকে আদালতে সোপর্দ করে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করলে আদালত তাকে ৫ দিনের রিমান্ডে পাঠানোর আদেশ দেয়। ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া বিভাগের উপ-কমিশনার মুনতাসিরুল ইসলাম এমন তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে জনকণ্ঠকে বলেন, ঘটনা দুটির সঙ্গে জড়িত অন্যদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে। চলতি বছরের ৫ অক্টোবর রাত পৌনে ৮টায় রাজধানীর বাড্ডা থানাধীন মধ্যবাড্ডার গুদারাঘাট এলাকার জ- ব্লকের ১০/১ নম্বর ৬ তলা নিজ বাড়ির দ্বিতীয় তলায় বাড়ির সবাইকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে হত্যাকারীরা। এরপর বাসার পর্দার কাপড় কেটে সবার হাত পা মুখ বেঁধে ফেলে। বাড়িটির দ্বিতীয় তলায় অবস্থিত খানকা শরীফে খিজির খানকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে হাত বাঁধার পর গলা কেটে হত্যা করে। ব্যক্তি জীবনে খিজির খান নকশেবন্দিয়া মুজাদ্দেদীয়া তরিকতের ‘রহমতীয়া খানকা শরীফ’ এর ইমাম ছিলেন। হত্যার পর লাশ খানকা শরীফের অজুখানায় ফেলে রেখে হত্যাকারীরা চলে যায়। খিজির খান হত্যা মামলায় চলতি বছরের ১৩ অক্টোবর টাঙ্গাইল জেলার দেলদুয়ার থেকে তরিকুল ইসলাম ওরফে তারেক ওরফে মিঠু (২৬) এবং পরদিন ১৪ অক্টোবর রাজধানীর মিরপুর থেকে আলেক বেপারী (৪৮) ডিবির হাতে গ্রেফতার হয়। তারেক স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয়। জবানবন্দীতে খিজির খান হত্যা ছাড়াও ২০১৩ সালের ২১ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় গোপীবাগের আর কে মিশন রোডের ৬৪/৬ নম্বর আয়না নামের বাড়ির দোতলায় ইমাম মাহদীর প্রধানসেনাপতি দাবিদার কথিত পীর লুৎফর রহমান ফারুক (৬০), তার ছেলে সিটি ব্যাংকের কর্মকর্তা মনির হোসেন (৩০), কথিত পীরের অনুসারী সাইদুর রহমান (৩০), মজিবর রহমান (৩২), রাসেল (৩০) ও বাসার তত্ত্বাবধায়ক মঞ্জুর আলম ওরফে মঞ্জুকে (৪৫) দরবার শরীফে গলা কেটে হত্যার দায় স্বীকার করে। ৭-৮ জন গোপীবাগের হত্যাকা-টি ঘটায়। আর প্রায় সমসংখ্যক সদস্যই খিজির খানকেও একই কায়দায় গলা কেটে হত্যা করে। ধর্মীয় মতপার্থক্যের কারণেই নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) ফারুক নিয়ন্ত্রিত গ্রুপটি হত্যাকা- দুইটি সংঘটিত করে। বেশি সওয়াবের আশায় মিঠু একাই খিজির খানকে জবাই করে। ৮ জনে মিলে খিজির খানকে হত্যা করে। তবে বাসার ভেতরে ছিল ৬ জন। খিজির খান ও গোপীবাগের ঘটনায় গ্রেফতারকৃতরা পীর-দরবেশ, মাজারসেবক ও ফকিরদের হত্যা করা ঈমানী দায়িত্ব বলে মনে করে। তাদের হত্যা করে নিহতদের বাসাবাড়ি থেকে গনিমতের মাল হিসেবে দামী মালামাল লুট করা বৈধ বলেও জেএমবির গ্রুপটি মনে করে। এজন্য গোপীবাগে ৬ জনকে এবং খিজির খানকে হত্যার পর বাসা থেকে টাকাপয়সা, স্বর্ণালঙ্কার ও দামী মালামাল নিয়ে যায় হত্যাকারীরা।
×