ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

উন্নত দেশগুলোকে আরও কার্বন কমানোর অঙ্গীকার করতে হবে

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ৫ ডিসেম্বর ২০১৫

উন্নত দেশগুলোকে আরও কার্বন কমানোর অঙ্গীকার করতে হবে

কাওসার রহমান, প্যারিস থেকে ॥ জলবায়ুর সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দশ দেশের তালিকায় আবারও উঠেছে বাংলাদেশ। এই ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকায় এবার বাংলাদেশের অবস্থান ষষ্ঠ। এবার ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকার প্রথম স্থানে রয়েছে হন্ডুরাস। দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে রয়েছে যথাক্রমে মিয়ানমার ও হাইতি। এদিকে, জলবায়ু সম্মেলনে বিশ্ব নেতৃবৃন্দ বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রীতে রাখার অবস্থান থেকে সরে এসেছে। শুক্রবার পঞ্চম দিনে তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ২ ডিগ্রী সেলসিয়াসে রাখা। বিশ্লেষকরা বলছেন, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ২ ডিগ্রী সেলসিয়াসে রাখতে হলে উন্নত দেশগুলো আরও অধিক পরিমাণে কার্বন কমানোর অঙ্গিকার করতে হবে। কারণ এ পর্যন্ত উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলো কার্বন কমানোর যে অঙ্গিকার করেছেন, তাতে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যাবে। গত ২০ বছরের জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ পর্যালোচনা করে আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা জার্মান ওয়াচ এই ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকা গ্লোবাল ক্লাইমেট রিস্ক ইনডেস্ক ২০১৬ প্রকাশ করেছে। সংস্থাটি গত কয়েক বছর ধরেই জলবায়ু সম্মেলন চলাকালে গ্লোবাল ক্লাইমেট রিস্ক ইনডেস্ক প্রকাশ করে আসছে। ২০১৬ সালের এই সূচকে বাংলাদেশ এবার ৬ষ্ঠ স্থানে অবস্থান করছে। দীর্ঘমেয়াদী ক্লাইমেট রিস্ক ইনডেস্কে প্রণয়নে ১৯৯৫ সাল থেকে ২০১৪ সালের জলবায়ুর ঝুঁকি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ বিবেচনায় নেয়া হয়। এ সময়ে বাংলাদেশে ২২২টি প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঘটনা ঘটেছে। এতে বাংলাদেশের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে জিডিপির দশমিক ৮৬ শতাংশ। এই সূচকে বাংলাদেশের স্কোর হলো ২২.৬৭। আর হাইতিরর স্কোর ১১। এই তালিকায় বাংলাদেশের পেছনে রয়েছে ভিয়েতনাম, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড ও গুয়াতামালা। দীর্ঘ মেয়াদে এই দেশগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ার কারণ হচ্ছে, এ সব দেশে খুব ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দিচ্ছে। যে সব দেশে এক সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগ খুব কম হতো, সেসব দেশেও তীব্র আকারের দুর্যোগ আঘাত হানছে। জার্মান ওয়াচ বলছে, প্যারিস জলবায়ু সম্মেলনে এই ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জনগণের জন্য পৃথক ‘সেফগার্ড’ ব্যবস্থা থাকা দরকার। এছাড়া জলবায়ু চুক্তির অভিযোজন নীতিমালায় ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর ক্ষয় ও ক্ষতির বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। বিপন্ন দেশ আইনী চুক্তি ছাড়া কিছু মানবে না ॥ বাংলাদেশসহ জলবায়ুর ঝুঁকিপূর্ণ ও বিপন্ন দেশগুলো শুক্রবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলন করে বলেছে, জলবায়ুর প্রভাব মোকাবেলায় প্যারিসে আইনী চুক্তির বাইরে অন্য কোন কিছু মানবে না। প্যারিস জলবায়ু সম্মেলনের পঞ্চম দিন শুক্রবার সকাল ১০টায় প্রকাশিত খসড়া চুক্তির ওপর প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বেলা ১২টায় স্বল্পোন্নত ও বিপন্ন দেশগুলোর নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে বিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞদের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, ১.৫ ডিগ্রী সেলসিয়াসের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন কঠিন হলেও অসম্ভব নয়। স্বল্পোন্নত ও বিপন্ন দেশগুলোর নাগরিক সমাজ বিশ্ব নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানান একুশ শতকে প্রাক-শিল্পায়ন যুগের চেয়ে ১.৫ ডিগ্রী সেলসিয়াসের নিচে তাপমাত্রা বৃদ্ধি সীমাবদ্ধ রাখার। উল্লেখ্য, জলবায়ু সম্মেলনে বিশ্ব নেতৃবৃন্দ বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি দুই ডিগ্রী সেলসিয়াসে রাখার ব্যাপারে একমত হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে বাংলাদেশে সক্রিয় জোট বাপা, বিপনেট, বিসিসিজেএফ, সিসিডিবি, সিডিপি, সিজিসি, সিএসআরএল, সিপিআরডি, ইক্যুইটিবিডি, এনসিসিবি ও পিআরডিআই আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনে স্বল্পোন্নত ও বিপন্ন দেশগুলোর নাগরিক সমাজের পক্ষে বক্তব্য উপস্থাপন করেন শরমিন্দ নীলোর্মি, টেটেট লরান, মৃণাল কান্তি ত্রিপুরা, এম শামসুদ্দোহা ও জাহাঙ্গীর হাসান মাসুম। বিশ্ব নেতৃবৃন্দের ঘোষিত ২ ডিগ্রী সেলসিয়াসের লক্ষ্যমাত্রাকে মানবসমাজের জন্য বিপজ্জনক আখ্যায়িত করে তারা বলেন, ১৫০টি দেশ ক্ষতিকর গ্রীন হাউজ গ্যাসের নির্গমণ হ্রাসে জাতীয়ভাবে নির্ধারিত অনুমিত অবদানের যে হিসেবে দাখিল করেছে তা পৃথিবীকে প্রলয়ঙ্করী দুর্যোগের ৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা বৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাবে। তারা বায়ুম-লের তাপমাত্রা হ্রাসে ২০২০, ২০২৫ ও ২০৩০ সালের মধ্যে শিল্পোন্নত, উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে গ্রীন হাউস গ্যাসের সর্বোচ্চ মাত্রার নির্গমণ সীমাবদ্ধ রাখার জন্য জোর আহ্বান জানান। সংবাদ সম্মেলনে, ক্ষয়ক্ষতি বিষয়ক আলোচনায় জলবায়ু পরিবর্তনের আকস্মিক ও দীর্ঘমেয়াদী প্রভাবে বাস্তুচ্যুত জনগণের স্বার্থ রক্ষার আহ্বান জানানো হয়। বলা হয়, বীমা বা পুনঃবীমার নামে গ্রাম থেকে শহরে বা গরিব দেশ থেকে ধনী দেশে প্রিমিয়ামের নামে সম্পদ পাচারের ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে হবে। বাজার ব্যবস্থার নামে ধনী দেশগুলো গরিব দেশ থেকে সম্পদ আত্মসাতের ষড়যন্ত্র করছে জলবায়ু পরিবর্তনকে ব্যবহার করে।
×