ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

স্বাধীনতার পর আসে বঙ্গবন্ধু স্বাক্ষরিত শোকবার্তা

প্রকাশিত: ০৩:৪২, ৫ ডিসেম্বর ২০১৫

স্বাধীনতার পর আসে বঙ্গবন্ধু স্বাক্ষরিত শোকবার্তা

দিন-তারিখ ঠিক মনে নেই। সেদিন দুপুর দেড়টা কিংবা ২টার দিকে পাজামা আর জামা পরে আমার আজাদ সামনে এসে আমার পায়ে হাত দিয়ে সালাম করে। কোন কিছু জিজ্ঞাসা করার আগেই সে বলে উঠল, ‘বহু দূরে যাচ্ছি। আমার জন্য দোয়া কোর মা।’ কারণ জিজ্ঞাসা করতে জবাব দেয়, ‘মা, তোমার জন্য স্বাধীনতা আনতে যাচ্ছি।’ শহীদ আজাদের মা মনি বেওয়া সন্তানের স্মৃতিফলক শ্রীবৃদ্ধি পুনঃসংস্কারসহ স্থায়ী বাসস্থানের ব্যবস্থা এবং প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করার শেষ ইচ্ছা ব্যক্ত করেছেন। মনি বেওয়া বললেন-তখন স্বাধীনতার মানে জানতাম না, বুঝতেও পারিনি। আজ আমি বুঝি স্বাধীনতা কী। কিন্তু যে স্বাধীনতার জন্য আমার বুকের ধন জীবন দিয়েছে, শহীদ হয়েছে, সেই স্বাধীনতার পুরো স্বাদ আজও পাইনি। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় আমি দুই মেয়ে আর এক ছেলের মা। সে সময় সিরাজগঞ্জ মহকুমার জানপুর মহল্লায় স্বামীসহ পাঁচজনের সংসারে অভাব থাকলেও অশান্তি ছিল না। আজাদের বাবা হোসেন আলী শেখ ছিলেন কর্মঠ শ্রমিক। সে সময় আবুল কালাম আজাদ সিরাজগঞ্জের ভিক্টোরিয়া হাইস্কুলে দশম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ালেখা করেছিল। ইচ্ছা ছিল, ছেলে পড়াশোনা করে সরকারী চাকরি করবে। মুক্তিযুদ্ধ শুরুর আগে বাঙালীদের ওপর পাকিস্তানীদের দমন-পীড়ন আর অত্যাচার তাদের বিক্ষুব্ধ করে তোলে। আজাদ এ সময় পড়াশোনা ছেড়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে সিরাজগঞ্জবাসীকে সোচ্চার করতে সে এ সময় দিনরাত কাজ করেছে। তার বাবা এ জন্য তাকে সাবধান করলেও কখনও নিষেধ করেননি। মুক্তিযুদ্ধ শুরুর সময় আজাদ সিরাজগঞ্জের বেশ কিছু যুবকের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়ার জন্য ভারতে রওনা দেয়। ভারতের পশ্চিম দিনাজপুরের বালুঘাট এলাকায় দীর্ঘদিন প্রশিক্ষণ নেয় সে। এরপর দেশে ফিরে ঝাঁপিয়ে পড়ে যুদ্ধে। ৭ নম্বর সেক্টর কমান্ডার মেজর কামরুজ্জামানের অধীনে দেশের বেশ কয়েকটি স্থানে পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে সম্মুখযুদ্ধে অংশ নেয়। ১৯৭১ সালের ১৭ জুলাই আজাদ দিনাজপুর জেলার হিলি থানার কোরিয়া গ্রামে পাকবাহিনীর সঙ্গে দীর্ঘ সম্মুখযুদ্ধে শহীদ হয়। স্থানীয় লোকজন জানায়, মৃত্যুর আগে আজাদকে নির্যাতনও করা হয়। দেশ স্বাধীনের পর আমার সন্তানের খোঁজে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। এ সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাক্ষরিত শোকবার্তাসহ এক হাজার টাকা আমার কাছে পাঠানো হয়। তৎকালীন সিরাজগঞ্জ মহকুমা প্রশাসকের কাছ থেকে এগুলো নিতে গিয়ে জানতে পারি আমার সন্তানের শহীদ হওয়ার ঘটনা। এরপর স্বাধীন দেশে অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে অভাব-অনটনে শুরু হয় আমার পথচলা। স্বাধীনতার তিন বছর পর আজাদের বাবা মারা যান। পরবর্তী সময়ে স্বাধীন সরকারের পক্ষ থেকে শহীদ আজাদের মা হিসেবে আমাকে আট শতক জমির ওপর বাড়ি এবং সাড়ে ২৯ শতক পরিমাণের পুকুর দেয়া হয়। কিন্তু চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত না দেয়াতে হতাশার মধ্যে বসবাস করছি। দেশ স্বাধীনের পর একাধিক সরকার পরিবর্তন হয়েছে কিন্তু আজও বাড়ি এবং পুকুর স্থায়ী বন্দোবস্ত আমাকে দেয়া হয়নি। Ñবাবু ইসলাম, সিরাজগঞ্জ থেকে
×