ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ভালোবাসার জয়গান ‘দ্য বেন্ট’

প্রকাশিত: ০৩:৩৩, ৫ ডিসেম্বর ২০১৫

ভালোবাসার জয়গান ‘দ্য বেন্ট’

গৌতম পা-ে ॥ অদম্য ভালোবাসার কাছে মৃত্যু কখনো কখনো তুচ্ছ হয়ে যায়। হোক না সে নারী ও পুরুষের মধ্যে অথবা সমকামী, সমপ্রেমীদের মধ্যে। ‘দ্য বেন্ট’ নাটকে প্রখ্যাত নাট্যকার মার্টিন শেরম্যান তারই অবতারণা করেছেন শৈল্পীক দৃষ্টিভঙ্গিতে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে রচিত এই নাটকে রূপায়িত হয়েছে ইহুদিদের ওপর হিটলারের ন্যাৎসি বাহিনীর অত্যাচারের কাহিনী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দশম কেন্দ্রীয় বার্ষিক নাট্যোৎসব-২০১৫’র উদ্বোধনী সন্ধ্যায় মঞ্চস্থ হয় শেরম্যানের বিখ্যাত এই নাটক ‘দ্য বেন্ট’। নাটকটি অনুবাদ ও নির্দেশনা দিয়েছেন শাহারুল ইসলাম কাজল। নাট্যাভিনয়ে অংশ নিয়েছেন যারা তারা হলেন-ইশতিয়াক খান পাঠান, শাহারুল ইসলাম কাজল, ধীমান চন্দ্র বর্মন, নাজমুল হুদা সাকীর, রণি দাস, এসএম জুম্মান সাদিক, রামকৃষ্ণ সাহা, রাফি আহসান রহমান, ইমতেনান জাকি ও জবল ই রহমত। মঞ্চ ও আলোক পরিকল্পনা শাহারুল ইসলাম কাজল, পোষাক পরিকল্পনা কৃপাকনা তালুকদার, আলোক প্রেক্ষেপন হাফিজুল ইসলাম ও আবহ সঙ্গীতে ছিলেন কামরুল ইসলাম। নাটকের শুরুটা হয় ম্যাক্স, রুডি ও মি. পারকার নামের তিন সমপ্রেমী ইহুদিদের নিয়ে। তিনজন সমকামী পুরুষ শুয়ে আছে, হঠাৎ হিটলারের নাৎসি বাহিনীর সদস্য ঢুকে পড়ে তাদের ঘরে। বন্দুকের মুখে তুলে নেওয়া হয় তাদের, চালানো হয় অমানুষিক নির্যাতন, কারণ তারা ইহুদি। মি. পারকার ও রুডিকে হত্যা করে ফ্যাসিবাদী নাৎসী বাহিনী ম্যাক্সকে বার্লিন থেকে হামবুর্গে ধরে নিয়ে যায়। সেখানে হর্স্ট নামের এক সমপ্রেমীর সঙ্গে ম্যাক্সের পরিচয় হয়। সেখানে ইলেট্রিক শর্ট দেয়া এক কাটাতারের বেড়ার কাছে পাথর উঠানোর কাজ দেয়া হয় তাদের। কাজে অবহেলা ও নাৎসি বাহিনীর কথা অমান্য করলে চালানো হয় নির্যাতন। ইতিপূর্বে সেখানে যারা তাদের কথা অমান্য করেছে তাদের হত্যা করা হয়েছে। হত্যার কাজটি ছিল অভিনব। নির্যাতিতদের মাথায় টুপি পরে থাকতে হবে। বাহিনী যাদের হত্যা করবে স্থির করে, তাদের মাথার টুপি খুলে কাটাতারের উপর রাখতে বলা হয় এবং পরবর্তিতে হাত দিয়ে আনতে গেলেই ইলেকট্রিক শর্টে তার মৃত্যু ঘটে অথবা গুলি করে মারা হয় তাকে। হর্স্ট ও ম্যাক্স কঠোর নির্যাতনের মধ্যেও একে অপরের ভালবাসা থেকে বিচ্যুত হয় না। তাদের মধ্যে গভীর প্রেমের সম্পর্ক ফ্যাসিবাদী নিপীড়নের মধ্যে ছয় মাসের বেশি স্থায়ী হতে পারেনি। নাৎসি ক্যাপ্টেনের হাতে হর্স্ট নির্মমভাবে হত্যা হয়। জীবনে বিচ্ছেদের ভার বইতে না পেরে বৈদ্যুতিক কাটাতার স্পর্শ করে ম্যাক্সও আত্মহত্যার মাধ্যমে বেছে ন্যায় জীবনের অন্তিম পরিণতি। নাটকটিতে এক দিকে জার্মানির নাৎসি বাহিনীর সীমাহীন অত্যাচার, অন্যদিকে একদল সমপ্রেমী মানুষের অকৃত্তিম ভালোবাসার জয়গান রূপায়িত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অনবদ্য অভিনয় শৈলী নাটকে এনে দিয়েছে প্রাণচাঞ্চল্য। নির্দেশক শাহারুল ইসলাম কাজল এ ক্ষেত্রে কৃতিত্বের দাবিদার নি:সন্দেহে,কারণ তিনি নিজেও এতে অভিনয় করেছেন। কঠিন এ নাটকটিতে দর্শক প্রিয়তা অর্জন সহজ নয়, তথাপী তরুণ এ অভিনেতাগণের চেষ্টা ছিল হৃদয়গ্রাহী করে তোলার। দৃশ্যান্তর ও আলোর প্রক্ষেপন যথাযথ লক্ষ করা না গেলেও মূল বিষয়বস্তু উত্থাপনে কারপন্য করেনি কেউ। প্রসঙ্গত, ‘শিল্পের মুক্ত ভাষা অভিমুখে’ সেøাগানে টিএসটি মিলনায়তনে সপ্তাহব্যাপী এ নাট্যোৎসবের আয়োজন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার এ্যান্ড পারফর্মেন্স স্টাডিজ বিভাগ। উৎসবের উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড.আআমস আরেফিন সিদ্দিক। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। বিশেষ অতিথি ছিলেন কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড.মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান ও ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম। সভাপতিত্ব করেন বিভাগীয় প্রধান সুদীপ চক্রবর্তী।
×