ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

মুহম্মদ শফিকুর রহমান

জাতিসংঘ এবং সার্ক থেকে পাকিস্তানকে বহিষ্কার করুন

প্রকাশিত: ০৩:২৮, ৫ ডিসেম্বর ২০১৫

জাতিসংঘ এবং সার্ক থেকে পাকিস্তানকে বহিষ্কার করুন

পাকিস্তান সেই বর্বরই রয়ে গেল। সভ্য হলো না। সাকা এবং মুজাহিদকে ফাঁসির মঞ্চ থেকে ছাড়িয়ে নিতে ব্যর্থ হয়ে এখন বলছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানী মিলিটারি বাংলাদেশে গণহত্যা চালায়নি, নারী ধর্ষণ করেনি, মানুষের বাড়ি-ঘর জ্বালায়নি, মানুষকে গৃহহারা করেনি, দেশত্যাগে বাধ্য করেনি অর্থাৎ কোন রকম মানবতাবিরোধী অপরাধ তারা করেনি। এর জবাব কি দেব? অনেক ভেবে একটি শব্দ তিনবার উচ্চারণ করলাম- মিথ্যুক, মিথ্যুক এবং মিথ্যুক! বস্তুত যে দেশে মালালার মতো সোনার মেয়েকে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়, দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়, সে দেশটি সম্পর্কে মন্তব্য অবান্তর। সে দেশে কোন সভ্য মানুষ বাস করতে পারে না। পাকিস্তানের এই মন্তব্য শোনার পর সর্বজনশ্রদ্ধেয় শিক্ষাবিদ বুদ্ধিজীবী ইমিরিটাস প্রফেসর ড. আনিসুজ্জামান ঘৃণাভরে পাকিস্তানের বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, ঞযরং রং যরমযষু ধঁফধপরড়ঁং, চধশরংঃধহ পধহ হড়ঃ ফবহু ঃযব ৎবধষরঃু ড়ভ ১৯৭১, হড়ৎ পধহ রঃ রহঃবৎভবৎব রহ ড়ঁৎ রহঃবৎহধষ ধভভধরৎং. ঞযরং রং ংড়সবঃযরহম ঃযধঃ ঃযব মড়াবৎহসবহঃ ংযড়ঁষফ ঃধশব ঁঢ় ংবৎরড়ঁংষু. এটি পাকিস্তানের বড় ধরনের ধৃষ্টতা। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে পাকিস্তানী মিলিটারির বর্বরতার কথা তারা অস্বীকার করে কি করে? আমাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারেই বা তারা হস্তক্ষেপ করে কি করে? এটি সাধারণ কোন ব্যাপার নয়। বাংলাদেশ সরকারের উচিত হবে বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে কড়া জবাব দেয়া (ডেইলি স্টার, ২ ডিসেম্বর ২০১৫)। অবশ্য আমরা জানি ঢাকাস্থ পাকিস্তানী হাইকমিশনারকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ডেকে এনে দু’কথা শুনিয়ে দেয়া হয়েছে। কিন্তু এটাই শেষ কথা নয়। দৃশ্যমান কিছু করা দরকার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. আ আ ম স আরেফীন সিদ্দিক পাকিস্তানের মিথ্যাচারের কড়া জবাব দিয়ে বলেছেন, জাতিসংঘ এবং সার্কের উচিত হবে পাকিস্তানকে ঐ আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সংস্থা থেকে বের করে দেয়া। অবশ্য এর আগে ২০১৩ সালে আলবদর কাদের মোল্লার ফাঁসির পরও পাকিস্তান এমন ধৃষ্টতা দেখিয়েছিল। কিন্তু পাকিস্তানের বর্তমান নেতৃত্বের জানা দরকার বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী আমাদের জাতির পিতা বাঙালী জাতিরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা। পিতার মতোই তিনি সাহসী, মেধাবী এবং দূরদর্শী। ভাঙবেনও না মচকাবেনও না, বরং দৃপ্ত পদভারে তিনি এগিয়ে চলেছেন। পিতা বাঙালীর হাজার বছরের স্বপ্নসাধ স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছেন আর কন্যা দেশকে মধ্যম আয়ের পথে অনেকখানি এগিয়ে নেয়ার পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার এবং একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের আইনের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে বিচারের মাধ্যমে দেশ ও জাতিকে দায়মুক্ত করছেন। নিজে হয়েছেন ধরিত্রীর আদরের কন্যা। বৃহস্পতিবারের কাগজে দেখলাম ত্বরিত সিদ্ধান্ত গ্রহণের স্বীকৃতিস্বরূপ শেখ হাসিনা এখন জার্মানির এঞ্জেলা মার্কেল বা রাশিয়ার পুতিনের কাতারে। পাকিস্তান আজ বলছে একাত্তরে তারা মানবতাবিরোধী কোন অপরাধ করেনি। পাকিস্তানের ভুলে যাওয়া উচিত নয় যে, আমরা যারা যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি তারা এখনও বেঁচে আছি। আমি মনে করি এই বক্তব্য দেয়ার পেছনে পাকিস্তানের বদমতলব রয়েছে। তাদের দেশটা তো গেছে কাজেই বাংলাদেশকেও ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দিতে হবে, এই তাদের টার্গেট। কিন্তু বাংলাদেশকে ধ্বংস করতে পারে বা ক্ষতি করতে পারে এমন চিন্তা যে করে, সে পাগল ছাড়া আর কিছু নয়। আমাদের নতুন প্রজন্মও আজ একেকজন মুক্তিযোদ্ধা। তারা আমাদের স্বাধীনতা সার্বভৌম রক্ষায় কাজ করছে। জ্বলন্ত মোমবাতি হাতে দাঁড়িয়ে কোটি মানুষ শপথ গ্রহণ করেছে বাঙালীর মান রাখবেই। তারা শপথ গ্রহণ করেছে রাজাকার-আলবদর-আলশামসের বিচার এই বাংলার মাটিতেই হবে। হচ্ছেও। পাকিস্তানের মানবাধিকার নেত্রী আসমা জাহাঙ্গীর বলেছেন, সাকা এবং মুজাহিদ বাংলাদেশে পাকিস্তানের এজেন্ট হিসেবে কাজ করত। আসমা জাহাঙ্গীরের এ কথার প্রেক্ষিতে আমাদের দেশের দিকে তাকালে দেখব জাতির পিতার হত্যার পর যারা রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেছিল তারা বিচারাধীন ও সাজাপ্রাপ্ত (ফাঁসি, যাবজ্জীবনসহ) যুদ্ধাপরাধীদের কারাগার থেকে মুক্ত করে দল করেছিল এবং সেই দলেরই মুখ্য শরিক বিএনপির স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য সাকা চৌধুরী আর সরাসরি স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধ রচনাকারী জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল ছিল আলী আহসান মুজাহিদ। যে কারণে তাদের ফাঁসি দেয়া হলে পাকিপন্থীদের রক্তক্ষরণ হয়। এমনকি ইমরান খানের মতো বিশ্বখ্যাত ক্রিকেটার, হালে রাজনীতিক, তিনি নেমে পড়েন সাকাকে বাঁচাতে। এভাবে বিশ্লেষণ করলে এটি পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে যে, পাকিস্তান একাত্তরের প্রতিশোধ নিতে চূড়ান্ত আঘাত ব্যর্থ চেষ্টা করছে। আর পাকিস্তানের এ প্রতিশোধ স্পৃহা চরিতার্থ করার কাজে যোগ দিয়েছেন বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় সাম্প্রদায়িক ও পাকিস্তানপন্থী রাজনৈতিক জোটনেত্রী খালেদা জিয়া। তিনি প্রথম থেকেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরোধিতা করে আসছেন। কখনও সরাসরি কখনও ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ডের নামে বিরোধিতা। যে কারণে পাকিস্তানের সর্বশেষ স্টেটমেন্টের (পাকিস্তান কোন মানবতাবিরোধী কোন অপরাধ করেনি) পরও নীরব থাকে। কথায় কথায় দু’একটা মন্তব্য করলেও তা দায়সারা। পাকিস্তান কিভাবে বাংলাদেশে গণহত্যা চালিয়েছিল তার একটি চিহ্ন হলো ২৫ মার্চ অপারেশন সার্চ লাইটের শিকার রিকশার ওপর বুলেটবিদ্ধ হয়ে মরে পড়ে থাকা যাত্রী ও রিকশাঅলার ছবি, ২. দুই হাতে মুখ ঢেলে লজ্জা ঢাকার প্রচেষ্টায় পত্রিকার পাতার সেই তরুণী, ৩. মিরপুর ও রায়ের বাজার বধ্যভূমিতে ছিন্নভিন্ন মৃতদেহ। এসব হলো আমাদের দেশের কথা। পাকিস্তানেও তখন একটি তদন্ত কমিটি হয়েছিল - হামুদুর রহমান তদন্ত কমিশন। সেই কমিশনে অর্থাৎ ’৭১-এর বাঙালীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা মিলিটারিদের যারা সাক্ষ্য দিয়েছিল তাদের একজন লে. কর্নেল আজিজ আহমেদ খান। তিনি তাঁর সাক্ষ্যে পরিষ্কার বলেছেন কিভাবে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে পাকিস্তান আর্মির কমান্ডার লে. জেনারেল নিয়াজী গণহত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন। আজিজ আহমেদ খান দেখিয়েছেন কিভাবে হিন্দুদের হত্যা করার জন্য লিখিত নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। নিয়াজী সকল এরিয়া কমান্ডারদের হিসাব নিত কে কত হিন্দু হত্যা করেছে। পাকিস্তানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ, মুসলিম লীগ নেতা যারা পাকিস্তান ও ইসলাম রক্ষার নামে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিল। গণহত্যা, নারী নির্যাতন চালিয়েছিল। আজও আবার তারা ধৃষ্টতা দেখাচ্ছে। তাদের উদ্দেশ্যে কেবল বলব- ক. বাড়াবাড়ি বাঙালী সহ্য করবে না। খ. বঙ্গবন্ধু নির্দেশিত বাংলার ঘরে ঘরে দুর্গ আজও বিদ্যমান। গ. বাংলাদেশ এখন আরও বেশি শক্তিশালী। দেশপ্রেম সামরিক শক্তিতে, আর্থিক ও সামাজিকভাবে। ঘ. সর্বোপরি এখন বাংলার গণমানুষ এবং রাষ্ট্রীয় নেতৃত্ব দিচ্ছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। যিনি দু’দিন আগে এক জরিপে ত্বরিত এবং সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে পারদর্শী ১০০ নারীর অন্যতম- তার মধ্যে জার্মানির এঞ্জেলা মার্কেল, ভøাদিমির পুতিনের পাশাপাশি তাঁর অবস্থান এবং ঙ. তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি নাগরিকের দেয়া সাংবিধানিক ক্ষমতাবলে রাষ্ট্র পরিচালনা করেন। চ. দেশের অভ্যন্তরে যাদের বুক থেকে এখনও পাকিস্তানের দ্বি-খ-নের জন্য রক্তক্ষরণ হচ্ছে, তাদের প্রতিরোধ করার জন্য রয়েছে কোটি কোটি সাহসী, দেশপ্রেমিক, মেধাবী তরুণ। ঢাকা ॥ ৪ ডিসেম্বর ২০১৫ লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক ও সভাপতি, জাতীয় প্রেসক্লাব নধষরংংযধভরয়@মসধরষ.পড়স
×