পুনরাগমন
আলমগীর রেজা চৌধুরী
রীয়াজ ইলিনয়
মাহমুদ রেজা নিউইয়র্ক
রিটন কানাডায়
মঈনুস মেক্সিকো
দেখা হয় না, কথা হয়
সেকেন্ড-যুগ পেরিয়ে যায়, দেখা হয় না।
কেনেডি লাউঞ্জ থেকে ফকরুল রচি কল করে,
‘আসছি জনাব।’
চোয়াল ভাঙা শ্যামাঙ্গিনী
আমি জাতিস্মর, তোমার জন্য পুনরাগমন
এ সিলমোহর তুমি দেখোনি?
কত কী হারাতে হলো,
কত বিরল দগ্ধ দুপুর-বিকেল-রাত
প্রভাতে পৌঁছে যায়।
রক্তস্নাত এন্ট্রিক রেখে দিয়েছি...
মুঠোফোনে রীয়াজকে কুয়াশার নদীর কাছে নিয়ে যাই
রচিকে কমেন্টস পাঠাই, ‘এত দিন পর?’
ভুলে যাওয়া পাতক।
মঈনুসের দিকে সন্ধিগ্ধ চোখ, হলেনের ঘরবাড়ি
প্রিয় রিটন, তুমিও কি বিস্মৃতি পঙ্খী?
ভুলে যাওয়া সময়
টরেন্টোর হিম কুয়াশায় কাতর বঙ্গসন্তান
দৈনিক বাংলার হাবীব ভাইয়ের রুম থেকে বেরিয়ে
হাঁটছ, হাঁটছ হাঁটছ।
আমি জাতিস্মর,
চোয়াল ভাঙা শ্যামাঙ্গিনীর জন্য
কোথাও যেতে পারি না।
রেমেদিওস
শেখ আতাউর রহমান
বন্ধু গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেস
শোনো আমার নিষিদ্ধ প্রেমের অবোদ্ধ সংলাপ
তোমার অবিশ্বাস্য অপ্রাপনীয়া অনন্যা রেমেদিওস
উটপাখি ডিমের মতো সর্বাঙ্গীণ আঁচড়হীন, কচি ধানপাতার মতো নির্মল নির্দোষ।
তবু কি অমোঘ নিয়তি তার-জন্মাবধি অভিশপ্ত! হায় আমিও তৃষ্ণার্ত
তারই জন্যে মাকোন্দোর গহীন অরণ্যে সেই আঠারো বছর থেকে।
এবং এতদিনেও আমার এ বাসনার তীর এতটুকু যায়নিতো বেঁকে।
মার্কেস, নাদান প্রেমিক আমি, তার অক্ষত হাইমেন কচুখেতে ক্ষুধাতুর শূকরের মতো
আমার সক্রুদ্ধ শিশ্নে ফালাফালা করে দিতে চাই-নাই, নাই, নাই-এছাড়া আমার পরিত্রাণ নাই!
খোলাজানালায় জাদুনারীকে একবার চোখে পড়তেই পলকে হয়েছি চেতনাহত,
তারপর স্নানঘরে ন্যাংটো শরীর দেখে ছাদের টালি ভেঙে পড়ে নিহত।
এরপর আমার স্পাইনালকর্ডে তপ্ত বুলেট গেঁথে সর্বশরীর করেছো রঞ্জিত।
অবশেষে অশ্বখুরাহত।
এভাবে অবিরাম মরেও আমি হে অপ্রাপনীয়া তোমার সান্নিধ্যে ফিরেছি আবার
পারবেনা পারবেনা এই বেতমিজ জাতিস্মরকে করতে সংহার!
সুহৃদয় মার্কেস, বন্ধুগো সদয় হও, জাদুবাস্তবতায় উড়িয়ে নিওনা ওকে-
ওর সুধাময় সুনিবিড় সান্নিধ্য থেকে, দিওনা সীমাহীন অসীম দিগন্তে সফেদ মেঘেরকোলে ঠাঁই
জেনে নাও এই আরণ্যক বন্য পদ্মগন্ধা আমার চাই-ই চাই।
খোদার কসম, নির্বাসিত করোনা ওকে কোনো অজ্ঞেয় অগম্য অচিনপুরে
কোটি কোটি আলোকবর্ষ দূরে বেসামাল রঙিন ইচ্ছেঘুড়ির মতোন
তবে আমিও উড়বো-পিছু নেবো তার-বেছে নেবো আত্মধ্বংসী মেঘের জীবন।
সত্যজিৎ রায়
চঞ্চল শাহরিয়ার
যে কোন শৈশবে তোমার উজ্জ্বল নাম
আমি মুখস্থ করেছি গুরুজনদের কাছ থেকে।
যেমন মুখস্থ করেছি নজরুল, রবীন্দ্রনাথ
জসীমউদ্দীন, জীবনানন্দ দাশের নাম।
তুমি সত্যজিৎ রায়
তুমি পথের পাঁচালীর সফল নির্মাতা
তুমি অপুর সংসার, শাখা প্রশাখা
মহানগর, গণশত্রুর আলোকিত দৃষ্টান্ত।
সৌখিন পেশার মাঝে
তোমার দীর্ঘকালের দীপ্ত পদচারণা
আমাকে উৎসাহিত করেছে
আমাকে রোমাঞ্চিত করেছে
নিয়ে গেছে স্বপ্নের শহরে।
সেই তুমি আর নেই
এই ভয়াবহ দুঃসংবাদ
বড় অবেলায় এসে কড়া নাড়লো
যৌবনের দরোজায়।
আমি কখনোই কোন মহাপুরুষের মৃত্যু
মেনে নেইনি
তোমার মৃত্যুকে আমি মেনে নিতে পারছি না।
তোমার মৃত্যুকে মেনে নেয়া মানে
বর্তমানের কাছে হেরে যাওয়া
ধ্বংসের কাছে সমর্পিত হওয়া।
আমি বিশ্বাস করি
তুমি সত্যজিৎ রায়
কর্মক্ষেত্রে তোমার প্রতিটা সত্যের জিৎ হয়েছে
তুমি রায় পেয়েছো বিশ্ব মানবতার।
উড়োমেঘ
(নারীবাদী লেখক বেলা দাসের সৌজন্যে)
হাসান হাবিব
এতোদিন হয়তো মীরাদের উড়ে যাওয়া
চিঠিটা ফেরত পাবে,
মীরা জানতো শীতের তালিকাটি
দেওয়া ছিলো তার-
উষ্ণ শরীর তার সেরকম যায় না;
সে হয়তো শীতের শরীরটা বোঝে
অবিনাশী গ্রীবায় ঠোঁট রেখে
গেলে
জন্ম হয় ক্ষত, শৈশব, বিষণœ দেশ
লুকানো স্মৃতি
মীরার বর্ণে সাজানো;
এক মহুয়া দুই হয়ে ফিরে যায়
ঝিনুক নক্ষত্রে...
শুধায় বিষ...উড়ো যৌবন
সেই নগ্ন নাভি
একটা দৃশ্য হবে
মীরা জানতো, তার হবে
লুকানো ঠোঁট, গাঢ় চুম্বন
যদিও পুরুষের নির্মাণ
শুধু ঘাস শুধু বৃক্ষে
অবিরত বর্ণ সাজায় মীরার চোখ
আর বেড়ে যায় বৃক্ষের বিন্যাস..
আগন্তুক
মিন্টু হক
একটি বিস্তীর্ণ বাগানকে পাশে রেখে হেঁটে যাচ্ছে এক আগন্তুক।
বসনহীন সুরমা ও জৌলুস তাতে নগ্ন নৃত্যরত কল্প-কেলিকদম
রমণীদের অধরোষ্ঠে হাসি ঢেউ হয়ে ভাসে আর স্পষ্ট বাক্যালাপ
ব্যাকুল বাতাসে সঞ্চারিত হয়।
প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত বিশাল বাগানটি মোহের বেড়ায় বেষ্টিত
ছড়ানো ছিটানো সোনাফলা উদ্ধত বৃক্ষেরা
এই স্বপ্ন-চাতালের মেঘপুঞ্জকে নিয়ন্ত্রণ করে।
শুশ্রƒষারত গুটি কয়েক মালি শূন্যে উড়া কথার বাবল নিয়ে
লোফালুফি খেলায় মগ্ন। বলাবাহুল্য, এগুলো তাদের দম্ভোক্তি
আর তারা গোল গোল বলতে থাকে;
আমরা পূর্বপুরুষ থেকে নির্ধারিত প্রাপক
এ সোনাফলা বৃক্ষ আর অজস্র ফলের আমরাই দাবিদার।
আগন্তুক লোকটা সত্যের সামনে সমাসীন এক কবি।
ছাগল সমাচার
রাহমান ওয়াহিদ
ধরিই তো ছিলাম বাহে, কিন্তুক গ্যালো যে কুথায়
‘ক্যামোন করি ধর গো বাহে যে ফোসকি যায়।’
আসলেই তাই। কিন্তুক সে কথা তো কহিবারও নয়।
বরশিতে যে মাছটি আবার ধরি রেখিছিল
সেও বড় চালাকি জানে না। টান মারতিই হাওয়া।
‘না গো বাহে না, মাছের অতো বুদ্ধি সুদ্ধি নাই
তুমিই আসলে বোঝ নাই-মাছের কেমুন খাওয়া’
মানুষই কি বোঝে এখনও দিবস অথবা রাতি?
কেউ কি গোনে-ক’টা গেল সাদা হাঁস, ক’টা গেল হাতি?
‘গরু মারিয়া ছাগোল ক্যান্ দ্যাখাইতেছেন বাহে?
এ্যাতো ছাগোল তো আছিলো না এই দ্যাশ গাঁয়ে।
বিকেলের রোদ
আব্দুল মান্নান সরকার
পোষা পাখিটাকে আর চেনা হলো কই
হাপিত্যেশ করেই বা কি লাভ!
অথচ রোয়াকে বসে থাকা
এক পাঅলা বুড়ো শালিকটাকেও বেশ চিনি
রোজ একবার করে আসে, বাঁকা চোখে চায়
লাফিয়ে লাফিয়ে হাঁটে, বেশ খুনসুটি করে।
মেঘেরা যেথায় যেতে চায় যাক না
যে যায় সে চলে যায়
গাছ থেকে পাতা ঝরবেই
গঙ্গা ফড়িং আনন্দে আটখান তার এটুকু জীবনে।
হে-মেঘ, হে-ঝরা পাতা, হে-গঙ্গা ফড়িং
আনন্দ তোমাদের যেন মুঠো মুঠো প্রাণের আবির
ছড়িয়ে দিচ্ছ সবে জগতের হোলির উৎসবে।
বারান্দায় মাকড়শা পেতেছে জাল
জানি সর্বদাই এক গোপন ঘাতক ওৎ পেতে থাকে
মিহিন সুতোর জাল দোলে, দোলাও দোলাও
তোমার আপন হাতে দোলাও হে হন্তারক।
কয়েকটি মাছির স্বপ্ন ঝুলে আছে জালে
সেই চিরকালের গল্প, স্বপ্ন হরণ করার গল্প।
তবু দরজায় কড়া নেড়ে যায় দখিনা বাতাস।
ইচ্ছে হলে দুএক ছত্র পদ্য লিখি
আজকাল শব্দরাও বড় বেশি অসূয়া প্রবণ
অচ্ছুত জ্ঞান করে, হাতে ধরে কল্কে দেয় না।
আঙিনার তরুণ কদম গাছ বেজায় দোলায় মাথা
মাথার গ-গোল তার থাকতেই পারে
কেন যে সে দুচোখ ডুবিয়ে চেয়ে থাকে
আমারই চোখ দিয়ে দেখে আমাকেই।
জোসনা রাতে ধ্রুপদী গানের মতো কিছু শুনে
চমকে উঠি, ও কেন শোনায় গান
তবে কি সে জেনে গেছে আমাদের নাড়ির বন্ধন।
মাথার ওপরে মিহিন সুতোর জাল দোল খায়
দেখি ঝুলে আছে মাছি, কাচ পোকা আর এক অসীমের স্বপ্ন।
সূর্য গড়িয়ে চলে, মিহিন সুতোয় দোল খায় বিকেলের রোদ।
শীর্ষ সংবাদ: