ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

শর্ত পূরণ না হলে পৌর নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার আশঙ্কা

বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের নেতৃত্বে কয়েকটি টিম মাঠে থাকবে

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ৪ ডিসেম্বর ২০১৫

বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের নেতৃত্বে কয়েকটি টিম মাঠে থাকবে

শরীফুল ইসলাম ॥ আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের বিজয় নিশ্চিত করতে সারাদেশের বিভিন্ন এলাকায় দলের সিনিয়র নেতাদের নেতৃত্বে মাঠে থাকবে বেশ কয়েকটি টিম। প্রতিটি বিভাগে এসব টিমের কার্যক্রম সমন্বয়ের দায়িত্বে থাকবেন সংশ্লিষ্ট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক। দু-এক দিনের মধ্যেই এসব টিমে থাকা নেতাদের নাম প্রকাশ করবে বিএনপি। এদিকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য দলের পক্ষ থেকে যে শর্ত দেয়া হয়েছে তা পূরণ করা না হলে ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের মতো আসন্ন পৌরসভা নির্বাচন থেকেও একপর্যায়ে সরে যেতে পারে বিএনপি। জানা যায়, কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে গঠিত বিএনপির প্রতিটি টিম স্থানীয় জেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের সহযোগিতা নিয়ে সংশ্লিষ্ট পৌরসভা এলাকায় গিয়ে নির্বাচনী প্রচার জোরদার করবেন। তারা সভা-সমাবেশ করার পাশাপাশি ভোটারদের দ্বারে দ্বারেও যাবেন। স্থানীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে গঠিত নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কাজও তদারকি করবেন তারা। এছাড়া সময় সময় দলীয় প্রার্থীদের মাঠের অবস্থা কেন্দ্রীয়ভাবে দলের নির্বাচন পরিচালনা কাজের সমন্বয়ের দায়িত্বে থাকা নেতাদের কাছে জানাবেন। এভাবে তারা নির্বাচন বিষয়ক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে বিএনপির হাইকমান্ডের সংযোগ স্থাপন করবেন। উল্লেখ্য, ২০১৩ সালে অনুষ্ঠিত দেশের ছয় সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অংশ নিয়েও বিএনপি কেন্দ্র থেকে প্রতিটি সিটি কর্পোরেশন এলাকায় সিনিয়র নেতাদের নিয়ে গঠিত টিম পাঠায়। তখন এসব টিমকে কাজে লাগিয়ে বিএনপি সফল হয় বলেই এবার পৌরসভা নির্বাচনেও সে কৌশল নিয়েছে। তবে সেবারের তুলনায় রাজনৈতিকভাবে বেকায়দায় থাকার বিষয়টি মাথায় রেখেই বিএনপি বিভিন্ন কৌশল প্রয়োগ করবে। এদিকে, আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে বিজয়ের লক্ষ্যে আগেই বিভিন্ন শর্ত দিয়ে নির্বাচন কমিশন ও সরকারকে চাপে রেখেছে বিএনপি। সেই সঙ্গে অধিকাংশ পৌরসভায় সবার কাছে গ্রহণযোগ্য প্রার্থী দেয়ার চেষ্টা করেছে দলটি। আগেই দলীয় মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে যুগ্ম-মহাসচিব মোহাম্মদ শাহজাহান স্বাক্ষরিত প্রত্যয়নপত্র দেয়া হয়েছে বিএনপি চেয়ারপার্সনের গুলশান কার্যালয় থেকে। ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য ২৩৫টি পৌরসভার মধ্যে ২৩০টিতে সরাসরি বিএনপির প্রার্থী দেয়া হয়েছে। একটিতে ২০ দলীয় জোটের শরিক দল এলডিপি ও আরেকটি পৌরসভায় জাতীয় পার্টির (জাফর) প্রার্থীকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। বাকি তিনটি পৌরসভায় জামায়াতের প্রার্থীকে সমর্থন দেয়ার কথা রয়েছে। যদিও জামায়াত আরও বেশি পৌরসভায় প্রার্থী দিতে চেয়েছিল। এ নিয়ে বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে কিছুটা মনকষাকষি থাকলেও জোটের স্বার্থে কোন দলই তা প্রকাশ করছে না। বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা লন্ডনে থাকা অবস্থায়ই তার নির্দেশে সারাদেশে তৃণমূল পর্যায়ে দল পুনর্গঠনের কাজ করতে গিয়ে বিএনপি নেতারা প্রতিটি পৌরসভায় মেয়র পদে দলীয় মনোনয়নের জন্য নাম সংগ্রহ করেন। খালেদা জিয়া দেশে ফেরার পর তাকে দেখিয়ে খসড়া তালিকা চূড়ান্ত করা হয়। যদিও শেষদিকে কয়েকটি পৌরসভায় প্রার্থী বদল করায় এ নিয়ে দলের ভেতরেই বিতর্ক সৃষ্টি হয়। আসন্ন পৌরসভা নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে চাপে রাখার কৌশল হিসেবে বিএনপি যেসব শর্ত দিয়েছে তার মধ্যে রয়েছেÑ ভোটগ্রহণের সময় ১৫ দিন পিছিয়ে পুনঃতফসিল ঘোষণা করা, বিরোধী দলের প্রার্থীদের ভয়ভীতি প্রদর্শন বন্ধ করে অবিলম্বে গ্রেফতারকৃত নেতাদের মুক্তি ও গণগ্রেফতার বন্ধ করা, যেসব পৌরসভার নির্বাচন হচ্ছে সেগুলোর সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের (ওসি) বদলি করা। এছাড়া ২ জানুয়ারি থেকে নতুন ভোটার তালিকায় সংযুক্ত হওয়া ৫০ লাখ ভোটারকে আসন্ন পৌর নির্বাচনে ভোটদানের সুযোগ দেয়া এবং সবার জন্য ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ তৈরি করা। এসব শর্ত পূরণ করলেই নির্বাচনের পরিবেশ ফিরে আসবে বলেও দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়। বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পৌরসভা নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে দলের পক্ষ থেকে যেসব শর্ত দেয়া হয় তা এখনও পূরণ করা হয়নি। এসব শর্ত পূরণ করে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হবে। তা না হলে বিএনপির প্রার্থীদের নির্বাচনে থাকা অসম্ভব হয়ে পড়বে। এ বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের নজরে আনতে আবারও বিএনপি নেতারা নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে যাবেন বলে জানা গেছে। এছাড়া স্থানীয়ভাবে সারাদেশের বিভিন্ন রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়েও বিএনপির পক্ষ থেকে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবি জানানো হবে। টানা আন্দোলনে ব্যর্থ হওয়ার পর সারাদেশে তৃণমূল পর্যায়ে দল পুনর্গঠনের উদ্যোগ নিয়েও বিফল হন বিএনপির হাইকমান্ড। এ কারণেই দলকে চাঙ্গা করতে আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেয় বিএনপি। যদিও আগে দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, এ সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে তারা আর কোন নির্বাচনে অংশ নেবে না। তবে পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপির অংশ নেয়ার বিষয়টিকে দেশের সর্বস্তরের মানুষ ভালভাবেই নিয়েছে। এমনকি বিদেশী কূটনীতিকরাও বিএনপির এ অবস্থানের প্রশংসা করেছেন। অতিসম্প্রতি পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীদের প্রত্যয়নপত্র দেয়ার দায়িত্ব পালনকারী দলের যুগ্ম-মহাসচিব মোহাম্মদ শাহজাহান সাংবাদিকদের কাছে বলেছেন, এ নির্বাচনকে রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে বিএনপি। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য তিনি দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীকে বিএনপি মনোনীত প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করার আহ্বান জানান। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব) মাহবুবুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, গণতন্ত্রের স্বার্থেই আমরা আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি। এবার যেহেতু দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হচ্ছে তাই আমরা দলীয় প্রার্থীদের বিজয় নিশ্চিত করতে যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাব। স্থানীয় নেতাকর্মীদের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় নেতারাও সারাদেশের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দলীয় প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করবেন। বিএনপি চেয়ারপার্সনের নির্দেশ পেলেই কেন্দ্রীয় নেতারা টিম করে বিভিন্ন এলাকায় যাবেন।
×