ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

টার্গেট জিহাদের নামে পীর ও খাদেম হত্যা;###;আটক ৬ জন ছয়দিনের রিমান্ডে

মুজাহিদ অব বাংলাদেশ নামে নতুন জঙ্গী সংগঠনের সন্ধান

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ৪ ডিসেম্বর ২০১৫

মুজাহিদ অব বাংলাদেশ নামে নতুন জঙ্গী সংগঠনের সন্ধান

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ‘মুজাহিদ অব বাংলাদেশ’ নামে নতুন জঙ্গী সংগঠন সৃষ্টির চেষ্টাকারী ৬ জঙ্গীকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। তাদের ৬ দিন করে রিমান্ডে পাঠিয়েছে আদালত। গ্রেফতারকৃতরা জঙ্গী সংগঠনটিকে জেএমবির আদলে গঠনের চেষ্টা করছিল। ধরা পড়ার আগে ঢাকার এক পীরকে হত্যার চক্রান্ত করছিল তারা। প্রশিক্ষণের জন্য তারা গাজীপুরের সাফারি পার্কের আশপাশ ও চট্টগ্রামের গহীন অরণ্যকে বেছে নিয়েছে। বুধবার রাতে রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বর ও সোনালী ব্যাংকের সামনে থেকে নতুন ওই সংগঠনের ছয় সদস্য- জহিরুল ইসলাম ওরফে আনসার ওরফে চূড়ান্ত লড়াই ওরফে জহির, খন্দকার রাজেশ সোবাহান ওরফে রাজু ওরফে কাঁচামরিচ ওরফে আদার ব্যাপারী, আবু বক্কর সিদ্দিক ওরফে আবির ওরফে মৌমাছি ওরফে নিয়মের অনিয়ম ওরফে এক টুকরো মেঘ ওরফে সাদা পাতা, আব্রাহাম আহমেদ আল-তারেক, মোরশেদুল ইসলাম ওরফে কিংমোর খান, কাজী বাপ্পি আহমেদ ওরফে সাজ্জাদ ওরফে তারেক বিন জিয়া মোল্লা আক্তার মোহাম্মদ মনসুরকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। তাদের কাছ থেকে জঙ্গী কার্যক্রমে জড়িত থাকার বেশ কিছু আলামত উদ্ধার করা হয়। বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিবির যুগ্মকমিশনার মনিরুল ইসলাম জানান, জামা’তুল মুজাহিদীন অব বাংলাদেশের (জেএমবি) আদলে নতুন জঙ্গী সংগঠন ‘মুজাহিদ অব বাংলাদেশ’র অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। গ্রেফতারকৃতরা নতুন এ জঙ্গী সংগঠনের সদস্য। তারা ফেসবুক ও অনলাইন মাধ্যম কাজে লাগিয়ে আল কায়েদাকে অনুসরণ করত। নতুন এ সংগঠনের সদস্য ২৫-৩০ জন। গ্রেফতারকৃতরা মনে করে, বিভিন্ন মাজারের পীররা অনুসারী তৈরি করে শিরক করছে। মুসলমানদের বিভ্রান্ত করছে। তাদের কতল করাকে ‘জিহাদ’ মনে করে সংগঠনটি। এরই অংশ হিসেবে তারা রাজধানীর এক পীরকে হত্যা চক্রান্ত করেছিল। পুলিশের তৎপরতায় ‘ওই পীর’ এখন নিরাপদ আছেন। তিনি নিরাপত্তার কারণে ওই পীরের নাম প্রকাশ করেননি। তবে গ্রেফতারকৃতদের আগের কোন পীর হত্যার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি। সেগুলো জেএমবি করেছে। তিনি আরও বলেন, নতুন এ সংগঠন দুই বছর ধরে সংগঠিত হচ্ছে। এর সদস্যরা বিভিন্ন স্থানে চাকরি করেন। জীবনযাপনের জন্য বেতনের কিছু টাকা রেখে বাকি টাকা তারা এ কাজে ব্যবহার করতেন। তাদের এক ‘বড়’ নেতা আগেই গ্রেফতার হয়েছেন। প্রয়োজনে সেই বড় নেতাকে আবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। কোন গোয়েন্দা সংস্থা যাতে ফেসবুক আইডি দেখে তাদের কথিত জিহাদের বিষয়টি টের না পায়, সেজন্য তারা অদ্ভুত নামে পেজ খোলে। ফেসবুকের মাধ্যমে এরা নামাজ পড়ার আহ্বান জানায়, দ্বীনের দাওয়াত দেয়, সমমানসিকতার কাউকে পেয়ে গেলে ধীরে ধীরে মানসিকভাবে তাকে জিহাদে উদ্বুদ্ধ করে। পরে জিহাদী কার্যক্রমে অংশ নিতে শারীরিক প্রশিক্ষণে পাঠায়। সবাই নিজের মতো জিহাদ প্রতিষ্ঠার কাজ করছিল। জেএমবি কিংবা আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সঙ্গে এদের কোন সম্পর্ক পাওয়া যায়নি। নতুন এ সংগঠন আল কায়েদার অনুসারী হলেও আল কায়েদার ভারতীয় উপমহাদেশের শাখার (একিউআইএস) সঙ্গে তাদের কোন নেটওয়ার্ক বা যোগাযোগ স্থাপিত হয়নি। তাদের কার্যক্রম প্রাথমিক পর্যায়ে। এজন্য তাদের বড় অর্থ সংস্থানের প্রয়োজন হয়নি। তারা ছুরি-চাকু চালানো, বর্শা নিক্ষেপসহ প্রাথমিক ট্রেনিং নিয়েছে। সংগঠনটির বড় ধরনের কোন অর্থের উৎস নেই। আমাদের কোর্ট রিপোর্টার জানান, মতিঝিল থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে দায়েরকৃত মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে ৬ জনকে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সোপর্দ করা হয়। মতিঝিল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোস্তাফিজুর রহমান প্রত্যেককে ১০ দিন করে রিমান্ডের আবেদন করেন। শুনানি শেষে ম্যাজিস্ট্রেট রাশেদ তালুকদার প্রত্যেকের ৬ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। জিহাদের নামে পীর-খাদেম হত্যা করাই এ সংগঠনটির মূল টার্গেট।
×