ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মুখোমুখি রামেন্দু মজুমদার

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ৩ ডিসেম্বর ২০১৫

মুখোমুখি রামেন্দু মজুমদার

আনন্দ কণ্ঠ : থিয়েটার সপ্তহ ২০১৫ নাট্যোৎসবের এবারের আয়োজন নিয়ে বলুন। রামেন্দু মজুমদার : উৎসবের নামকরণের মধ্যেই নিশ্চই আয়োজন সম্পর্কে ধারণা মিলছে। সাত দিনব্যাপী উৎসবে থিয়েটার প্রযোজিত চলমান সাতটি নাটকের মঞ্চায়ন হবে। তার মধ্যে একটি নাটক থাকছে থিয়েটারের নবম প্রযোজনা যার উদ্বোধনী মঞ্চায়ন হবে উৎসবের দ্বিতীয় দিনে। মঞ্চায়ন সূচী পরম্পরায় বললে কোকিলারা, মায়ানদী, কুহকজাল, মুক্তধারা, পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়, বারামখানা এবং মেরাজ ফকিরের মা। উৎসবের উদ্বোধনী সন্ধায় রয়েছে মুনীর চৌধুরী সম্মাননা ও মোহাম্মদ জাকারিয়া স্মৃতিপদক প্রদান। উৎসবের সমাপনী দিনে রয়েছে ‘থিয়েটার পত্রিকার চল্লিশ বছর’ শীর্ষক গ্রন্থ নিয়ে আলোচন। উদ্বোধনী দিনে থাকছেন এ্যামিরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান এবং মাননীয় সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূূর। উৎসব আয়োজনের লক্ষ্য আনন্দ উদ্যাপন আর উপলক্ষ দলীয় প্রযোজনার সাতটি নাটক বিরতিহীন মঞ্চায়নের সামর্থ্যরে আত্মানুসন্ধান। দীর্ঘ চুয়াল্লিশ বছরের থিয়েটারের পথ পরিক্রমায় পঁয়তাল্লিশটি নাটকের ছবি, পোস্টার, নাটকের সংরক্ষিত ভিডিওর প্রজেকশান এবং অনুষঙ্গ বিষয় নিয়ে জাতীয় নাট্যশালার লবিকে সজ্জিত করা হবে। আনন্দ কণ্ঠ : উৎসব স্লোগান ‘সবার উপরে জীবন সত্য’ নির্ধারণের বিষয়টি নিয়ে যদি বলেন। রামেন্দু মজুমদার : আমরা বরাবরই নাটক মঞ্চায়নের ক্ষেত্রে যেমন সমসাময়িক সময়কে গুরুত্ব দিই। তেমনি নাট্যোৎসব আয়োজনের ক্ষেত্রেও সমকালের ঘটনা বলিকে গুরুত্ব দেই। এবারের ক্ষেত্রে আমরা দেখছি বিশ্বজুড়েই এক প্রকার মনুষত্ব্যের হত্যা। এই হত্যাযজ্ঞের বলি যেমন মানুষ হচ্ছে তেমনি প্রকৃতিও হচ্ছে। বৃক্ষ ধ্বংস হচ্ছে, নদ-নদীকে মেরে ফেলা হচ্ছে। ফলে একদিকে বিশ্ব নেতৃত্ব মিলিত হচ্ছে শান্তি পুনর্প্রতিষ্ঠার চেষ্টায় অপরদিকে বিশ্ব নেতৃত্ব সন্ধান করছেন জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতির মাত্রা কিভাবে কমিয়ে আনা যায়। ফলে এই যে প্রাণ এবং প্রকৃতিকে বাঁচিয়ে তোলবার আকুতি সমগ্র বিশ্বব্যাপী তারই মর্মবাণীকে হৃদয়ে ধারণ করে আমাদের নাট্যোৎসবের স্লোগান ‘সবার উপরে জীবন সত্য’। আনন্দ কণ্ঠ : নতুন প্রযোজনা মায়ানদী নিয়ে বলেন। রামেন্দু মজুমদার : আবদুল্লাহ আল-মামুন তার কর্ম পরিকল্পনায় নতুন নাট্যকার নির্দেশক নির্মাণ কার্যক্রমে তিনজনকে বাছাই করেন। এপা মজুমদার, মারুফ কবির এবং জগলুল আহমদ। দুর্ভাগ্য ক্রমে আমরা অত্যন্ত শক্তিমান নাট্যকর্মী জগলুলকে অকালে হারিয়েছি। অথচ তার শক্তির জায়গা তর্কাতীত। ফলে বিগত সময়ে এপা মজুমদার নির্দেশনা দিয়েছে এবং এবার দিচ্ছে মারুফ কবির। মারুফ কবির রচিত ও নির্দেশিত নাটক যেটি উৎসবের দ্বিতীয় দিন উদ্বোধনী মঞ্চায়ন হবে তারই নাম মায়ানদী। পৃথিবীর যে কোন প্রান্তে সংস্কৃতি শিক্ষা সভ্যতা গড়ে ওঠার পেছনে কোন না কোনভাবে সহায়ক শক্তি নদী। আর বাংলাদেশ তো নদীমাতৃক দেশ। মাটির উর্বরতা, শস্যশামল বাংলা, ভাটিয়ালি সুর, জীবনের জয়গান সেসবই তো নদীকে ঘিরেই। অথচ সেই নদীই আজ মৃতপ্রায়। এই মুমূর্ষুতার পেছনে মানুষের অসচেতনতা, তাৎক্ষণিক স্বার্থ সিদ্ধির গোপন লোভ, চক্রান্ত আরও অনেক কিছুই দায়ী। কিন্তু বাস্তবতা হলো নদীর পানি আজ শুষ্কপ্রায়। এই নদীর শুষ্কতার আত্ম অনুসন্ধানের নাটক মায়ানদী। মারুফ কবিরের উপর আমাদের সকলের আস্থা সে ভাল করছে এবং করবে। আনন্দ কণ্ঠ : আপনার সম্পাদিত থিয়েটার পত্রিকার পথচলা নিয়ে আলোচনা বিষয়ে বলুন। রামেন্দু মজুমদার : উৎসবের সমাপনী দিন অর্থাৎ ১০ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টায় শিল্পকলা একাডেমির সেমিনার কক্ষে থাকছে ‘থিয়েটার পত্রিকার চল্লিশ বছর’ শীর্ষক গ্রন্থ নিয়ে আলোচনা। গ্রন্থটি সম্পাদনা করেছেন খ্যাতিমান সম্পাদক-গবেষক প্রভাত কুমার দাস। তাঁর দেয়া তথ্যমতে থিয়েটারকে কেন্দ্র করে এত দীর্ঘ সময় প্রকাশনা এবং সম্পাদনা দু’বাংলাতেই বিরল ঘটনা। ফলে সে কারণে আমার একটু গর্বই হয়। তবে একটা কথা ভাবি, থিয়েটারটা যেহেতু তাৎক্ষণিক ফলে বিষয়ের অন্বেষণে এই সম্পাদনাও প্রকাশনা বাংলাদেশের নাট্যচর্চার ইতিহাসের পরিপূরক। একদিক দিয়ে সমকালে নাট্যকর্মীদের বিকাশও প্রকাশে যেমন ভূমিকা রেখেছে থিয়েটার পত্রিকা ঠিক তেমনি ভবিষ্যত এ গবেষকদের কাছে থিয়েটারকর্মীদের জীবন্ত করে তুলবে থিয়েটার পত্রিকা। আনন্দ কণ্ঠ : আবদুল্লাহ আল-মামুনের শূন্যতাকে কিভাবে সামলান। রামেন্দু মজুমদার : সব সময় সামলিয়ে পারি না। রচনা, নির্দেশনা, অভিনয় প্রসঙ্গ আসলেই তাকে অনুভব করি, নিঃসঙ্গতা অনুধাবন করি। তার মতো নাট্যকারের অনুপস্থিতিটাই আমাদের দলের এক বড় দুর্বলতার জায়গা। সময়কে নাটকের মধ্যে দিয়ে তুলে ধরতে পারায় তিনি অনন্য। তার দুটি নাটক কোকিলারা এবং মেরাজ ফকিরের মা থাকছে উৎসবের শুরু এবং শেষ দিনে। আনন্দ কণ্ঠ : উৎসব অনুরাগী দর্শকদের উদ্দেশ্যে যা বলার। রামেন্দু মজুমদার : পরিশ্রমী, সময়ের ব্যাপ্তি এবং আন্তরিকতা নিয়ে প্রযোজনার মেলা সাজিয়ে আমাদের নাট্যোৎসব। উৎসব উপলক্ষে আমরা পরস্পর আমাদের সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা ভাগাভাগি করে নেব। সুতরাং আপনাদের আসতেই হবে। আমরা অপেক্ষায় থাকব। আনন্দ কণ্ঠ : আপনাকে ধন্যবাদ। রামেন্দু মজুমদার : আনন্দ কণ্ঠকেও ধন্যবাদ।
×