ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিরূপ জলবায়ু মোকাবেলায় প্যারিস সম্মেলনেই আইনী চুক্তি চায় বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ৩ ডিসেম্বর ২০১৫

বিরূপ জলবায়ু মোকাবেলায় প্যারিস সম্মেলনেই আইনী চুক্তি চায় বাংলাদেশ

কাওসার রহমান, প্যারিস (ফ্রান্স) থেকে ॥ জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় বাংলাদেশ প্যারিসেই একটি আইনী চুক্তি চাইছে। সেই সঙ্গে অর্থায়নের ক্ষেত্রে জলবায়ুকে পণ্য করা কোনভাবেই মেনে নেবে না বলে হুঁশিয়ার করে দিয়েছে। প্যারিসের লা বুর্জ কনফারেন্স সেন্টারে এবারের জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলন শুরু হলেও গত দুই দিনে সর্বজনীন জলবায়ু চুক্তির আইনী কাঠামো তৈরির অগ্রগতি খুবই সামান্য। ফলে প্যারিসে সব দেশ মিলে একটি সর্বজনীন জলবায়ু চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়ে ঐকমত্য হলেও তা বাস্তবায়নে আইনগত বাধ্যবাধকতা থাকবে কি-না তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। তবে আগামী ৫ ডিসেম্বর এই চুক্তির ওপর আলোচনা শেষ হবে। পরবর্তীতে তা চলমান কনফারেন্স অব দ্য পার্টির সভাপতির কাছে হস্তান্তর করা হবে। আগামী ৭ ডিসেম্বর থেকে শুরু হবে মন্ত্রীপর্যায়ের বৈঠক। সেখানেই এই চুক্তির ভবিষ্যত নির্ভর করবে। প্যারিসে বুধবার বাংলাদেশ নেগোসিয়েশন টিমে যোগ দিয়েছেন সাবেক পরিবেশমন্ত্রী এবং পরিবেশ মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় কমিটির সভাপতি ড. হাছান মাহমুদ। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রত্যাশা হচ্ছে প্যারিসে আইনগত চুক্তি স্বাক্ষর। এ বিষয়ে এখনও আমি আশা-নিরাশার দোলাচলে আছি। তবে আমাদের প্রত্যাশা হচ্ছে জলবায়ুর প্রভাব মোকাবেলায় সকল দেশের মধ্যে আইনী চুক্তি।’ এ বিষয়ে বাংলাদেশ নেগোসিয়েশন টিমের সমন্বয়কারী ড. কাজী খলিকুজ্জমান আহমদ বলেন, ‘আমরা সমমনাদের সঙ্গে নিয়ে আইনী চুক্তির বিষয়ে চাপ সৃষ্টি করছি। তবে এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না, এখানে আইনী চুক্তি হবে নাকি সাধারণ চুক্তি হবে। আইনী চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা আমি এখনও ক্ষীণ দেখছি।’ তিনি বলেন, ‘জলাবায়ু আলোচনা এখন পর্যন্ত সড়কে আছে, কিন্তু ট্র্যাকে নেই। এই আলোচনা ট্র্যাকে উঠবে কি-না তা আগামী সপ্তাহে দেখা যাবে।’ অর্থায়নের বিষয়ে বাংলাদেশ আবারও তাদের দাবি স্পষ্ট করেছে। অর্থায়নের বিষয়ে বাংলাদেশ জলবায়ুকে পণ্য হিসেবে বিবেচনা করাকে কোনভাবেই মেনে নেবে না বলে জানিয়েছে। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা শিক্ষা ও স্বাস্থ্যকে পণ্য করেছে। এসব খাতে উন্নয়নের জন্য ঋণ নিতে হবে। কিন্তু জলবায়ুর প্রভাব মোকাবেলায় উন্নত দেশগুলো ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোকে ঋণ দিতে চাচ্ছে। এই ঋণ দেয়ার সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ মেনে নেবে না বলে জানিয়েছে। বাংলাদেশ মনে করে, জলবায়ুর প্রভাব মোকাবেলায় ঋণ প্রদান জলবায়ুকে পণ্যে পরিণত করবে। তাই বাংলাদেশ এক্ষেত্রে ঋণ চায় না। বাংলাদেশ চায় অনুদান। এ প্রসঙ্গে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘জলবায়ুর ঝুঁকি মোকাবেলায় আমরা কোন ঋণ চাই না। আমরা চাই অনুদান। সবকিছু বেসরকারী খাতে দেয়ার অপচেষ্টা হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা শিক্ষা ও স্বাস্থ্যকে পণ্যে পরিণত করেছে। কিন্তু জলবায়ুকে পণ্যে পরিণত করা আমরা মেনে নেব না।’ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জলবায়ু সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে না আসার কারণ প্রসঙ্গে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফ্রান্সে না এলেও বাংলাদেশ জলবায়ু সম্মেলনে আলোচিত হয়েছে। ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং কপ প্রেসিডেন্ট তার বক্তৃতায় বাংলাদেশের নাম উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, বিশ্বের যে ক’জন রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীর জীবন ঝুঁকিপূর্ণ তারমধ্যে আমাদের প্রধানমন্ত্রী রয়েছেন। তা সত্ত্বেও ফ্রান্সে আসার জন্য তার প্রস্তুতি ছিল। কিন্তু দেশের পরিস্থিতির কারণে শেষ পর্যন্ত আসতে পারেননি। বিশ্লেষকরা মনে করেন, প্যারিস সম্মেলন শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হবে না। আইনী চুক্তি না হলেও প্যারিসে একটি চুক্তি হবে, যাতে তা কার্যকর করা যায়। বিশ্ব নেতৃবৃন্দ যে যাই বলুক না কেন, ফ্রান্স শেষ পর্যন্ত তার রাষ্ট্রপতির বক্তৃতাকেই দিকনির্দেশনা হিসেবে বিবেচনা করবে।
×